Ruqyah Support BD

সুরা ফালাক-নাস প্রসঙ্গ : গুরুত্ব, ফজিলত ও রুকইয়ার পদ্ধতি

[ক]
দোয়া হিসেবে, রুকইয়াহ হিসেবে, হেফাজতের আমল হিসেবে সুরা ফালাক ও নাস-কে নবীজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী পরিমাণ গুরুত্ব দিয়েছেন এটা আমাদের কল্পনার অতীত।
আমাদের অনেক ভাই চিন্তা করেন, রুকিয়া করার জন্য অনেক অনেক আয়াত জানা দরকার, অনেক দোয়া মুখস্ত থাকা দরকার, অথবা প্রত্যেক খুঁটিনাটি সমস্যার জন্য ভিন্ন ভিন্ন আয়াত দরকার। এই ভ্রমের পেছনে পড়ে হীনমন্যতায় ভোগেন। নিজে নিজে রুকইয়া করার সাহস পাননা। পেশাদার রাকিদের কাছে ছোটেন। কিংবা ইউটিউবে খুঁজে প্রতিদিন নতুন নতুন রুকইয়ার অডিও শোনেন।
ভাই! নিজের অভিজ্ঞতা বলি? আমাদের উস্তাযদের দেখেছি সুরা ফালাক নাসের অনেক গুরুত্ব দিতে, কেউ কেউ বলতেন মানুষের জন্য রুকইয়া করতে চাইলে প্রথমে লম্বা সময় শুধু আয়াতুল কুরসি আর তিনকুল পড়েই রুকইয়া করো। এরপর অন্য কিছু। শুরুতে এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ মনে হয়নি। কিন্তু কয়েকবছর পড়াশোনা এবং রুকইয়া করে দুনিয়া দেখার পরে বুঝেছি আসলে ওটাই ভাল পরামর্শ ছিল।

[খ]
কিভাবে রুকইয়া করবেন?
আপনি শুধু নিয়ত করবেন, কিসের জন্য রুকইয়া করতে চান। কোন সমস্যা থেকে আরোগ্য চান। এরপর এই সুরাগুলো পড়বেন। ৩বার, ৭বার, ১০বার। যতবার ইচ্ছা। চাইলে একটা সুরা ৩বার/৭বার করে পড়তে পারেন, চাইলে সবগুলো একবার করে পড়ে আবার প্রথম সুরা থেকে পড়তে পারেন। পড়ে পড়ে নিজেকে ফুঁ দিবেন। তেল বা পানিতে ফুঁ দিয়ে খাবেন, ব্যবহার করবেন। ব্যস এটাই। প্রতিদিন পড়েন। সমস্যা বেশি হলে প্রয়োজনে কয়েক বেলা পড়েন। প্রয়োজনে ডাক্তারের চিকিৎসা নেন, সাথে এগুলো পড়ে পড়ে রুকইয়া করেন।
ভাই আমার, আপনি যদি ইয়াকিনের সাথে রুকইয়া করেন। সুস্থতার জন্য আল্লাহর দিকে মনযোগী হন। আপনার জন্য সকালসন্ধ্যার দোয়াগুলো, আয়াতুল কুরসি আর তিনকুল পড়ে রুকইয়া করলেই অনেক! পড়ার পাশাপাশি আপনি চাইলে রেকর্ড রুকইয়ার অডিও হিসেবেও শুনতে পারেন।
মাসনুন রুকইয়া ঝুঁকিহীন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। উপকার দীর্ঘমেয়াদি। আর ইনশাআল্লাহ আখিরাতের প্রতিদান বিবেচনাতেও এটা বেশি ভারি হবে।

[গ]
যাহোক, চলুন এবার আমরা কিছু হাদিস পড়ি –

১. তিরমিযির একটা হাদিস আছে, “আবূ সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বে জিনের ক্ষতি থেকে এবং মানুষের বদনজর থেকে আশ্রয় চেয়ে দুআ করতেন। (নাসাঈর বর্ণনায় আছে, নবীজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে জিনের বদনজর এবং মানুষের বদনজর থেকে আশ্রয় চেয়ে দুআ করতেন।)
এক সময় সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাজিল হলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলোকে গ্রহণ করলেন এবং অন্য সবকিছু বাদ দিলেন।”

২. নাসাঈর আরেকটা হাদিস আছে, একই অধ্যায়ের।
আবদুল্লাহ্ ইবন খুবাইব তাঁর পিতার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি মক্কার পথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নির্জনে পেয়ে তাঁর নিকট গেলাম। তিনি বললেন, বল। আমি বললাম, কি বলবো? তিনি বললেন, বল, আমি বললাম কি বলবো? তিনি বললেন, বল, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার…। (কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক।) তিনি পুরোটা পড়লেন। এরপর বললেনঃ কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস। এই সূরাও শেষ করলেন। আমিও উনার সাথে সাথে পড়লাম। এরপর তিনি বললেনঃ এ দু’টির চেয়ে উত্তম কিছু দিয়ে মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে না। (অন্য বর্ণনায় আছে, এগুলোর চেয়ে উত্তম আশ্রয় চাওয়ার মাধ্যম কেউ অনুসরণ করে না।)

৩. আরেকটা হাদিস আছে,
ইবন আবিস জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ হে ইবন আবিস! যা দ্বারা লোকেরা আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে, এদের মধ্যে যেটা সবচেয়ে উত্তম, তা কি আমি তোমাকে বলবাে না? সাহাবি বললো, হ্যাঁ অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
তিনি বললেনঃ তা হলো, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস -এই দু’টি সূরা।
….
৪. নাসাঈর আরেকটা হাদিস,
উকবা ইবন আমের রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উপর কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়েছে, যার মত আর কোন আয়াত দেখা যায় না, আর তা হলো ’কুল আউযুবি রাব্বিল ফালাক’ শেষ পর্যন্ত এবং কুল আউযুবিরাব্বিন নাস’ শেষ পর্যন্ত।
…..
৫. শেষের এটা তিরমিযির হাদিস, নাসাঈতেও আছে,
“আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক বর্ষণমুখর অন্ধকার
রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুঁজতে বের হলাম, যেন তিনি আমাদের নিয়ে
সালাত পড়েন। তার সাথে যখন সাক্ষাৎ হলো, তিনি বললেন, ‘قُلْ’ (বলো)। আমি নিশ্চুপ
থাকলাম। তিনি আবার বললেন, ‘قُلْ’। আমি নিশ্চুপ থাকলাম। তিনি আবার বললেন, ‘قُلْ’। আমি তখন বললাম, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! কী বলব?
তিনি বললেন, ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ..’ ’কুল আউযুবি রাব্বিল ফালাক..’ ‘কুল আউযুবিরাব্বিন নাস..’ — সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার। এটা সব কিছু থেকে তোমার হেফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে।”
….
উল্লেখিত সবগুলো হাদিসের মান সহিহ।
আল্লাহ আমাদের বুঝার ও মানার তাওফিক দিন। আমিন।


بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

সুরা ফালাক 

قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ﴿۱﴾ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ﴿۲﴾ وَ مِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ﴿۳﴾ وَ مِنْ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِی الْعُقَدِ ﴿۴﴾ وَ مِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ ﴿۵﴾

সুরা নাস

قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ﴿۱﴾ مَلِكِ النَّاسِ ﴿۲﴾ اِلٰهِ النَّاسِ ﴿۳﴾ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ ۙالْخَنَّاسِ ﴿۴﴾ الَّذِیْ یُوَسْوِسُ فِیْ صُدُوْرِ النَّاسِ ﴿۵﴾ مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ ﴿۶﴾

মন্তব্য করুন