যারা গ্রুপে নতুন তারা এই কথোপকথনটি পড়তে পারেন। এটি পড়লে আশা করছি অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
___ ___ ___ ___ ___ ___ ___ ___
► এই গ্রুপটি কিসের?
এই গ্রুপটি রুকইয়াহ সংক্রান্ত সমস্যার ব্যাপারে পরামর্শের গ্রুপ।
► রুকইয়াহ কী?
সংক্ষেপে রুকইয়াহ হলো যাদু, জ্বিন, বদনজর ও ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত সমস্যার জন্য ইসলামসম্মত উপায় কুরআনের আয়াত, হাদীসে বর্ণিত দুয়া ইত্যাদি দিয়ে ঝাড়ফুক করা।
► ও আচ্ছা। কবিরাজি?
না। রুকইয়াহ ও কবিরাজি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। কবিরাজিতে ইসলামে নিষিদ্ধ এমন অনেক কাজ করা হয় যেমন জ্বিনদের সাহায্য নেয়া। কিন্তু রুকইয়াহতে তেমন কিছু নেই। জ্বিনদের সাহায্য নেয়া ইসলামে নিষেধ। আরো অনেক পার্থক্য আছে। এই লেখাটিতে পাবেন- কবিরাজি ও রুকইয়াহর পার্থক্য (রুকইয়াহ vs কবিরাজি)
►আচ্ছা। তাবিযও কি নিষিদ্ধ? আমার তো তাবিয আছে?
►আচ্ছা। তাবিযও কি নিষিদ্ধ? আমার তো তাবিয আছে?
অনেক আলেমদের মতে তাবিয শিরক। কিন্তু আমরা বলিনা সব তাবিয শিরক। কুরআনের আয়াত ও সুন্নাহতে বর্ণিত দুয়া সুস্পষ্টভাবে লেখা হলে তা অনেকের মতে বৈধ। আমরাও তাই মনে করি। তবে আমরা এমন তাবিয সহ সব তাবিযই নষ্ট করতে বলি। কারণ বৈধ তাবিযও একসময় শির্কের দিকে নিয়ে যায়। এছাড়া মানুষ তাবিযের উপর ভরসা করতে শুরু করে আল্লাহর উপর না করে। আপনি সব তাবিয নষ্ট করবেন এইভাবে।
► ভালো কথা। আমিও তো কিছু আমল জানি। তাহলে আমিও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবো।
জ্বি না। এই গ্রুপ অন্য হেল্প সিকিং গ্রুপগুলোর মত নয়। এখানে পরামর্শ দিবেন শুধু এডমিনরা।
► কিন্তু আপনারা তো সব নাও জানতে পারেন। আমি ভালো কিছু জানতে পারি আর তা হয়ত পোস্টদাতার কাজেও লাগবে। তখন?
এমন হলে আপনি আগে কমেন্ট করে বলবেন আপনি কিছু বলতে চান। অনুমতি পেলে এরপরে বলবেন।
►আচ্ছা। ঐ যে বদনজর বললেন। এটা কি হারাম বা কুদৃষ্টি?
না। বদনজর হলো কারো কোন বিষয়ে মুগ্ধ হয়ে বা হিংসা করে নজর দেয়া বা কিছু বলা। এর ফলে ঐ ভালো গুণটি নষ্ট হতে থাকে।
► কিন্তু আমার তো আমার ফ্রেন্ডের অনেক কিছুতে মুগ্ধতা চলে আসে। তখন কী করব?
এমন হলে আপনি মাশা আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এমন বলবেন। আল্লাহর যিকির করা হলে সাধারণত বদনজর লাগে না।
► আচ্ছা … আমার মনে হয় আমাকে কেউ বদনজর দিয়েছে। আগে কোন বই পড়তে শুরু করলে খুব দ্রুত শেষ করতে পারতাম। এখন পারিনা। আমি কিভাবে বুঝবো আসলে আমার বদনজরের কোন সমস্যার আছে কিনা?
বদনজরে আক্রান্ত হলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। এখানে সেসব লক্ষনগুলো লেখা আছে। নিজের সাথে মিলিয়ে দেখুন
► হায়! হায়! আমার তো অনেকগুলো লক্ষণ মিলে গেছে? এখন আমি কী করবো?
