Ruqyah Support BD

কীভাবে বুঝব আমার রুকইয়াহ করা শেষ?

রুকইয়াহ করতে করতে যদি রোগের লক্ষণগুলো একদমই আর দেখা না যায় অথবা রোগী তার অসুস্থতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি লাভ করে তাহলেই সাধারণত বলা যায়, তার রুকইয়াহ করা এখন সম্পন্ন হয়েছে। এই সুস্থতা একেবারে পাওয়া যায় না; বরং এটা ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে বোঝা যায়। আর প্রতিটা ধাপে রোগীকে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়।  (This is something which usually happens in phases, and each phase has its own unique challenges) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী যখন একটু সুস্থ বোধ করতে থাকে, তখনই রুকইয়াহ করতে ভুল করে বসে।

সাধারণত কয়েকটা পদ্ধতিতে যাচাই করা হয় যে জিন-জাদুর সমস্যা এখনও আছে কি না। যেমন –
এক. সমস্যার বিবরণের সাথে উপসর্গ বা লক্ষণ মিলিয়ে। তবে কিছু উপসর্গ এমন আছে যা একটা-দুইটা থাকার মানেই অবস্থা জটিল। আবার কখনও এমন হয়তো যে বেশ কয়েকটা থাকার পরেও অগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বাদ দেয়া যায়। আপনি চেষ্টা করবেন যাতে ছোট-বড় কোনো লক্ষণই বাকি না থাকে।
দুই. রুকইয়াহ করে তার প্রতিক্রিয়া খেয়াল করে। তবে অনেক সময় সমস্যা থাকার পরেও রুকইয়াহ করে তাৎক্ষনিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না, এজন্য এই পদ্ধতিটা অভিজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা বিবেচ্য।

রুকইয়াহর ক্ষেত্রে একেক রোগী একেক ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। সবাই-ই যে ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে এগিয়ে যাবে—এমন নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয় যে, জিনের লক্ষণগুলো খুব প্রকট হয়ে গেছে; কিন্তু এর একটু পরই জিনটা শরীর থেকে চলে যায়। তাই ট্রিটমেন্ট সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাক বা শেষ হওয়ার কাছাকাছি চলে যাক, এই সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হবে—

১. রোগীরা সবচেয়ে বড় যে ভুলটা করেন, তা হচ্ছে, রুকইয়াহ করা থামিয়ে দেন। যখনই জিন চলে যায় বা রোগী একটু ভালো বোধ করে তখন আর রুকইয়াহ করেন না। কোনো অবস্থায়ই রুকইয়াহ করা থামাবেন না। জিন চলে যাওয়ার পরও কমপক্ষে এক মাস আগের মতোই স্বাভাবিক মাত্রাতেই রুকইয়াহ চালিয়ে যাবেন। যতক্ষণ আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারেন যে, আমি এবার আসলেই সুস্থ। এইভাবে পরবর্তী এক মাসে আপনি কিছু ভুল থেকে রক্ষা পাবেন। কারণ, অনেক সময় জিন চলে যাওয়ার কিছুদিন পর আবার ফিরে আসে। আবার অনেক সময় একটা জিন চলে যায়; কিন্তু অন্য জিন শরীরে প্রবেশ করে। এমন অনেক কেস আছে, যেখানে জিন আবার ফেরত এসেছে। জাদুর সমস্যা ছিল, একটু সুস্থ হতে দেখে রুকইয়াহ বন্ধ করে দিয়েছে, সমস্যা আবার বেড়ে গেছে। কিংবা বদনজরে আক্রান্ত ছিলো, সেই গর্ত থেকে জিনের আসর হয়েছে। রুকইয়াহ করার পর জিন চলে গেলেও সাধারণত  জিনের নজরের লক্ষণগুলো কিছুদিন বিদ্যমান থাকে।
তাই সুস্থ হওয়ার পরও কিছুদিন রুকইয়াহ করে যেতে হবে। এই সময়টাতে একজন রাকিকেই তেলাওয়াত করতে হবে—সেটা জরুরি নয়। রোগী নিজে বা তার কোনো আত্মীয়ও তার ওপর রুকইয়ার আয়াত পড়তে পারে। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর কতদিন রুকইয়াহ করা উচিত, এর উত্তর ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হবে। জটিল সমস্যার ভুক্তভোগীরা এরপর অন্তত দেড়-দুইমাস করা উচিত। আর হিফাজতের মাসনুন আমল কখনওই বাদ দেয়া উচিত না।

