বিয়ে নিয়ে যারা সমস্যায় আছেন তাদের জন্য এই পোস্ট
যাদের বিয়ের হচ্ছে না তাদেরকে আমি এই পোস্টে কিছু ক্যাটাগরিতে ফেলেছি। আপনি কোন ক্যাটাগরিতে পড়েন নিজেই ঠিক করে নিন।
প্রথম কেসঃ উচ্চাশা
ডাক্তারই লাগবে, সরকারী চাকুরীজীবীই লাগবে, পাইলটই লাগবে, ইঞ্জিনিয়ারই লাগবে- এই ধরনের উচ্চাশাতে যারা ভুগছেন তাদের জন্য পরামর্শ হল এই “ই”-কার থেকে বের হয়ে আসেন। ছেলে/মেয়ের চরিত্র দেখেন, দ্বীনদারী দেখেন, ইন শা আল্লাহ ঠকবেন না।
দ্বিতিয় কেসঃ উদাসীন বাবা-মা
হয়ত আপনার বিয়ে নিয়ে আপনি চিন্তিত ঠিকই কিন্তু আপনার অভিভাবক মোটেও সচেতন না। এই ক্ষেত্রে আপনার বিয়ের প্রস্তাব আসে না-এটা বাস্তবসম্মত চিন্তা নয়। কেউ প্রস্তাব দিলে তো আর আপনার সাথে কথা বলবে না। আপনার অভিভাবকের সাথে কথা বলবে। তারা যদি ফিরিয়ে দেয় কারণ তাদের ছেলে/মেয়ের বিয়ের “বয়স”(!) হয়নি বলে তাহলে আর কিভাবে বিয়ে হবে। এসব ক্ষেত্রে মুখ ফুটে বলা উচিত বাবা-মাকে যেন তারা বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করেন।
তৃতীয় কেসঃ বিবাহভীতি
বিয়ে না হবার এটাও একটা কারণ। বন্ধু-বান্ধবীদের কাছে তাদের সংসার সম্পর্কে ভয়াবহ অশান্তির কাহিনি, ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের সাংসারিক টানাপোড়নের কাহিনি, বিবাহিত বন্ধু-বান্ধবীর থেকে ফিজিক্যাল রিলেশনের বিরূপ সব কথাবার্তা, নিজের চারপাশের বিয়ে বিচ্ছেদ এবং অশান্তির বাস্তব চিত্র থেকে এর বিরূপ প্রভাবে বিবাহ ভীতি তৈরি হতে পারে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে পড়াশুনা, দ্বীনের উপর চলে এমন পাত্র/পাত্রী নির্বাচন করা এই ক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং অনেক বড় বিষয়।
চতুর্থ কেসঃ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন
ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করেন না, ঘুমান না। ফোন, পিসি নিয়ে থাকেন। বাজে নেশা/কাজ করেন। শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে। চেহাড়ার লাবণ্য হারিয়ে গিয়েছে। আপনাকে দেখে কে পছন্দ করবে? কাজেই নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করেন। ইন শা আল্লাহ বিয়েতে দেরি হবে না।
পঞ্চমকেসঃ রুকইয়াহ সংক্রান্ত সমস্যা
১। বিয়ের কথা বার্তা শুরু হলেই আপনার চেহাড়া খারাপ হয়ে যায়?
২। বিয়ে করতে চান কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব আসলেই প্রচণ্ড রাগ হয়?
৩। বিয়ের কথা শুরু হলেই অসুস্থ হয়ে যান?
৪। মেরুদণ্ডের নিচে অথবা মাথা অথবা ঘাড়ে অথবা পেটেব্যথা আছে আপনার? ডাক্তারী চিকিৎসা করেও কোনো লাভ হয় নি?
৫। স্বপ্নে খাওয়া দাওয়া করেন আপনি?
৬। স্বপ্নে কেউ আপনার প্রাইভেসী নষ্ট করে? ঘুম থেকে উঠার পর অঙ্গসমূহে ব্যথা হয়?
৭। ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয়?
এসব প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যা বোধক হয় তাহলে আপনার রুকইয়াহ করা উচিত। ভালমত পড়বেন। “ভাইয়া কিছুই বুঝি নি”, “ভাইয়া সব মিলে গিয়েছে, এখন কি করবো?” -এই টাইপের প্রশ্ন যেন করা না লাগে।
ক) যদি দুই-তিনটা মিলে তাহলে দুই সপ্তাহ বদনজরের রুকইয়াহ করবেন। বদনজরের রুকইয়াহ করলে শরীর খারাপ করতে পারে। তখন অফ করা যাবে না। “বদনজরের সেলফ রুকইয়াহ গাইড” এই লিংকে বিস্তারিত।
দুই সপ্তাহ করার পরেও যদি সমস্যা না চলে যায় তাহলে নিচে থেকে খ ফলো করবেন।
খ) যদি চার-পাচটা বা তারও বেশি মিলে যায় তাহলে আপনি সিহরের রুকইয়াহ করেন ২ সপ্তাহ। এর মধ্যে ৩-৫ দিন বরই পাতার গোসল করবেন। এরপর আপডেট দিতে চাইলে গ্রুপে পোস্ট করবেন। উপরে লিখে দিবেন “আপডেট পোস্ট”
যেদিন বরই পাতার গোসল করবেন সেদিন আর সিহরের নরমাল গোসল করতে হবে না।
যদি আপনার প্রাইভেসি নষ্ট হয় স্বপ্নে তাহলে নিচের লিংকের আয়াতগুলো পড়ে অলিভ ওয়েলে ফু দিয়ে রাতে ঘুমের আগে সারা গায়ে মালিশ করবেন। প্রাইভেসি নষ্ট না হলেও মালিশ করতে পারবেন, এতে ক্ষতির কিছু নেই।
প্রশ্নঃ
১। আমার এমন কোনো সমস্যা নেই? আমি কি ক বা খ ফলো করতে পারবো?
