Ruqyah Support BD

জিনের চিকিৎসায় রাক্বীর জন্য জরুরী জ্ঞাতব্য : জিনের স্পর্শ ৭

আগের পর্বে আমরা জ্বিন আক্রান্ত রুগীর চিকিৎসার শরিয়ত সম্মত পদ্ধতি বর্ণনা করেছি, আজ যাদু-বানের বেসিক ট্রিটমেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট আলোচনা করা হবে।

জ্বিন তাড়ানোর সময় আপনি যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন… আমরা এখানে সম্ভাব্য কিছু অবস্থার আলোচনা করবো, বাদবাকি আল্লাহর নুসরত চেয়ে আপনার উপস্থিত বুদ্ধি দ্বারা সমাধান করতে হবে।

১. জ্বিন তাড়ানোর জন্য প্রথমে রুকইয়াহ করার পর যদি রুগীর মাথা ঘুরায় দম বন্ধ হয়ে আসে, ঝটকা দিয়ে কেঁপে ওঠে কিন্তু.. কোনো জ্বিন কথা না বলে তাহলে তিনবার রুকইয়াহ করে দেখুন। তারপর চিকিৎসার পরে সেসব পরামর্শ দিতে হয় সেসব দিন, এবং সাথে প্রতিদিন সুরা বাকারা, সুরা ইয়াসিন, দুখান, জ্বিন তিলাওয়াত করতে বা শুনতে বলুন অন্তত একমাস। এরপর ফলাফল জানাতে বলুন।

২. রুকইয়াহ করার পর কখনো অনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে ভয় পাওয়া যাবে না, আপনি শান্ত থাকুন। এবং “সুরা নিসা ৭৬নং আয়াত বারবার পড়তে থাকুন, আর ফুঁ দিতে থাকুন।” এতে সে আঘাত পাবে, আশা করা যায় থামবে…

৩. কখনো আপনি বেশ খারাপ আর ঘাড়ত্যাড়া জ্বিনের মুখোমুখি হতে পারেন। এক্ষেত্রে তাকে প্রথমে সাবধান করুন, হয় তুমি চলে যাও, নয়তো কোরআন এর আয়াত দিয়ে তোকে জ্বালিয়ে দিবো! তবুও কথা না শুনলে.. কিছু পানি নিন এবং সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন পড়ে রুগীকে ফুঁ দিন.. সাথে পানিতেও ফুঁ দিন, এবং ওই পানি রুগিকে খাইয়ে দিন। বারবার আয়াতুল কুরসি পড়েও রুকইয়াহ করতে পারেন । এসবে জ্বিন খুব কষ্ট পায়! এরপর চলে যেতে নির্দেশ দিন।

বেশ কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, জ্বিন যেতে চায়নি, এরপর সুরা আহযাব সহ্য করতে না পেরে মরে গেছে!! সুরা বাকারার ক্ষেত্রে অনেক আলেমের এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে, বরং খারাপ জ্বিনের ক্ষেত্রে সুরা বাকারার রুকইয়া বেশি প্রসিদ্ধ। এজন্য প্রথমত: সুরা বাকারা সাজেস্টেড।

৪. বাচ্চাদের রুকইয়ার ক্ষেত্রে সর্বদা তার স্বাচ্ছন্দের দিকে খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজনে রুকইয়ার আগে তার সাথে কিছু সময় দিন, যেন সে আপনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে।

Warning: রুকইয়ার সময় কখনওই বাচ্চাদের প্রহার করবেন না।

দ্রষ্টব্য: ইবনে তাইমিয়া রহ. সহ অনেকে অত্যাচারী জ্বিনকে হত্যা জায়েজ ফাতওয়া দিয়েছেন, আপনি আলেম হলে বদরুদ্দিন শিবলী হানাফী রহ. এর আকাম আল মারজান ফি গারাইবিল জান বইটিতে বিস্তারিত দেখতে পারেন।

