Ruqyah Support BD

বদনজরের জন্য যেভাবে রুকইয়াহ করবেন

পদ্ধতি-১:

যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর হাদিসটা অনুসরণ করলেই হবে।

অর্থাৎ যার নজর লেগেছে তাঁকে অযু করতে বলবেন, অযুর পানিগুলো একটা পাত্রে জমা করবে, এরপর সেটা আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ে ঢেলে দিবেন। তাহলেই নজর কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ্। যেমন, যদি মনে করেন আপনার বাবুর উপর মেহমানের নজর লেগেছে (যদিও ইচ্ছা করে বদনজর দেয়নি) তাহলে মেহমানকে অযুর করতে বলবেন বা উনার অযুর পানি নিয়ে আপনার বাবুর গায়ে ঢেলে দিবেন। ইন শা আল্লাহ্ সে সুস্থ হয়ে যাবে।

এই পদ্ধতিতে সাধারণত একবারেই বদনজরের প্রভাব দূর হয়ে যায়। তবে প্রয়োজনে ২-৩দিন করা লাগতে পারে। আর হ্যাঁ! অনেকের ক্ষেত্রে এই ওযু করার পানি ঢালার পর, প্রচণ্ড পায়খানা বা প্রসাবের বেগ আসে, সেটা হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ্ সুস্থ হয়ে যায়।

প্রশ্ন হচ্ছে, কুলির পানিও কি জমা করবে?

উত্তরঃ যদিওবা এক হাদিসে আছে কুলির কথা, তবে না নিলেও সমস্যা নেই। অধিকাংশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একজনের হাতমুখ ধোয়া পানি নিয়ে অপরজন হাতমুখ ধৌত করলেই বদনজর নষ্ট হয়ে যায়।
অনেক লোককে পানি দেয়ার কথা বলার মত অবস্থা থাকে না, সেক্ষেত্রে তাকে দাওয়াত দিতে পারেন, এবং খাবার আগে হাত ধোয়ার জন্য পাত্র দিতে পারেন, আর সেই পানিটা গায়ে ঢালতে পারেন।

উহ্য প্রশ্ন-২: যদি নিজের নজর নিজেকেই লাগে?

উত্তরঃ তাহলে ওযু করবে, এবং পানিগুলো জমা করবে, এরপর সেটা নিজের গায়ে ঢালবে।

.

পদ্ধতি-২ :

আর যদি আপনি না জানেন আপনার উপর কার নজর লেগেছে, যদি অনেক দিনের সমস্যা হয়, কিংবা যদি অনেকজনের নজর লাগে, তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। বদনজরের সেলফ রুকইয়াহ হিসেবে এই পদ্ধতি সাজেসটেড।

১. রুকইয়ার আয়াতগুলো প্রতিদিন তিলাওয়াত করবেন অথবা শুনবেন। সরাসরি শোনা সম্ভব না হলে অডিও রেকর্ড শুনবেন।
২. আর প্রতিদিন রুকইয়ার গোসল করবেন। (গোসলের নিয়ম একটু পর বলা হয়েছে)

রুকইয়ার আয়াত নিজেই তেলাওয়াত করা সর্বোত্তম। তাই আপনার তেলাওয়াত শুদ্ধ হলে সম্ভব হলে রুকইয়াহ আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তা না হলে অডিও শুনবেন। বদনজরের রুকইয়ার পিডিএফ এই লিংকে পাবেন-

রুকইয়ার আয়াত পিডিএফ ডাউনলোড

পিডিএফ পড়তে সমস্যা হলে বা অডিও শুনলে যদি ঘুম আসে তাহলে কুরআন থেকে দেখে দেখে তেলাওয়াত করতে পারেন। আয়াতের লিস্ট নিচের লিংকে পাবেন।

বদনজরের রুকইয়ার আয়াতের তালিকাঅনলাইনে পড়ুন

রুকইয়াহ অডিওর ডাউনলোড পেজের লিংক: https://ruqyahbd.org/download
(সেখান থেকে “বদনজর Evil Eye অথবা Eye Hasad যেকোনোটি শুনতে পারেন। এছাড়া সা’দ আল গামিদীর আধাঘণ্টার রুকয়াহটাও শুনতে পারেন। যেটাই শুনবেন, শোনার সময় নিয়ত রাখবেন, আমি বদনজরের জন্য রুকইয়াহ করছি। জিনের নজরের সমস্যা থাকলে এর সাথে ‘৮সুরার রুকইয়াহ’ অডিওটাও শুনবেন। নিজে তিলাওয়াত করলে ‘সাধারণ রুকইয়ার আয়াত’ অথবা ‘বদনজরের রুকইয়ার আয়াত’ পিডিএফটা পড়বেন।

যদি আপনার কোনো সমস্যা থাকে তাহলে আপনি ফিজিক্যালি এর প্রভাব টের পাবেন। যেমনঃ প্রচণ্ড ঘুম আসবে, মাথাব্যথা করতে পারে, হাত-পা কামড়াতে পারে, হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে, শরীর ঘামতে পারে, বেশি বেশি প্রসাব হতে পারে- ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবে এরপরেও শুনতে থাকবেন, ঘুম আসলে জেগে থাকতে চেষ্টা করবেন। আর একান্তই না পেরে ঘুমিয়ে গেলেও দুশ্চিন্তার কিছু নাই। আর সমস্যা সমাধান হলেই ভালো ফিল করতে লাগবেন ইনশাআল্লাহ্! দুশ্চিন্তার কারণ নাই।

আর আপনি কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে শোনার পরেও যদি কোনোই ইফেক্ট না বুঝতে পারেন, তাহলে ধরতে পারেন আপনার কোনো সমস্যা নাই আলহামদুলিল্লাহ্‌।
.