– পারবেন। অনেক সময় সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তি বোঝে না তার সমস্যা আছে কিনা। রুকইয়াহ করলে তখন বের হয়। আপনি করতে পারেন। আপনার যদি সমস্যা না থাকে তবে ক্ষতি হবে না। আর যদি সমস্যা থাকে তাহলেতো বোঝাই গেল।
২। কতদিন করতে হবে?
– যতদিন পর্যন্ত লক্ষনগুলো থাকবে ততদিন। তবে লক্ষন চলে গেলেও আরও দুই সপ্তাহ করা উচিত।
৩। আমারতো তাবিজ আছে গায়ে। আমি করতে পারবো?
৪। তাবিজ ফেলে দিলে হবে? নষ্ট না করে?
– হবে না। নষ্ট করতে হবে।
৫। তাবিজ কোথায় আছে জানি না / হারিয়ে গিয়েছে। আমি কি রুকইয়াহ করতে পারবো?
– পারবেন। আল্লাহর কাছে দুয়া করবেন যেন যেখানেই থাকুক তাবিজ সেটা যেন নষ্ট হয়ে যায়। আর আগে ব্যবহার করে থাকলে তওবা করে নিবেন।
ষষ্ঠ কেসঃ উপরের কোনকিছুই আমার সাথে মিলে না। তবুও বিয়ে হচ্ছে না।
আপনার উচিত হবে বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার। আর তাহাজ্জুদ পড়ে দুআ করা। পূর্বে প্রকাশিত একটি পোস্ট থেকে এখানে কিছু আমল দেয়া হল। এইগুলোও ফলো করতে পারেন। ইন শা আল্লাহ উপকার পাবেন।
– নিম্নোক্ত দুয়াটি বেশি বেশি পাঠ করবেন। উঠা-বসা, চলা-ফেরা যেকোন সময়েই পড়তে পারেন।
رب إني لما أنزلت إلي من خير فقير
রব্বি ইন্নি..লিমা.. আং..ঝালতা ইলাইয়্যা মিন খইরিং.. ফাক্বি..র।
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার প্রতি যেই কল্যাণই নাযিল করবেন আমি সেটারই মুখাপেক্ষী।
– পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর সূরা ফুরকানের ৭৪ নং আয়াত পড়বেন।
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوٰجِنَا وَذُرِّيّٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
রব্বানা..হাব লানা..মিন আঝওয়াজিনা..ওয়া যু’র্রিয়্যা..তিনা..ক্বুর্রতা আঅ’য়ুনিউ..ওয়াজআ’লনা..লিলমুত্তাক্বিনা ইমা..মা..।
অর্থ: হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।
– প্রতিদিন ফজরের নামাযে পর يافتاح (ইয়া ফাত্তাহু) বাম হাতের উপর ডাম হাত রেখে আল্লাহর এই নামটি ৪০ বার পড়বেন। এভাবে ৪০ দিন পড়লে ইনশাআল্লাহ ফল পাওয়া যাবে। (পিরিয়ড থাকলেও এই আমল করবেন ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠে )
আর হ্যাঁ আগেই বলেছি যেকোন আমল বা দু’আ কবুলের পুর্বশর্ত হচ্ছে গুনাহ থেকে বাঁচা। তাই সকল প্রকার গুনাহ বাঁচুন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন।হারাম থেকে বাঁচুন। পর্দার মধ্যে থাকুন। আর রহমানুর রাহীমের দয়ার প্রতি ভরসা রাখুন। হতাশ হবেন না।আরেকটা কথা আপনারা সবাই জানেন কেউ যদি সরাসরি রুকইয়া করাতে চান সেক্ষেত্রে পর্দা আবশ্যক। বেপর্দা হয়ে আসলে রুকইয়াহ করা হয়না। তাহলে সেলফ রুকইয়াহ করার জন্য কি এই নিয়ম কোনই গুরুত্ব বহন করেনা?
[আরও কোনো পয়েন্ট মনে পড়লে লেখা হবে ইন শা আল্লাহ। প্রয়োজনীয় পরামর্শ ফলো করে যদি আমাদের আপডেট জানাতে চান তাহলে উপরে লিখে দিবেন “আপডেট পোস্ট”। এরপর যা লেখার লিখবেন ইন শা আল্লাহ ]
মন্তব্য করুন