১. কোরআন হাদিসে জিন-জাদু-নজরের কথা আছে, আপনার জন্য জিন বা জাদুর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা জরুরি।
কিন্তু এখন আমি যখন বলি, “অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক সমস্যা- নজরের জন্য হয়” “স্বপ্নে হাতি দেখার মানে হল আপনি মুরগির গ্রিল খাবেন” এটা আপনার জন্য বিশ্বাস করা জরুরি নয়। আপনার বিশ্বাস না করার পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে, কিন্তু এজন্য আপনাকে আক্রমণ করার শরঈ অধিকার আমার নাই।
আমার ‘মনে হওয়া’ বা ‘ইউটিউবে শেখা’ বিষয়ে দ্বিমত করার কারণে গ্যাং নিয়ে কারও পোষ্টে ঝাঁপিয়ে পড়া নিরেট ছোটলোকি। মুসলিম দুরের কথা, ভদ্র কোনো মানুষ থেকে এমনটা আশা করে না কেউ।
২. লক্ষনভিত্তিক চিকিৎসাগুলোতে ডায়াগনোসিসে ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক না। আপনি কয়েকজন সিনিয়র হোমিপ্যাথের সাথে আলোচনা করেন, ভুরিভুরি উদাহরণ পাবেন। ইভেন আল্ট্রাসনো – এক্সরে করে আক্রান্ত অঙ্গের ছবি দেখার পরেও ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের ডাক্তারদের ভুল হয়। এটা হতেই পারে। সেখানে জিন-জাদুর মত অদৃশ্য বিষয়ে কবিরাজ-গনকদের মত খুঁটিনাটি মন্তব্য করা, আর অন্য কারও ভিন্ন মন্তব্য পেলে হাটেবাজারে গালাগাল করে বেড়ানো খুবই বাজে ব্যাপার।
এটা কারও ভালো ভবিষ্যতের ইংগিত না।
৩. আমাদের আকিদার উস্তায বলেছিলেন – ধরো! তুমি একটা গাছে নিচে বসে আছো, দূর থেকে দেখতে পেলে একটা গরু তোমার দিকে আসছে, কিছুটা কাছে আসার পর মনে হল না! এটা তো মহিষ, আরও কাছে আসার পর মনে হল- নারে! এটা তো মানুষ, ওই পাড়ার দোকানদার, আরও কাছে আসার পর বুঝা গেল নাহ! এটা তোমাদের এলাকার চৌকিদার সাহেব। তো এই যে চৌকিদারকে দোকানদার ভেবেছো, এটা ক্ষমাযোগ্য তাবিল। এর আগেরগুলা সীমার বাহিরের “তাহরিফ”।
নবিজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগীর বুকে বা পিঠে সামান্য আঘাত করে জিনকে বের হয়ে যেতে বলেছেন – এর দ্বারা আপনি যদি মনে করে আপনি রোগীর ওপর যেমন খুশি পিটানোর অধিকার পেয়ে গেছেন, শরীরের প্রতিটা ইঞ্চি খুঁচিয়ে ঝাঁজরা বানানোর অধিকার পেয়েছেন, তাহলে আপনার কাজকে আমি গবেষণা বলতে পারছি না দুঃখিত। এটা শয়তানি। আপনার তওবা করা উচিত।
এই মুহুর্ত থেকে কোরআন হাদিসের ব্যাপারে এমন মন্তব্য করা থেকে বিরত হওয়া উচিত, যা আপনার আগে আকাবির-আসালাফের কেউ করেনি।
৪. আর নিজের ব্যাপারে নিজেই (বা নিজের লোক দিয়ে) দেশ সেরা রাক্বি, দুনিয়ার মাঝে অন্যতম সেরা রাক্বি টাইপের কথাবার্তা প্রচার করা কেমন যেন বিষয়। অরুচিকর।
৫. কিছু ভাই রুকইয়ার সময় এই পরিমাণ টর্চার করেন, মানুষ আতংকিত হয়ে রুকইয়াহ করা ছেড়ে দেয়। আর ভাবতে শুরু করে এই মারধোরই বোধহয় রুকইয়াহ! কেউ কেউ পূর্বে যা করেছে, আবার সেসবেই ফিরে যায়।
এই বিষয়গুলো আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। এসব বন্ধ না হলে অনেক খারাপ কিছু হতে পারে। আল্লাহ এই ভাইদের হিদায়াত দিক, নইলে এই রাস্তাকে উনাদের থেকে পবিত্র করুন। আমিন।
_____
৬. (২৫-০৫-২০২৩এ যুক্ত করা) হাদিসে আছে “সব রোগের শিফা আছে” – এটা দিয়ে কোনো এক পাগল দলিল দিয়েছে তাদের সকল কবিরাজি তুকতাক, রোগীর ওপর টর্চার, গলাকাটা ফিস আর কাল্পনিক লক্ষনসমগ্র বিশ্বাস করা লাগবে। নইলে নাকি এই হাদিস অস্বীকার করা হবে। বোঝেন মজা?
ভাই! তাইলে কবিরাজদের দোষটা কি? আর সেক্যুলারদের দোষটা কি? এযুগের ইসলামিক রাজনৈতিকরা বলে রাজনীতিতে ফতওয়া আনবেন না। ফ্লেক্সিবিলিটি দেন। রাজনীতি হিসেবে যা খুশি ট্রায় মারতে দেন, এক যায়গায় না এক যায়গায় সফল হবই। বিরোধিতা করলে শুনবেন “আপনি রাজনীতি বুঝেন না”।
আধুনিক রাকিরাও বলে ঝাড়ফুকে ফ্লেক্সিবিলিটি দেন। চিকিৎসা হিসেবে সবকিছু ট্রায় মারতে দেন। সারা শরীর খোচায়া ঝাজরা করলে এক যায়গায় তো জিনের লাগবেই তাইনা? এদের কোনো অপকর্মের বিরোধিতা করলে শুনবেন “আপনি রুকইয়ার কিছু বুঝেন না, এগ্লা সব আমরাই বুঝি।”
আল্লাহ! এদেরকে অন্তত মানুষ বানাও। আমাদের এরকম ঝাড়ফুক ইন্ডাস্ট্রির কোনো দরকার নাই।
মন্তব্য করুন