Ruqyah Support BD

সালাফে সালেহিনদের থেকে জ্বিনের চিকিৎসা বিষয়ক ঘটনা : জিনের স্পর্শ ২

সালাফে সালেহিনদের থেকে জ্বিনের চিকিৎসা বিষয়ক অনেক ওয়াকিয়া বর্ণিত আছে।

যেমন: একজন মৃগীরুগীকে আক্রান্ত অবস্থায় দেখে ইবনে মাসউদ রা. তার কানের কাছে গিয়ে افحسبتم انماخلقناكم عبسا আয়াতটা থেকে সুরার শেষ পর্যন্ত পড়েন, আর সে সাথে সাথে সুস্থ হয়ে যায়। তখন রাসুল সা. ইবনে মাসউদ রা.কে ডেকে বললেন- তুমি ওর কানের কাছে গিয়ে পড়লে? ইবনে মাসউদ রা. আয়াতটি বললেন। তখন রাসুল সা. বললেন, কোনো যোগ্য ব্যাক্তি যদি পাহাড়ের ওপরে এটা (সুরা মুমিনুনের এই আয়াত/আয়াতগুলো) পড়ে, তাহলে পাহাড়ও সরে যাবে! (তিরমিযী, হাকেম। এই হাদিসের সনদে একজন যয়ীফ রাবী আছে ইবনে লাহি’আ, অন্যরা সিকাহ)

ইবনে তাইমিয়া রহ. এর অনেকগুলো ঘটনা আছে, যেখানে উনি افحسبتم انما আয়াতটি পড়ে জ্বিন তাড়িয়েছেন। একবার এক ঘাড়ত্যাড়া জ্বিনকে উনি এই আয়াত পড়ছেন আর পিটাইছেন!! এই ঘটনা সামনে আসছে।

ইবনে আবিদ দুনিয়া রহ. এর আল-হাওয়াতিফ গ্রন্থ থেকে খুব সংক্ষেপে দুটি ঘটনা বলি।

এক শিয়া হজ্ব করতে গিয়েছিলো, সে যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ আমল করতে যাচ্ছিলো তখনই মৃগীরোগে আক্রান্ত হচ্ছিলো। (উলামাদের মতে, মৃগীরোগ জ্বিনের আসরের কারনে হয়) হুসাইন বিন আব্দুর রহমান রহ. মিনায় ওই লোকটাকে পেয়ে জ্বিনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তুমি যদি ইহুদি হও তবে মুসা আ. এর দোহাই, যদি খৃষ্টান হও তবে ঈসা আ. এর দোহাই, আর মুসলমান হলে তোমাকে মুহাম্মাদ সা. এর দোহাই দিয়ে বলছি তুমি চলে যাও।”
তখন জ্বিন কথা বলে উঠলো, “আমি ইহুদিও না, খ্রিষ্টানও না.. বরং মুসলমান! আমি এই হতভাগাকে দেখেছি সে আবু বাকর রা. এবং ওমর রা.-কে গালিগালাজ করে। এজন্য আমি তাকে হজ্জ করতে দেইনি।”

আরেকটি ঘটনা আছে, এক মুতাযিলাকে জ্বিন ধরেছিলো। সবাই ভিড় করে দেখছিলো, সাঈদ ইবনে ইয়াইয়া রহ. তার কাছে গিয়ে বললেন, “তুমি এর ওপর কেন আক্রমণ করেছ? আল্লাহ কি তোমাকে এই অধিকার দিয়েছে? না তুমিই বাড়াবাড়ি করছো?”
তখন লোকটার মুখ দিয়ে জ্বিন বলে উঠলো, “আপনি আমাকে ছেড়ে দিন, আমি একে খতম করে ফেলবো। সে বলছে কোরআন মাখলুক..!” (এটা মুতাযিলা ফিরকার একটা আকিদা)

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ.এর সময়ে বাদশাহর মেয়েকে জ্বিন ধরেছিলো। তখন ইমাম আহমাদের কাছে এক মন্ত্রী এসে ঘটনা জানালো।
ইমাম আহমাদ রহ. একটি জুতা বের করে অযু করলেন, এরপর বললেন- জ্বিনকে গিয়ে বলো “তুমি কি এই মেয়েকে ছেড়ে যাবে? নাকি ইমাম আহমাদের হাতে জুতার বাড়ি খাবে?”
মন্ত্রী গিয়ে কথাগুলো জ্বিনকে বললো, জ্বিন বললো: “আমি চলে যাবো.. ইমাম আহমাদ যদি বাগদাদ থেকে চলে যেতে বলেন তাও চলে যাবো! ইমাম আহমাদ আল্লাহর অনুগত বান্দা। যে আল্লাহর অনুগত হয়, সব সৃষ্টি তার অনুগত হয়ে যায়।” এরপর জ্বিন চলে গেলো। কিন্তু….
ইমাম আহমাদ রহ. এর ইন্তিকালের পর আবার এসে ভর করলো, এবার বাদশাহ একজনকে ইমাম আহমাদ রহ. এর ছাত্র আবু বাকর মারূযী রহ. এর কাছে পাঠালো, উনি একটা জুতা নিয়ে মেয়েটার কাছে আসলো.. জ্বিনটা বললো, এবার আর আমি যাচ্ছিনা! ইমাম আহমাদ আল্লাহর আনুগত্য করতো, তাই তার কথা শুনে চলে গেছিলাম, তোমাদের কথা তো আমি শুনবো না..!!