৫. কখনো কখনো জ্বিন আপনাকে রাগাতে চেষ্টা করবে, গালিগালাজ করবে.. তখন আপনাকে সবর করতে হবে, রাগান্বিত হওয়া যাবে না।

কখনো হয়তো পাম দিবে, ‘আপনি অনেক ভালো মানুষ, বিরাট বুজুর্গ! আপনার কথা মেনে চলে যাচ্ছি.. ব্লা ব্লা” এসব শুনে ফুলার দরকার নাই! বরং বলুন আমি আল্লাহর সাধারণ একজন বান্দা, তুই আল্লাহর বিধান মেনে এখান থেকে ভাগ!

৬. আপনি যদি জ্বিনকে জিজ্ঞেস না করে তাঁর ধর্ম জানতে চান, তবে রুগীর ওপর এই দুই আয়াত পড়ুন- সুরা মায়েদা ৭২, সুরা তাওবাহ ৩০

৭. কখনো জ্বিন চলে যেতে রাজি হয়, কিন্তু বের হতে পারে না। এক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে তাকে সহায়তা করা। আপনি তখন তার কানে আযান দিন, এরপর সুরা ইয়াসিন পুরোটা পড়ুন, তারপর আবার আযান দিন… ইনশাআল্লাহ সে চলে যাবে।

৮. কখনো জ্বিন কিছু শর্ত দেয়, এই করতে হবে সেই করতে হবে.. তাহলে চলে যাবো.. এক্ষেত্রে যদি সেটা ইসলাম সমর্থিত হয় যেমনঃ নামাজ-কালাম পড়তে হবে, পর্দা করতে হবে… এরকম কিছু হলে বলুন, আল্লাহর বিধান হিসেবে মানতে রাজি আছি। কিন্তু শরিয়ত পরিপন্থী কিছু হলে, কোনো পাপ কাজ হলে মানবেন না… বরং তাকে শাস্তি দিন এসব বলার জন্য।

৯. মাঝে মাঝে জিনের কাছে ওয়াদা নেয়ার সময় পালিয়ে যায়। মানে যখন চলে যাবার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হবে ঠিক তখনই পালায়। এমন হলে অনেকবার সূরাহ আর-রাহমানের ৩৩ থেকে ৩৬ এই চার আয়াত বারবার পড়ুন।

১০. অনেক সময় জিন বুঝাবে সে ভিকটিমকে ছেড়ে চলে গেছে। অথচ সে এখনো ওই শরীরের মধ্যে আছে। এমনকি যখন কথা বলবে তখন ভিকটিমের মত করেই কথা বলবে। এই অবস্থায় কিভাবে বুঝবেন যে চলে গেছে না আছে?

এমতাবস্থায় আপনি যদি রুগীর মাথায় হাত রাখেন তাহলে অস্বাভাবিক কাঁপুনি বুঝতে পারবেন, এছাড়াও যেসব যায়গায় হাত দিয়ে ডাক্তাররা পালস রেট চেক করে যেমন: হাত, শাহরগ ব্লা ব্লা… এসব যায়গায় হাত রাখলেও অস্বাভাবিক পাল্সরেট বুঝতে পারবেন, তখন আবার রুকইয়াহ করলে দেখবেন কথা বলতে শুরু করেছে।

১৩. কখনও কখনও জিন প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক হয়ে যায়। দুজন মিলেও ধরে রাখা যায় না। এরকম ক্ষেত্রে সুরা নিসা ৭৬নং আয়াত কানের কাছে বারবার পড়লে এবং ফুঁ দিলে উপকার হয়। শয়তান খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে যায়।

اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۚ  وَالَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ الطَّاغُوۡتِ فَقَاتِلُوۡۤا اَوۡلِیَآءَ الشَّیۡطٰنِ ۚ  اِنَّ کَیۡدَ الشَّیۡطٰنِ کَانَ ضَعِیۡفًا ٪