লক্ষন মিললেই বদনজর এমন না। অনেক সময় অসুখের জন্যও এই ধরনের বদনজরের লক্ষণ দেখা দেয়। তবে আসলেই বদনজরের সমস্যা আছে এমন মনে হলে আপনি রুকইয়াহ করতে পারেন। রুকইয়াহ নিজে নিজেই করা যায়। একে সেলফ রকইয়াহ বলে। এখানে দেখুন
► অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে। যদি জ্বিন চলে আসে?
শুধু বদনজরের সমস্যার থাকলে জ্বিন আসেনা। সাথে যদি জ্বিনের সমস্যা থাকে আর তা তীব্র হয় তখন জ্বিন চলে আসার কিছু সম্ভাবনা থাকে।
► আচ্ছা। জ্বিনের সমস্যা আছে কিনা কিভাবে বুঝবো? আমি অনেক সময় ভয়ের স্বপ্ন দেখি।
জ্বিনের সমস্যাগুলো হলে কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষনগুলো এখানে দেখতে পারেন . অনেক সময় যাদু করলেও জ্বিনের সমস্যার লক্ষন প্রকাশ পায়। তাই যাদুর লক্ষনগুলোও দেখে নিন
► লক্ষনগুলো পড়লাম। কিছু কিছু মিলছে। তাহলে কি জ্বিন হাজির হয়ে যাবে?
কিছু মিললেই জ্বিন চলে আসবে তা নয়। আপনি কি প্রায়ই নিয়ন্ত্রণহারা হয়ে যান? এমন কিছু করে ফেলেন যা করার পর মনে হয় আমি এটা নিজের অজান্তেই করে ফেলেছি? এমন হলে অন্য কাউকে সাথে রাখবেন রুকইয়ার সময়। কারণ তখন জ্বিন আসার সম্ভাবনা থাকে।
► আচ্ছা। অনেক ধন্যবাদ। আরেকটি প্রশ্ন। জ্বিনের সমস্যাগুলো কেন হয়? আমি তো জ্বিনের কোন ক্ষতি করিনি?
অনেক সময় জ্বিন মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার পিছু লেগে থাকে। যেভাবে অনেক খারাপ মানুষ মেয়েলোকের পিছু নেয়। এজন্য সবার ভালোভাবে ফরজ নামাজ, রোজা, পর্দা এগুলো ঠিকমত করা উচিত। তাহলে জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
►আমি এগুলো সব করি। তবুও মনে হচ্ছে বদনজরে আক্রান্ত হয়ে গেলাম। এমন কোন উপায় কি নেই যা করলে বদনজর, জ্বিন আর যাদুর সমস্যা হবে না? তাবিযের মত কিছু?
ফরজ, ওয়াজিব ইবাদতগুলোর পাশাপাশি সকাল সন্ধ্যা আর রাতে ঘুমের আগের আমলগুলি সবসময় সবার করা উচিত। তাহলে জ্বিন, যাদু, বদনজরের সমস্যা ইনশা আল্লাহ হবেই না। এখানে আমলগুলি পাবেন।
► অনেক ধন্যবাদ। আচ্ছা আমলগুলি করবো। কিন্তু যদি বাসাতে কোন সমস্যা থাকে তখন কী উপায়? বাসা তো আর আমল করবে না। অনেক বাসায় জ্বিনের সমস্যা থাকে।
বাসায় যদি অস্বাভাবিক কিছু ঘটতে দেখা যায় তাহলে জ্বিনের সমস্যা আছে মনে করা হয়। এমন হলে বাসায় সুরা বাকারাহ পড়া উচিত নিয়মিত। কারণ রাসুল সাঃ বলেছেন , যে বাসায় সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত হয় সেখানে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না।
►কিন্তু বাসায় তো তিলাওয়াত করার মত অনেক সময়ই কেউ থাকে না? উপায় কী?
যদি তিলাওয়াত করার মত কেউ না থাকেন তাহলে সুরা বাকারার রেকর্ড উচ্চ আওয়াজে প্লে করে দিবে। তাহলেও ইনশা আল্লাহ উপকার হবে। এছাড়া আযানও প্লে করবেন। খেয়াল রাখতে হবে প্লে করে যেন হৈ চৈ না করা হয়। যথাসম্ভব মনযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করতে হবে।
►বাচ্চারা অনেক সময় খুব কান্না করে। কোন কারণ ছাড়াই। আবার খাবার খায়না হঠাৎ করে। এসব কি বদনজর হতে পারে?
