Ruqyah Support BD

সূরা বাক্বারার গুরুত্ব ও উপকারিতা

অনুবাদ: আলী আহসান মারুফ রহ.

– সুরা বাকারা জিন শয়তানকে বিতাড়িত করে।
– আল্লাহর ইচ্ছায় এই সূরা যাদু বিনষ্ট করে।
– এই সূরা বদনজরের সমস্যা দূর করে। বিশেষত এই সূরার শেষ দুই আয়াত।

আল কুরআন সম্পূর্ণটাই শরীর ও মন-মস্তিষ্কের জন্য শিফা। তবুও বিশেষভাবে এই সূরার ফজিলতে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু ফজিলত উল্লেখ করছি-

১/ এই সূরা আকড়ে ধরা, নিয়মিত তিলাওয়াত করা এবং একে নিয়ে চিন্তাভাবনা করা ব্যক্তির নিজের ও তার পরিবার পরিজন, ধনসম্পদ ও ঘরবাড়ির জন্য বারাকাহ স্বরূপ।

২/ এটি যাদু ও যাদুর উপকরণ বিনষ্টকারী, এবং যাদু থেকে রক্ষার জন্য এই সূরা দূর্গের ন্যায় কাজ করে।

এব্যাপারে আরও হাদিস জানতে চাইলে হাদিসের কিতাব সমূহ যেমনঃ আত তারগীব, শরহুস সুন্নাহ কিংবা এজাতীয় কিতাব সমূহ দেখা যেতে পারে।

এছাড়া সহীহ মুসলিমে বর্নিত হয়েছে রাসূল সাঃ বলেছেন, “তোমরা তোমাদের ঘরসমুহকে কবরস্থান বানিয়ে রেখো না। নিশ্চয়ই যে ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা হয় শয়তানে সেই ঘর হতে পলায়ন করে।”

ঘর বাড়ি, সন্তান সন্ততি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য এই সূরা বারাকাহ স্বরূপ। এই বারাকাহ তাদেরই অর্জিত হয় যারা নিয়মিত এই সূরা তাদের ঘরে তিলাওয়াত করে, মেনে চলে এবং তা নিয়ে চিন্তাফিকির করে।
এব্যাপারে সহিহ মুসলিমে একটি হাদিস রয়েছে, “তোমরা সুরা বাকারা তিলাওয়াত করো, কারণ এটি আকড়ে ধরা বারাকাহ, একে ছেড়ে দেয়া ক্ষতিগ্রস্থতা এবং বাতিল শক্তি কখনো এর সাথে পেরে ওঠে না।“ এখানে বাতিল শক্তি দ্বারা যাদু উদ্দেশ্য।

সহিহ ইবনে হিব্বান ও মুসতাদরেকে হাকিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাঃ বলেছেন,”প্রতিটি জিনিসেরই একটি কূজ/চূড়া রয়েছে। সূরা বাকারা হচ্ছে কুরআনের চূড়া। কেউ যদি এক রাতে এই সূরা তার গৃহে তিলাওয়াত করে তাহলে শয়তান তিন রাত পর্যন্ত তার ঘরে প্রবেশ করতে পারে না।“
ইমাম হাকিম রঃ এই হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন এবং আলবানী রঃ একে হাসান বলেছেন।

এছাড়াও বুখারী শরিফে আবু মাসউদ রা.এর সূত্রে বর্নিত হয়েছে যে, রাসূল সাঃ বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলা এই সূরার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করবে তার জন্য সেটি যথেষ্ঠ হবে।”

এছাড়াও এই সূরায় রয়েছে আয়াতুল কুরসি। এর ফজিলতে অনেক হাদিস রয়েছে।

নাসায়ী ও জামে’ সগীরে বর্নিত আছে, রাসূল সাঃ বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত করে, মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই তার জান্নাতে প্রবেশের পথে বাধা নেই।” (এর সনদও সহীহ)

ইমাম তাবরানী ও নাসায়ি রঃ এর সূত্রে আত তারগিবে আলবানী রঃ আরেকটি হাদিস উল্লেখ করেছেন।
“যে ব্যক্তি সন্ধায় আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করবে সে সকাল পর্যন্ত জ্বিনের অনিষ্ট থেকে হিফাজতে থাকবে। আর সে ব্যক্তি সকালে তা তিলাওয়াত করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত জ্বিনের অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে।“

আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমলের তাওফিক দান করুক। আমিন।


সংযুক্তি – এটি সুস্থতার নিয়তে নিজে নিজে তিলাওয়াত করা বা শোনা যায়, আর সরাসরি রুকইয়াহ করার সময়েও এই সুরা পাঠ করে ফুঁ দেয়া যায়। জিন, জাদু, বদনজর আক্রান্তরা সবাই এই সুরা দ্বারা রুকইয়াহ করতে পারেন। যাদের জিন-জাদুর সমস্যা অনেক পুরনো বা জটিল, কিংবা অন্যান্য রুকইয়াহ করে খুব একটা ফায়দা পাচ্ছেন না, তারা প্রতি রাতে সুস্থতা ও নিরাপত্তার নিয়তে সুরা বাকারা তিলাওয়াত করার অভ্যাস গড়তে পারেন। দৈনিক পুরোটা শেষ করতে পারলে তো অনেক ভালো, নাহলে প্রতি তিন-চারদিনে একবার শেষ করার চেষ্টা করুন, এতেও উপকার হবে। শুরুতে কিছুটা সময় লাগলেও ক’দিন গেলে একদম সহজ হয়ে যাবে। প্রতিদিনের তিলাওয়াত শেষে চাইলে দোয়া করতে পারেন, এছাড়াও চাইলে পানি-তেল ইত্যাদি সাপ্লিমেন্টে ফুঁ দিয়ে রেখে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।


আরবি একটি প্রবন্ধ থেকে লেখাটি অনুবাদ করেছিলেন ‘আলী আহসান মারুফ’ ভাই। রহিমাহুল্লাহ। পরে সামান্য পরিমার্জন করা হয়েছে। মারুফ ভাই গতকাল (২৪.০৭.২০২৩) বাশবাড়িয়া সমুদ্রে গোসল করতে গিয়ে মারা গেছেন। নবীজি স. বলেছিলেন, যে পানিতে ডুবে মারা যায় সে শহিদ। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ তা’আলা যেন উনার সব ভুলত্রুটি মাফ করে দেন। আমাদের ভাইকে জান্নাতে সিদ্দিক, শুহাদা ও সালিহিনদের সাথে রাখেন। আমিন।

মন্তব্য করুন