——————
[ক]
বিসমিল্লাহ, এই সিরিজে আমরা রুকইয়াহ শারইয়াহ’র মধ্যে যেসব ভুল, আপত্তিকর কিংবা পরিহার্য বিষয় মিশ্রিত হয়, সেসব নিয়ে আলোচনা করবো। আল্লাহ চায় তো এতে আমাদের দেশে প্রায় বিস্মৃত যে সুন্নাহটির পুনর্জাগরণ হচ্ছে, এটি অনেক ভুল-ভ্রান্তি এবং নোংরামির হাত থেকে রক্ষা পাবে। আর যারা সাধারণ দ্বীনি ভাই-বোন যারা সচরাচর রুকইয়াহ নিয়ে খুব একটা ঘাটাঘাটি করেন না, শুধু প্রয়োজনের তাগিদেই রুকইয়াহ করেন, তারা এধরনের বিষয় কারও মাঝে দেখলে সতর্ক করে দিতে বা ওই রাক্বি থেকে পরহেজ করতে পারবেন।
[খ]
দ্বিতীয়ত: যেহেতু অনেকদিন পর আমরা একটা নতুন ধারাবাহিক শুরু করতে যাচ্ছি, এর ওপর আবার রমাযান বিভিন্ন ব্যস্ততা আছে, তাই হয়তো খুব দ্রুত একের পর এক সিরিজের লেখা আসবে না। তবে আমার চেষ্টা থাকবে দ্রুত করার, যাতে আগ্রহের রেশ বাকি থাকে। আর সাবলীল ও সংক্ষিপ্ত করার, আর অতিরিক্ত রেফারেন্স চর্চা থেকে বিরত থাকার, যাতে লেখক-পাঠক উভয়েই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
আল্লাহ যদি আগামীতে এটাকে দুই মলাটের মাঝে আনার তাওফিক দেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ রুকইয়াহ বইয়ের মত এখানেও পর্যাপ্ত রেফারেন্স এবং তাহকিক যুক্ত করে দেয়া হবে।
তৃতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যেহেতু ভুলভ্রান্তি নিয়েই আলোচনা। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এটা অনেকের মনকষ্টের কারণ হবে। হয়তো এই ভুলটা উনার নিজের মধ্যেই আছে অথবা উনি যার দ্বারা প্রভাবিত, তার মধ্যে আছে..।
এটাকে ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে, যদি সবার দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের দিকে তাকিয়ে একটু সবর করা যায়, সন্দেহজনক কিংবা আপত্তিকর বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যায়, তাহলে এটা আমাদের সবার জন্যই ভাল। এরপরেও বলবো, আমার দায়িত্ব শুধু সতর্ক করা, উম্মতের স্বার্থ খেয়াল রেখে কাজ করে যাওয়া, এরপর যার যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে।
চতুর্থ কথা হল, আমাদের এটা স্বীকার করতে হবে ‘আমরা মানুষ’ আমাদের ভুলত্রুটি হতেই পারে। অমুক ব্যক্তি অনেক ফেমাস শাইখ বলে, তার ভুল হবে না, অথবা তার সবকিছুই মেনে নিতে হবে; বাস্তবতা কিন্তু মোটেই এরকম না। সুতরাং এই সিরিজে আমরা ‘উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে অনেক ব্যক্তির দিকে আঙ্গুল তুলবো’। যেহেতু এখানে আমার আর্থিক বা দুনিয়াবি কোন স্বার্থ জড়িত নাই, শুধুমাত্র সুন্নাহ এবং উম্মাহর হিফাজতই উদ্দেশ্য। অতএব এর দ্বারা কেউ কষ্ট পেলে কিংবা আমাকে শত্রু মনে করলে এজন্য আমি আল্লাহর সাহায্য চাইছি, আর আল্লাহকেই সাহায্যের জন্য যথেষ্ট মনে করছি।
পঞ্চম কথা, আমরা এখানে এমন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো না, যেটা কারও ব্যক্তিগত সমস্যা। যার সাথে উম্মাহর স্বার্থ জড়িত নয়, কিংবা যে বিষয় পাবলিকলি প্রচার করা হয়নি। সুতরাং আলোচ্য বিষয় যেহেতু উম্মাহর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, অতএব আমার জন্য অনুমতি রয়েছে এটা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করার। সমস্যা যেহেতু পাবলিক প্লেসে এসেছে, অতএব প্রতিকারও পাবলিকলি হওয়াই উত্তম। যাতে উম্মাহর সামনে এটা দৃষ্টান্ত হিসেবে বিদ্যমান থাকে।
ষষ্ট বিষয়, যেহেতু গত দুই বছরে আমরা রুকইয়াহ শারইয়াহ এবং এতসংক্রান্ত অনেক বই পুস্তক এবং ব্যক্তির সাথে পরিচিত হয়েছি। এজন্য আমরা অনেক বই এবং ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে কথা বলব, যাদের/যেসব কন্টেন্ট অনলাইনে যথেষ্ট এভেইলেবল। তাই একান্ত অপারগতা না থাকলে, আলাদাভাবে এসবের পরিচয় বর্ণনা করব না।
সপ্তম এবং শেষ কথা হল, একটা ভয় থাকেই, এতসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে মানুষ রুকইয়াহ শারইয়াহ থেকে নিরুৎসাহিত হতে পারে। আমি বলব, ভাই! পিওর কাজ সামান্য হওয়া উলটাপালটা অনেক বেশি কাজ হওয়ার চেয়ে উত্তম। একটু রয়েসয়েই মানুষ রুকইয়াহ করুক, কম করুক, কিন্তু যেটাই করুক নির্ভেজাল হোক।
.