হ্যাঁ, এসব বদনজরের জন্যও হতে পারে।
► তাহলে বাচ্চাদেরও রুকইয়ার অডিও শোনাবো?
না, তাদেরকে বড়দের কেউ রুকইয়াহ করবে। সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস এগুলো বার বার পড়ে পড়ে ফু দিবে। এভাবে ৩০-৪০ মিনিট পড়ে ফু দিলেই ইনশা আল্লাহ ভালো হয়ে যাবে। না হলে বার বার করতে হবে।
এই লেখাতে বিস্তারিত পাবেন . লেখাটিতে আপনার ব্যবসা, দোকান বা গাছপালাতে নজর লাগলে কী করবেন তাও বলা হয়েছে।
► আরেকটি প্রশ্ন। কাউকে যাদু করা হলে সে কী করবে? যাদুর লক্ষনগুলোর অনেককিছু আমার পরিচিত একজনের সাথে মিলে যাচ্ছে। সে কি যাদুগ্রস্থ?
যাদুর লক্ষন কয়েকটা মিললেই যাদু করা হয়েছে এমন নয়। তবে অনেকগুলো মিললে ধারনা করা যায়। তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির আগে পরের কাহিনী শুনলেও অনুমান করা যায়। এমন হলে রুকইয়াহ করতে হবে।
► যাদুর রুকইয়াহ কি নিজে নিজে করা যায় বদনজরের মত?
হ্যাঁ। যাদুর জন্যও সেলফ রুকইয়াহ করা যায়। তবে এতে বাধা আসে অনেক। এজন্য কারো হেল্প নেয়া উচিত যিনি আপনাকে মনে করিয়ে দিবেন। যাদুর জন্য রুকইয়ার একটি সাধারন নিয়ম এখানে পাবেন।
► তাহলে যাদুও এভাবে অডিও শুনে, পানি পড়া খেয়ে আর গোসল করে কাটিয়ে নেয়া সম্ভব?
হ্যাঁ। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই সম্ভব। তবে শুধু অডিও শোনার চাইতে নিজেরও রুকইয়াহর আয়াতগুলো তিলাওয়াত করা উচিত। আয়াতগুলোর লিস্ট এখানে পাবেন।
► আচ্ছা। কতদিন লাগতে পারে যাদু থেকে সুস্থ হতে?
অনেকের অনেক দিন লাগে। অনেকের দ্রুত সুস্থতা লাভ হয়। অনেক সময় নিজে নিজে রুকইয়াহ করার পাশাপাশি কাউকে দিয়ে রুকইয়াহ করিয়ে নেয়ারও দরকার হয়।
► কাউকে দিয়ে রুকইয়াহ করানো বলতে? বিষয়টা একটু বুঝান।
কাউকে দিয়ে রুকইয়াহ মানে সরাসরি রুকইয়াহ করানো। একজন রাকি (যিনি রুকইয়াহ করবেন) তিনি রোগীকে সামনে রাখে কুরআনের আয়াত, হাদীসে বর্ণিত দুয়াগুলো পড়ে পড়ে ফু দিবেন। যদি জ্বিন এসে যায় তবে জ্বিনকে শাস্তি দিয়ে বিদায় করতে চেষ্টা করবেন। সংক্ষেপে এটাই।
► শাস্তি কিভাবে দিবেন? জ্বিনের তো শরীর নেই। রোগীকে মারবেন?
না। কুরআনে বর্ণিত শাস্তির আয়াতগুলো তিলাওয়াত করেই জ্বিনকে শাস্তি দেয়া হয়।
► আচ্ছা। তাহলে তো এসব আমরা পারবো না। অনেক বড় আল্লাহ ওয়ালা কাউকে লাগবে। এমন লোক কোথায় পাবো?