১২. জ্বিনের রুকইয়াহ করার সময় যদি রুগী কোনো কারণ ছাড়াই কাঁদতে লাগে, তাকে কাঁদা থামাতে বলুন। সে যদি এরকম বলে ‘আমি কন্ট্রোল করতে পারছি না.. এমনিতেই কান্না পাচ্ছে…’ তাহলে সম্ভবত তাঁকে যাদু করা হয়েছে। এবার “সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” এই আয়াতগুলো পড়ে ফু দিন, কয়েকবার করতে পারেন। এরপর যদি দেখেন কান্না বাড়ছে, কিংবা শরীরের কোথাও ব্যথা অনুভব করছে তাহলে বুঝতে হবে সত্যিই যাদু করেছে কেউ।

এমতাবস্থায় যাদুর জন্য রুকইয়াহ করতে হবে।

১৩. যাদুর বেসিক রুকইয়াহ- 

যাদু বিষয়ে বিস্তারিত সামনে আলোচনা করা হবে, তবে কমন চিকিৎসা হিসেবে বলা যায়- এক বোতল পানি নিয়ে “সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিন।

وَ اَوْحَیْنَاۤ اِلٰی مُوْسٰۤی اَنْ اَلْقِ عَصَاكَ ۚفَاِذَا هِیَ تَلْقَفُ مَا یَاْفِكُوْن﴿۱۱۷﴾ فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا کَانُوْا یَعْمَلُوْنَ ﴿۱۱۸﴾ فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوْا صٰغِرِیْنَ ﴿۱۱۹﴾ وَ اُلْقِیَ السَّحَرَةُ سٰجِدِیْنَ ﴿۱۲۰﴾ قَالُوْۤا اٰمَنَّا بِرَبِّ الْعٰلَمِیْنَ ﴿۱۲۱﴾ رَبِّ مُوْسٰی وَهٰرُوْنَ ﴿۱۲۲﴾
فَلَمَّاۤ اَلْقَوْا قَالَ مُوْسٰی مَا جِئْتُمْ بِهِ ۙالسِّحْرُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ سَیُبْطِلُہٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِیْنَ ﴿۸۱﴾ وَیُحِقُّ اللّٰهُ الْحَقَّ بِکَلِمٰتِہٖ وَلَوْ کَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ ﴿۸۲﴾
وَ اَلْقِ مَا فِیْ یَمِیْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْا ؕ اِنَّمَا صَنَعُوْا کَیْدُ سٰحِرٍ ؕ وَ لَا یُفْلِحُ السَّاحِرُ حَیْثُ اَتٰی ﴿۶۹﴾

সপ্তাহ সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, পাশাপাশি গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর ১মাস প্রতিদিন কমপক্ষে ১-২ঘন্টা রুকইয়া শুনতে হবে। এরমধ্যে বেশি বেশি অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক সময় যেন তিনকুল এর রুকইয়া শুনে।

রুকইয়ার পানি শেষ হয়ে গেলে শুদ্ধভাবে কোরআন পড়তে পারে এরকম কেউ আয়াতগুলো পড়ে আবার নতুন পানিতে ফুঁ দিলেই হবে, এক্ষেত্রে পরহেজগার কেউ হলে আরো ভালো।

খেয়াল রাখার বিষয় হচ্ছে, রুকইয়া করার সময় প্রথম প্রথম কিছুদিন সমস্যা বাড়তে পারে, এতে ঘাবড়ে গিয়ে বন্ধ করে দেয়া যাবেনা। পরে আস্তে আস্তে কমে আসবে। উপরের পদ্ধতিটা ধৈর্য ধরে ফলো করুন, পাশাপাশি সকাল সন্ধার অন্যান্য সুন্নাত আমলগুলোও করতে থাকুন। আল্লাহ চায়তো, সিহরের সমস্যাগুলো একদম ভালো হয়ে যাবে।

<< আগের পর্ব | পরের পর্ব >>

মন্তব্য করুন