Ruqyah Support BD

বাড়িতে জিনের সমস্যা?

[ক]

যেসব বাড়িতে জিনদের উৎপাত আছে, সেখানে অদ্ভুত কিছু সমস্যা দেখা যায়, যেমন,
১. বিভিন্ন ছায়া বা আকৃতি দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা।
২. রাতে অথবা কেউ যখন থাকে না তখন রান্নাঘর, অন্যান্য কামরা বা ছাদ থেকে মানুষের আওয়াজ আসা।
৩. ফাঁকা ঘর বা ছাদ থেকে বাড়ির লোকদের নাম ধরে ডাকছে এমন শোনা।
৪. বাহিরে বা দূরে কোথাও অবস্থা করছে এমন কাউকে বাড়িতে দেখতে পাওয়া।
৫. অকারণে টয়লেটের ট্যাপ-ঝর্না চালু হওয়া, লাইট-ফ্যান অন-অফ হওয়া, দরজা-জানালায় ধাক্কা দেয়ার শব্দ পাওয়া।
৬. নিজেরা না করলেও জিনিশপত্র বারবার লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া, এক যায়গার জিনিশ অন্য যায়গায় পাওয়া।
৭. অকারণে কাঁচের জিনিসপত্র বা আয়না ভেঙ্গে যাওয়া।
৮. অদ্ভুতভাবে জিনিশপত্র হারিয়ে যাওয়া।
৯. ঘুমের সময় কাঁথা-কম্বল টান দিয়ে বিরক্ত করা।
১০. রাতে বাড়ির আশেপাশের কুকুরগুলো অতিরিক্ত ডাকাডাকি করা। ইত্যাদি…
..
[খ]
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের কিছু বিষয় জানা দরকার,
১. পৃথিবী মানুষ জিন সবার জন্য, তাই বাড়িঘরে-আশেপাশে কিছু জিন বসবাস করতেই পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা আমাদের বিরক্ত করছে, তাদের গায়ে পড়ে ঝামেলা করা উচিত না।
২. ইসলাম আমাদেরকে একটিভ থাকতে শেখায়। এরকম নির্ভরযোগ্য এবং স্থায়ী কোনো পদ্ধতি নেই যে, সেটা একবার করে রাখলে আর কখনওই কোনো জিন আপনার বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে না।
আমাদের যেটা করতে হবে, যদি বাড়িতে জিনের উৎপাত থাকে, সেটা দূর করতে হবে। আর নিয়মিত যিকর-আযকার তিলাওয়াত করতে হবে, যাতে শয়তান বাড়িতে যায়গা না পায়।
..
[গ]
তাহলে আমাদের প্রথম জানা দরকার, কোনো বাড়িতে যদি জ্বিনের উৎপাত থাকে, তাহলে তাড়াবেন কিভাবে?
এর বেশ কয়েকটি বৈধ পদ্ধতি আছে, সবগুলোই কমবেশি ফলপ্রসূ।
.
প্রথম পদ্ধতি: আপনি আরো দুজন লোক সাথে নিয়ে ওই বাড়িতে যাবেন, তারপর জোরে জোরে কয়েকবার বলবেনঃ

অর্থাৎ: “আমি তোমাদের সেই ওয়াদার জন্য আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যে ওয়াদা সুলাইমান আ. তোমাদের থেকে নিয়েছেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা বের হয়ে যাও আর কারো কোনো ক্ষতি করো না।”

পরপর তিনদিন এরকম করবেন, আরবিও বলবেন, বাংলাও বলবেন। বাড়ির যে যে যায়গায় সমস্যা হয়, সেখানে গিয়ে গিয়ে বলবেন। ইনশাআল্লাহ! জ্বিনেরা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। এরপরেও যদি কোনো সমস্যা টের পান, তাহলে দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

দ্বিতীয় পদ্ধতি: একটা বড় পাত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি নিন, এরপর পানির কাছে মুখ নিয়ে নিচের দু’আটি পড়ুন (পড়ার সুবিধার্থে পিকচার দিয়ে দিব)

bari theke jinn taranor doa বাড়িতে জিনের সমস্যা?
পিকচারটি ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন

এরপর আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহ (২৩ পারায়) সুরা সফফাত এর প্রথম ১০ আয়াত পড়ুন,

সব পড়ে পানিতে হালকা থুতুসহ ফুঁ দিবেন। এবং ওই পানি পুরো বাড়ীতে ছিটিয়ে দিবেন। ইনশাআল্লাহ আর কোনো সমস্যা থাকবে না। বাড়িতে দুষ্ট জ্বিন থাকলে চলে যাবে। প্রয়োজন হলে এটাও কয়েকদিন করবেন।

(উপরের পদ্ধতিগুলো ইবনুল কায়্যিম রহ. উনার ﺍﻟﻮﺍﺑﻞ ﺍﻟﺼﻴﺐ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﻠﻢ ﺍﻟﻄﻴﺐ ‏ কিতাবে বর্ণনা করেছেন, এছাড়া শাইখ ওয়াহিদ বালিসহ আরও কিছু আলেমদের থেকে এই আলোচনা পাওয়া যায়।)

আমার মন্তব্য হল, উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করে পানি ছিটানোর পর একবার আযান দেয়া উত্তম। আর যদি বাড়িতে কারও জাদুর সমস্যা থাকে, আর এজন্য জিন উৎপাত করে, তাহলে সুরা সফফাতের আয়াতগুলোর সাথে সিহরের আয়াত (আরাফ ১১৭-১১২, ইউনুস ৮১-৮২, ত্বহা ৬৯, ফালাক, নাস) পড়া উচিত।
আপনি যদি এই দোয়া পড়ে বাড়ির চারপাশে পানি ছিটানোর সময় নিয়ত করেন ‘বাড়ি থেকে যেন খারাপ জিন-শয়তান চলে যায়, আর প্রবেশ করতে না পারে’ তাহলে আশা করা যায় এটি ‘বাড়ি বন্ধের আমল হিসেবে’ও কিছুটা ফায়দা দিবে।

তৃতীয় (সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তি) পদ্ধতি: কোনো বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে সেই বাড়িতে পরপর তিনদিন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করতে হবে। আর নতুন বাড়ি করার পর যদি পরপর তিনদিন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করা হয়, তাহলে আগে থেকে কোনো জ্বিন বা অন্য ক্ষতিকর মাখলুক থাকলে চলে যাবে। এর সমর্থনে হাদিসও আছে।

তো, এই হচ্ছে বাড়ি থেকে দুষ্ট জ্বিন তাড়ানোর কিছু পদ্ধতি।

[ঘ]
জিনের সমস্যা থেকে বাড়িকে নিরাপদ রাখতে করণীয়

তবে এসব করার পরে বাড়িতে যে আর সমস্যা না হয়, এজন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেনঃ
১. বাড়িতে ইসলামী পরিবেশ চালু রাখার চেষ্টা করবেন, বিশেষতঃ কোনো প্রাণীর ভাস্কর্য বা ছবি যেন ঘরে টাঙানো না থাকে। হাদিসে এসেছে, যেই ঘরে কুকুর বা জীবজন্তুর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
২. আর নফল – সুন্নাত নামাজ সম্ভব হলে ঘরে পড়বেন। স্ত্রী থাকলে বলবেন, যে ঘরে সবসময় নামাজ পড়া হয়, সেটা বাদে অন্যান্য ঘরেও যেন মাঝেমাঝে পড়ে।
৩. সম্ভব হলে প্রতিমাসে ১-২বার সুরা বাক্বারা পড়া।
৪. বিসমিল্লাহ বলে বাড়িতে প্রবেশ করবেন। খাবার আগে বিসমিল্লাহ বলবেন।
৫. জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার সমস্যা থাকলে বিসমিল্লাহ বলে ড্রয়ারে/আলমারিতে রাখবেন। বিসমিল্লাহ ঘরে বলে দরজা – জানালা বন্ধ করবেন।
৬. টয়লেটের দরজা বন্ধ রাখা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।
৭. সকাল-সন্ধ্যা ও অন্যান্য সময়ের হিফাজতের যিকরগুলোর অভ্যাস করা।

আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন, আ-মীন।

বাড়িতে জিনের সমস্যা হলে কি করবেন বাড়িতে জিনের সমস্যা?

মন্তব্য করুন