না। এটি ভুল ধারনা। সরাসরি রুকইয়াহ কুরআন শুদ্ধ করে পড়তে পারেন আর একটু সাহস রাখেন এমন সব মুসলিমই করতে পারেন। তবে হ্যা, যারা রুকইয়াহ করার কাজে অভিজ্ঞ তাদের সাহায্য নেয়া লাগতে পারে কোন এক সময়। তবে শুরুতে সবার উচিত নিজের আত্মীয় পরিচিতদের নিজেরাই রুকইয়াহ করা।
► অনেক অনেক ধন্যবাদ। এমন একটা গ্রুপের খুব দরকার ছিল। আপনারা এসব পরামর্শ দেয়ার জন্য কত ফী নেন?
আমরা ফী ছাড়া পরামর্শ দিই এই গ্রুপে। আপনাদের দুয়াই আমাদের জন্য যথেষ্ট। সাথে আরেকটি অনুরোধ। রুকইয়াহ সম্পর্কে আপনার পরিচিতদের জানান, বোঝান। রুকইয়াহ বিষয়টি ছড়িয়ে দিন।
► আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো। এমন একটি গ্রুপের সন্ধান পেয়ে অনেক খুশি হলাম। শেষ আরেকটি প্রশ্ন ছিল। যদি অনুমতি দেন করতে পারি।
আপনি হয়ত ওয়াসওয়াসা নিয়ে প্রশ্ন করবেন। ওয়াসওয়াসা হলো আল্লাহ, রাসুল, ইসলাম, কুরআন তথা ধর্ম সম্পর্কে অনিচ্ছায় মনে এমন সব চিন্তার উদয় হওয়া যা আপনার একদমই পছন্দ না। আল্লাহ, রাসুল সম্পর্কে কুধারনা আসা। আপনি জানেন না এসব কেন হচ্ছে।
► হ্যাঁ। আর এমন ওয়াসওয়াসা আমার নিজেরও কয়েকবার হয়েছিল। আমি পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ, ইবাদত করে গিয়েছিলাম। এখন আর হয়না।
ঠিক। ওয়াসওয়াসা হলে এসব চিন্তাকে পাত্তা না দেয়া উচিত। ইস্তেগফার করে নিজের আমলে থাকা উচিত। এরপরেও রুকইয়ার দরকার হতে পারে। ওয়াসওয়াসার লক্ষণ ও রুকইয়ার নিয়ম এখানে পাবেন।
► এসব ওয়াসওয়াসা কেন হয়?
শয়তান মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রনা দেয় । এই কুমন্ত্রনাগুলোই ওয়াসওয়াসা। যাদের জ্বিনের সমস্যা বেশি হয় তারাও ওয়াসওয়াসা বেশি ফীল করে। এছাড়া আল্লাহর যিকির থেকে দূরে থাকার কারণে ওয়াসওয়াসা হয়। কারণ তখন শয়তান মানুষের কাছাকাছি হয়ে পড়ে।
► জাযাকাল্লাহু খায়রা। অনেক কিছু জানলাম। আচ্ছা আমি ২ সপ্তাহ রুকইয়াহ করবো বদনজরের। এতেই কি হবে?
হতেও পারে। এতেই সমস্যার দূর হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ। নতুবা আরো কিছুদিন করতে হবে। মাঝে মাঝেই এডমিনদের আপডেট জানিয়ে পরামর্শ নিতে হতে পারে। আপডেট জানাবেন এই ফরম্যাটে
► আমি ভালো হয়ে গেছি এটি কিভাবে বুঝবো?
যদি আপনার রুকইয়াহ সংক্রান্ত সমস্যা ভালো হয়ে যায় অথবা আপনার কোন সমস্যাই না থাকে তাহলে রুকইয়ার অডিও শুনলে বা রুকইয়াহ করলে আপনার কোন প্রতিক্রিয়া হবে না। এমনি কুরআন তিলাওয়াত শোনার মত লাগবে।
► ভালো হয়ে গেলেও কি আপডেট দিবো?
ভালো হয়ে গেলে জানাবেন আপনি ভালো হয়ে গেছেন। পোস্ট দিয়ে জানাতে পারেন। এতে অন্যেরাও অনুপ্রাণিত হবেন। আর এডমিনরাও তাদের শ্রম কাজে লেগেছে দেখে তৃপ্ত হতে পারবে।
► জাযাকুমুল্লাহু খায়রা।
ওয়া ইয়্যাক।
মন্তব্য করুন