২. প্রায় সুস্থ হয়ে গেছি, রুকইয়াহ বন্ধ করে দিই? জি না। এটাও আগের কথার সাথে সম্পর্কিত। আপনাকে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হতে হবে যে, আপনি সুস্থ হয়েছেন। মোটামুটি নিশ্চিত বা ৮০ ভাগ নিশ্চিত হলে চলবে না। এমনকি এ ক্ষেত্রে ৯০ ভাগ নিশ্চয়তাও যথেষ্ট নয়। আপনাকে অবশ্যই ১০০ ভাগ নিশ্চিত হতে হবে যে, জিন চলে গেছে বা জাদুর সব লক্ষণগুলো সম্পূর্ণ দূর হয়েছে। কারণ, ১০ ভাগ সমস্যাও যদি রয়ে যায় তাহলে সেখান থেকে আবার বাড়তে পারে। আর সচরাচর এমনটাই হয়ে থাকে। যদি কারও ক্যান্সার হয় তাহলে সে নিশ্চয়ই ৯০ ভাগ ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করে চিকিৎসা বন্ধ করে দেবে না। আমরা ভালোভাবেই জানি, অবশিষ্ট ১০ ভাগ থেকেই আবার ক্যান্সার পূর্ণরূপ ধারণ করতে পারে। তাই ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা অর্জন করার চেষ্টা করুন; ৯০ ভাগ না।

৩. আগেও বলা হয়েছে, সুস্থতা ধাপে ধাপে (by stage) অর্জিত হয়। এই প্রতিটি ধাপে বা পর্যায়ে শয়তান বিভিন্ন কৌশলে আক্রমণ করে। শয়তানের সামনে যখন একটি রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, তখন সে আরেকটি রাস্তা খুঁজে নেয়। যেমন হতে পারে যে, শরীরের ঝাঁকুনি বা বেহুঁশ হয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে; কিন্তু এর সাথে সাথে আবার ওয়াসওয়াসা বা সংশয় শুরু হয়েছে। এরপর দেখা গেল, ওয়াসওয়াসা বন্ধ হয়ে গেছে; কিন্তু ইবাদাতের প্রতি আলস্য ধরে গেছে। আরও স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন জাদুর রোগী কিছুদিন রুকইয়াহ করার পর দ্বিতীয় ধাপে এসে এমন কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে, যেগুলো প্রথমে ছিল না। আরও কয়েকদিন রুকইয়াহ করলে তৃতীয় ধাপে গিয়ে আবার সেগুলো চলে ছিল।  তাই শয়তানের বিরুদ্ধে জয়ী হতে হলে এই প্রতিটি পর্যায়েই ধৈর্য ধরে রেখে সমানভাবে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে হবে। এ জন্য দরকার ধারাবাহিকতা। কোনোভাবেই রুকইয়াহ বন্ধ করা যাবে না; পরিস্থিতি ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন। প্রয়োজনে পাশাপাশি আরও কিছু বাড়তি রুকইয়াহ যোগ করতে হবে। যেমন : এ ক্ষেত্রে আপনার রুকইয়াহ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কিছুদিন ওয়াসওয়াসার রুকইয়াহ করার প্রয়োজন হতে পারে।
আর রুকইয়াহ করার পর সাইড ইফেক্ট সামলানোর ব্যপারে আলোচনাটাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, যা বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে এসেছে।

৪. রোগী সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরও সে ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। এটা অনেকটা মেজর কোনো সার্জারির মতো। কারও শরীরে যদি বড় ধরনের অপারেশন করা হয় তাহলে রোগী কিন্তু সার্জারি পরবর্তী সময়ে ইনফেকশনের ঝুঁকিতে থাকে। বাস্তবতা হচ্ছে, এরকমভাবেই রুকইয়াহ করার পর রোগীরা আবারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। তাই এ সময়টা রোগীকে চরম সতর্কতার সাথে পার করতে হয়, যেন তিনি আবার কোনোভাবে আক্রান্ত না হন।

৫. কোনো কারণে যদি আবার সমস্যা শুরু হয়েছে বলে মনে হয়, তখন দেরি না করে  আবার পুরোদমে গুরুত্বের সাথে রুকইয়াহ শুরু করে দিতে হবে। হেল্প করার মত কাউকে না পেলে সেলফ রুকইয়াহ শুরু করতে একটুও দেরি করবেন না। এত কষ্ট-মেহনতে পাওয়া আরোগ্যকে অবহেলার কারণে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই না?


কৃতজ্ঞতাঃ লেখার মূল থিম উস্তায মুহাম্মাদ টিম হাম্বলের How Do I Know That My Treatment is Complete? প্রবন্ধ থেকে নেয়া। পরে জরুরি কয়েকটি বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া এটি রুকইয়াহ বই এর পরিশিষ্টেও এসেছে।

মন্তব্য করুন