[গ]
আমরা আলোচনায় প্রবেশ করি…
আজ আমরা ছোট্ট তবে দিনদিন ছড়িয়ে যাচ্ছে, এমন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব, তা হল “একজনের জন্য অন্যজন রুকইয়াহ করা।” সম্ভবত এই জিনিসটা বেশি প্রচার হয়েছে মুফতি জুনাইদ সাহেবের লেকচার থেকে, উনি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, অথচ ঝুঁকির ব্যপারে সতর্ক করেননি।
যদিও উনার লেকচারগুলো অনুবাদ করেই এবিষয়ে আমার রুকইয়াহ বিষয়ে লেখালেখি শুরু…। পুরাতন ভাইব্রাদার-রা জানেন এটা।
কিন্তু আমি শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি, এটা যথাসম্ভব চেপে রাখতে। সব সমস্যাগুলো আমার সামনে আসেনি, তবুও কেন যেন পছন্দ হত না বিষয়টা। আলোচনার প্রয়োজনে এই প্রসঙ্গ এসে গেলেও খুব একটা হাইলাইট না করে, অল্প কথায় পার করে দিতাম। আমাদের রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপের সহকর্মী ভাইদেরও বলেছিলাম, যেহেতু এটায় বেশ কিছু সমস্যা আছে, তাই একান্ত অপারগতা না থাকলে অনুগ্রহ করে পাবলিকলি বলবেন না।
.
শুরুতে সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেই,
১. উপকার খুবই কম হয়। নিজে নিজে রুকইয়াহ করলে আল্লাহ চায়তো যে সমস্যা ৫-৭দিনে ভাল হয়ে যেত। সেটা ভালো হতে দুই তিন মাস লাগে।
.
২. যেহেতু সরাসরি সুন্নাহ থেকে মানকুল না, অতএব এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি।
যেমন: যে অন্যের নিয়াতে রুকইয়াহ করে, অধিকাংশ সময়েই সে ওই সমস্যাগুলোতে আক্রান্ত হয়ে যায়, যা রোগীর মধ্যে ছিল।
এটার প্রতিকার হল, একান্ত যদি করতেই হয়, তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত রুকইয়ার গোসল করা।
.
৩. এছাড়াও যে অন্যের জন্য রুকইয়াহ করছে, তার নিজের যদি জিন বা জাদু সংক্রান্ত সমস্যা থাকে। তাহলে অনেক সময় রোগীর মাঝে যে রুকইয়াহ করছে তার সমস্যাগুলোর প্রভাব দেখা যায়।
এর সমাধান হল, যার একটু বেশি সমস্যা আছে, সে পারতপক্ষে অন্য রোগীর জন্য রুকইয়াহ করবে না। এটা সরাসরিও না, দূর থেকেও না। বিশেষ ক্ষেত্রে অপারগতা হেতু যদি করতেই হয়, (যেমন স্বামীস্ত্রীর বিচ্ছেদের যাদু করা হয়েছে, দু’জন দুই যায়গায় অবস্থান করছে) তাহলে আগে নিজের জন্য রুকইয়াহ করে নিজের সমস্যা ভাল হওয়ার পর অন্যের জন্য রুকইয়াহ করবে।
আর অবস্থার কিছু উন্নতি হওয়া মাত্রই নিজে রুকইয়াহ বন্ধ করে, আসলে সমস্যা আছে যার; তাকে রুকইয়ার জন্য কনভিন্স করবে।
.
৪. যদি নিজের এবং অন্যের নিয়াতে একসাথে রুকইয়াহ করে। আর দুজনেরই বিভিন্ন রকমের সমস্যা থাকে। তাহলে মোটামুটি একটা জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। অতএব, ভাইজান এই পাগলামি ভুলেও কইরেন না! একশ গজ দূরে থাকেন।
তবে স্বামীস্ত্রীর বিষয়টা ভিন্ন, যদি দুজনের বিচ্ছেদের জন্য একসাথেই যাদু করা হয়, তখন যেহেতু সমস্যা মূলত একটাই। তাই এভাবে রুকইয়াহ করলে ফায়দা হয়, কিন্তু অগ্রগতি খুবই স্লো…। অতএব পারতপক্ষে ঝামেলায় না যেতে পারলেই সবচেয়ে ভাল।
.
৫. একান্ত অপারগতা হেতু অন্যের জন্য রুকইয়াহ করতে হলে পারতপক্ষে অডিও তিলাওয়াত না শুনে, নিজেই তিলাওয়াত করা, আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া / সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত রুকইয়ার গোসল করা গতানুগতিক রুকইয়ার চেয়ে তুলনামূলক ভাল।
.
[ঘ]
মাস কয়েক আগে, ইয়েমেনের এক শাইখের সাথে কথা হচ্ছিল, উনি নাকি মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রহ. এর থেকে কিছুদিন ইস্তিফাদা করেছেন। আল্লাহু আলাম! উনি অন্যের জন্য রুকইয়াহ করার বিষয়টা শোনার পর এটাকে বিদআত বলে দিয়েছেন পুরা!
আমি কিছুক্ষণ হ্যাং হয়ে থাকলাম উনার কথা শোনার পর।
পরে বুঝতে পারলাম যে, উনি রুকইয়াহ-কে চিকিৎসা হিসেবে না গণ্য করে, নামাজ-রোজা, হজ্জ ইত্যাদির মত ইবাদাতে মাখসুসাহ ক্যাটাগরিতে ফেলে বিধান বর্ণনা করেছেন। এটা আবার আরেক ভুল! কি বিপদ…
ইনশাআল্লাহ এটা নিয়ে আমরা আরেকদিন আলোচনা করব।
—–
ক্রমশঃ
মন্তব্য করুন