রোজার মধ্যে সময় – সুযোগ আর বরকতের জন্য অনেকেই রুকইয়াহ করেন। যেহেতু বড় বড় শয়তান এই সময় বন্দি থাকে, প্রতিদিন দোয়া কবুল হয় – তাই রুকইয়াহ করে উপকারও বেশি হয়। এই সময়ে কিছু টিপস খেয়াল রাখলে ইনশাআল্লাহ আমরা বেশি ফায়দা পাব…
১. তিলাওয়াত শোনার চেয়ে নিজে বেশি তিলাওয়াত করার চেষ্টা করুন।
সুন্নাহ হিসেবে নিয়মিত তিলাওয়াত করে কোরআন খতম দেয়ার চেষ্টা তো করবেনই। এর বাইরে রুকইয়ার জন্য নির্দিষ্ট আয়াত বা সুরাগুলোও সময় নিয়ে পড়বেন।
২. রোজার শুরুর দিকে ভারি / কঠিন রুটিনের রুকইয়াহগুলো করার চেষ্টা করুন। যাতে শেষ দশকে দোয়া এবং ইবাদাতে বেশি সময় দিতে পারেন। তখন রুকইয়াহ কমিয়ে অল্প করলেও হয়ে যায়। সম্ভব হলে শুরুতেই ৭দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ করে ফেলুন। ডিটক্সের সাথে সাথে বেশি করে তিলাওয়াত। এরপর সহজ কোন নিয়ম শুরু করলেন।
৩. রোজা রেখে পানি, মধু, খেজুর কিভাবে খাবেন?
- অন্য সময় রুকইয়ার পানি যেটা সকালে খেতেন, ওইটা সাহরির সময় খাবার আগে বা পরে খাবেন। আগে খেলে বেশি ভাল। আর রাতেরটা মাগরিব অথবা এশার পরে।
- যদি একবেলা রুকইয়ার পানি বা মধু খেতে বলা হয়, তাহলে এটা ইফতারের সময় খেতে পারেন। ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট হবে।
- রোজা রেখে বরই পাতার গোসল করলে শুধু গোসল করবেন, পাতা মেশানো পানি খাওয়া বাদ দিন, অথবা সামান্য পাতাবাটা রেখে রাতে খাবেন। চাইলে রাতেও বরই পাতার গোসল করতে পারেন।
৪. অনেক বেশি বেশি দোয়া করুন। অনেক বেশি। প্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য বারবার দোয়া করতে থাকুন। দোয়ার পাশাপাশি এসময়ে দরুদ এবং ইস্তিগফারের পরিমাণ বাড়ানোও জরুরি। চাইতে থাকুন। কল্যাণ থাকলে অবশ্যই আল্লাহ্ দিয়ে দিবে।
৫. যাদের জটিল বা পূরানো শারিরীক রোগব্যাধি আছে, বাচ্চা শিশুর সমস্যা আছে। তারাও এই সময়টাকে কাজে লাগাতে পারেন। অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে এই মাসে কোরআনের প্রভাব বেশি দেখা যায়।
৬. যারা বিভিন্ন গুনাহের আসক্তিতে পড়েছেন। তাদের জন্য এই মাসে প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা বেশি জরুরী। পর্ণগ্রাফি এডিকশন থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি সুরা নূর আর বাক্বারা তিলাওয়াত করা এবং শোনা উপকারী। এছাড়া “রুকইয়াহ যিনা” এর আয়াতগুলোও পড়া যায়।
চাইলে এসব তিলাওয়াতের পর পানিতে ফুঁ দিয়ে রাখতে পারেন। সন্ধ্যার পর এবং ভোরে কুপ্রবৃত্তি দমনের নিয়াতে, আসক্তি থেকে মুক্তির নিয়াতে পান করলেন।
৭. ওয়াসওয়াসা সমস্যা থাকলে সেটা তাড়ানোর জন্য প্ল্যান হাতে নিন। সমস্যা কম থাকলে ওয়াসওয়াসা সমস্যার প্রাথমিক পরামর্শগুলো ৭-৭দিন, আর বেশি থাকলে ওগুলোর পাশাপাশি প্রতিদিন সুরা বাকারা পুরাটা শুনবেন / পড়বেন। ইনশাআল্লাহ দুই সপ্তাহ পর বিরাট চেঞ্জ চলে আসবে।
(প্রয়োজনীয় লিংক যুক্ত করে দেয়া হয়েছে)
৮. নিয়মিত দান-সাদকাহ দিতে চেষ্টা করুন। যাকাতের হিসাব থাকলে পরিশোধ করে ফেলুন। হাদিসে আছে, তোমাদের সম্পদের হিফাজত করো যাকাতের মাধ্যমে, আর রোগের চিকিৎসা করো সাদকার মাধ্যমে।
৯. সাধ্যের অতিরিক্ত চাপ নেবেন না। এমন কিছু করতে যাবেন না, যাতে কদিন পর বাকি সবকিছুর দম ফুরিয়ে যাওয়ার ভয় হয়। যতটুকু ইবাদত সাধ্যে কুলাবে, অল্প হলেও নিয়মিত করতে থাকুন।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ ত’আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হল স্থায়ী আমলগুলো, যদিও এর পরিমাণ অল্প হয়। (বুখারি)
১০. রুকইয়াহ করতে থাকলে রোজার মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বাদ দিয়ে দিবেন না। সুস্থতাকে স্থায়ী করতে দীর্ঘদিন রুকইয়াহ এবং সর্বদা হিফাজতের আমল চালিয়ে যান।
বোনাস টিপস: রাতে বিছানায় শুয়ে সুবহানাল্লাহ ৩৩বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩বার, আল্লাহু আকবার ৩৪বার পড়তে পারেন। তাহলে একেতো অনেকগুলো সওয়াব হবে, এরপর সারাদিনের বাকি কাজকর্ম সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
বোনাস টিপস-২: শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে “ঠাণ্ডা, এলার্জি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির রুকইয়াহ!” লেখার রুকইয়াটা প্রতিদিন করতে পারেন। আশা করি উপকার হবে।
আল্লাহ্ এই রমাযান মাস থেকে আমাদের সর্বোচ্চ উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন। সঠিকভাবে সবগুলো রোজা সমাপ্ত করার তাওফিক দিন। আমিন!
মন্তব্য করুন