ইবনে তাইমিয়া রহ. এর একটি ঘটনা, উনি এক মেয়ে রুগির ওপর সুরা মুমিনুনের ওই (১১৫নং) আয়াতটা পড়েন, তখন জ্বিন কথা বলে ওঠে।
ইবনে তাইমিয়া রহ.- তুমি ওকে ধরছো কেন?
জ্বিন– আমি ওকে পছন্দ করি..
– সেতো তোমাকে পছন্দ করে না!
— আমি ওকে নিয়ে হজ্বে যাবো..
– সেতো তোমার সাথে হজ্বে যেতে চায় না!
জ্বিনটা ঘাড়ত্যাড়া ছিলো, ইবনে তাইমিয়া রহ. আচ্ছাতাকে পিটানি দিলেন,
তখন জ্বিন বললো- আপনি বলছেন তো? আপনার কথা মেনে আমি চলে যাচ্ছি!
ইবনে তাইমিয়া রহ. বললেন- থাম থাম! আমার কথা না বরং আল্লাহর এবং রাসুলের কথা (মুমিনকে কষ্ট দেয়া হারাম) মেনে চলে যা!

এবার জ্বিন চলে গেল, আর কখনো আসেনি।

আজ সবশেষে জেনে নিন মানুষকে কেন জ্বিন ধরে বা অন্যান্য ক্ষতি করে?

এর বেশ কয়েকটি কারণ আছে, যেমন:

১. যদি কোনোভাবে কোনো জ্বিনকে কষ্ট দেয়া হয়, আঘাত করা হয়

২. যদি কোনো জিনের ওপর গরম পানি ফেলা হয়

৩. অথবা কোনো জিনের গায়ে প্রসাব করা হয়

৪. অথবা বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই অহেতুক কষ্ট দেয়ার জন্য আসর করতে পারে, যেমন অনেক মানুষ অহেতুক জিনদের কষ্ট দেয়

৫. কোনো জিন হয়তো কাউকে পছন্দ করে, এজন্য আসর করতে পারে

৬. আগের কোনো শত্রুতার জেরে আসর করতে পারে, বা ক্ষতি করতে পারে

৭. যদি তাদের কাউকে ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে মেরে ফেলা হয়, এজন্য বদলা নিতে ক্ষতি করতে পারে।

এখানে জেনে রাখা উচিত, মানুষকে বিনাদোষে কষ্ট দেয়া যেমন হারাম তেমন জিনদের কষ্ট দেয়াও হারাম। ইচ্ছাকৃতভাবে বিনাদোষে জিনকে হত্যা করলেও কিসাস লাযিম হয়। তবে অনিচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করলে বা হত্যা করলে কিসাস (বদলা) নেয়া বৈধ হবে না।

এক্ষেত্রে রাসুল সা. একটা সহজ উসুল (মূলনীতি) বর্ণনা করেছেন, কোনো ক্ষতিকর প্রাণী যেমন যেমনঃ সাপ দেখলে তিনবার বলতে হবে, “তুমি জ্বিন হলে এখান থেকে চলে যাও।” এরপর মারলে কিসাস নেয়া যাবেনা।
একজন মুহাদ্দিসের ঘটনা প্রসিদ্ধ আছে, যিনি একটা সাপকে হত্যা করেছিলেন, সেটি আসলে জ্বিন ছিলো। তখন জ্বিনেরা উনাকে জ্বিনদের আদালতে নিয়ে যায়। উনি হাদিসটি শুনিয়ে বলেন, আমি তো তিনবার চলে যেতে বলেছিলাম। সেখানে একজন জ্বিন সাহাবী ছিলো, তিনি বলেন- এটা আমিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি।

এরপর জ্বিনেরা উক্ত মুহাদ্দিসকে নিজ বাড়িতে ফেরত দিয়ে যায়।

<< আগের পর্ব | পরের পর্ব >>

মন্তব্য করুন