রুকইয়ার গোসলের পদ্ধতি হচ্ছে-

একটা বালতিতে পানি নিবেন, তারপর ওই পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে পড়বেন –
“দরুদ শরিফ, ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, চারকুল (কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক্ব, নাস) প্রত্যেকটা ৭বার। শেষে আবার দরুদ শরিফ ৭বার পড়বেন।

লক্ষণীয়ঃ

১. পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং পানি দিয়ে গোসল করবেন। এগুলা পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন না, এমনিই গোসল করবেন।
২. যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে হয় তখন এসব অবশ্যই বাহিরে এনে পড়তে হবে।
৩. কোনদিন হাতে সময় কম থাকলে এসবের মধ্যে সুরা কাফিরুন বাদ দিতে পারেন আর দরুদ শরিফ ৩বার করে পড়তে পারেন। অথবা পড়ার পর শুধু ফুঁক দিয়ে গোসল করে নিতে পারেন। (তবে এভাবে উপকার কম হতে পারে)
৪. প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করলেন পরে অন্য পানি দিয়ে ভালোমতো করলেন অসুবিধে নেই।
৫. যার সমস্যা সে যদি পড়তে না পারে, তাহলে অন্যজন পানিতে হাত রেখে পড়ে দিবে, এরপর গোসল করবেন।
৬. উত্তম হচ্ছে, প্রথমে রুকইয়াহ শুনে এরপর গোসল করতে যাবেন। গোসলের আগে শুনতে না পারলে সমস্যা নাই, দিনের যেকোন সময় শুনলেই হবে ইনশাআল্লাহ্।
৭. রুকইয়ার গোসল বাদ দিয়ে, খালি অডিও শোনা থেকে নিরুৎসাহিত করছি। এতে কষ্ট বেশি কিন্তু উপকার কম হওয়ার আশংকা রয়েছে।
.
মোটকথা, প্রতিদিন রুকইয়াহ শুনবেন এবং উপরের নিয়ম অনুযায়ী রুকইয়ার গোসল করবেন। সমস্যা অনুযায়ী ৩-৭ থেকে দিন লাগতে পারে। সমস্যা বেশি মনে হলে ২১দিন করতে পারেন।

সমস্যা কম হলে কখনো একদিনেও ভালো হয়ে যায়। তবে ভালো হওয়ার পরেও ২-৩দিন করা উচিত।

পদ্ধতি-৩:

জিনের নজরের রুকইয়াহ ক্ষেত্রে করনীয় হচ্ছে –

বদনজরের রুকইয়ার প্রচলিত নিয়ম ফলো করা, সাথে অতিরিক্ত ৮সুরার রুকইয়াহ শোনা বা তিলাওয়াত করা। অর্থাৎ,

১. প্রতিদিন Evil Eye (বদনজর) এবং সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন… (৮সুরা) রুকইয়ার অডিও শোনা। [download link] 

নিজে তিলাওয়াত করতে চাইলে বদনজরের আয়াতগুলো, সাথে এই চারটি সুরা (সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন) একবার করে তিলাওয়াত করতে পারেন।

২. প্রতিদিন পানিতে হাত রেখে দরুদ, ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ৪কুল, দরুদ – সব ৭ বা ৩বার পড়ার পর গোসল করা, অথবা এসব পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করা।

৩. দিনে-রাতে এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া যায় –

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ الله التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وشَرّ عِبَادِهِ ، ومِنْ هَمَزَاتِ الشّيَاطِينِ وأَنْ يَحْضُرُونِ

এভাবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ রুকইয়াহ করুন। প্রয়োজনে আরও কিছুদিন বেশি। সঠিকভাবে রুকইয়াহ করলে আল্লাহ চায়তো দ্রুতই উপকার হবে।

প্রয়োজনে উল্লেখিত নিয়মে কিছুদিন রুকইয়াহ করার পর রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ এ আপনার অবস্থার আপডেট জানিয়ে পরবর্তী করনীয় বিষয়ে পরামর্শ নিন।


নোটঃ

বদনজরের চিকিৎসার আরও পদ্ধতি আছে। নিচের লিংকে পাবেন বাচ্চাদের, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথা কর্মস্থলের এবং পালিত পশু-পাখির উপর বদনজর কাটানোর নিয়ম – বাচ্চাদের ওপর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অথবা পশু-পাখির ওপর বদনজর লাগলে করণীয়। এছাড়া বদনজরের লক্ষণের জন্য “সালাফের মূল্যায়ন এবং নজর লাগার লক্ষণ” লিংক দ্রষ্টব্য।

মন্তব্য করুন