Ruqyah Support BD

প্রসাব-পায়খানা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায় পরামর্শ

যারা প্রতিদিনের প্রাকৃতিক প্রয়োজন স্বাভাবিকভাবে পূরণ করতে পারে, তথা কোনো সমস্যা ছাড়াই নিয়মিত প্রসাব পায়খানা করতে পারে, তারা আসলে অনেক বড় নিয়ামতের মাঝে আছে। আমরা আজকে এসংক্রান্ত কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের অনুরোধ থাকবে আপনার সমস্যার জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দেয়া পরামর্শের পাশাপাশি আমাদের এই টিপসগুলো ফলো করুন। রুকইয়াহ বিষয়ক পরামর্শের বাইরে অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের কথাকে প্রাধান্য দিন।

[ক]

ইউরিন ইনফেকশন এই সময়ে খুবই কমন একটা সমস্যা, এই সমস্যার জন্য অনেকে দীর্ঘদিন ঔষধ খেয়েও সমস্যা যায় না। কিছু পরামর্শ কাজে লাগবে ইনশাআল্লাহ –
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন। তবে অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক পরিমাণ পানি খাবেন না। শরীর স্বাভাবিক রাখতে যতটুকু প্রয়োজন হয় ততটুকু খাবেন।
২. বাইরের হাবিজাবি, ভাজাপোড়া, জাঙ্কফুড খাওয়ার অতিরিক্ত অভ্যাস থাকলে কমাতে চেষ্টা করুন। চিনি অথবা চিনিওয়ালা খাদ্য-পানীয় পারলে একদম এড়িয়ে চলুন। বিকল্প খুজে নিন।
৩. অনেকের প্রসাবের সমস্যা-ই ইনফেকশনের জন্য হয় না, বরং নিচের পেলভিক ফ্লোর দূর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে হয়। এক্ষেত্রে ইনফেকশনের জন্য ঔষধ খেয়ে বিশেষ কোনো লাভ পাবেন না। বরং কেগেল ব্যায়ামের ব্যাপারে ভালোভাবে জেনে নিন, এটা প্রতিদিন করতে পারেন। যথেষ্ট উপকার হবে ইনশাআল্লাহ।

৪. পর্ণ-মাস্টারবেশন জাতীয় গুণাহে আসক্ত হলে অবশ্যই এটা ছাড়তে হবে। নইলে শুধু প্রসাবের সমস্যা না, আরও কতরকম ক্ষতি যে হতে পারে আপনার কল্পনাতেও নাই।
এবিষয়ে “মুক্ত বাতাসের খোজে” বই এবং “পর্নোগ্রাফি: মানবতার জন্য হুমকি” পেইজের লেখাগুলো সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। (আরও কিছু পরামর্শের জন্য এখানে ক্লিক করুন)

৫. ইউরিন ইনফেকশনের জন্য একটা রুকইয়াহ করতে পারেন, এটা শুধু ইউরিন না, অন্যান্য রোগের ইনফেকশনেও অনেক উপকারী –
“সুরা ফাতিহা, বাকারার ১০৬-১০৭ নং আয়াত, সুরা আলাম নাশরাহ” এগুলো ৩/৭বার। “আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস এবং ৬টি আয়াতুশ শিফা” – ৩বার করে পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে রাখুন। (বৃষ্টি বা জমজমে পানি হলে বেশি ভালো)। প্রতিদিন ২-৩ বেলা কয়েক সপ্তাহ এই পানি আল্লাহর নামে পান করুন। তলপেটে হাত রেখে মাঝেমাঝে আয়াতগুলো পড়ুন। ইনশাআল্লাহ অনেক উপকার হবে।

৬. টয়লেটে ঢোকা এবং বের হওয়ার দোয়া পড়ুন।

৭. গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করবেন না। ডাক্তার দেখান, ব্যায়াম করুন, রুকইয়াহ করুন আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকুন। যাদের সমস্যা ভালো হতে দেরি হচ্ছে, তারা অবশ্যই আলেমদের থেকে প্রসাব সংক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কি কি মাসয়ালা আছে জেনে নিন।
আল্লাহ যেন আপনাকে শিঘ্রি সুস্থতা দান করে। আমিন।

[খ]
অনেক সময় বাচ্চাদের প্রসাব বন্ধ হয়ে থাকে, কয়েকদিন যাবত প্রসাব হয় না। এক্ষেত্রে সুরা ফাতিহা এবং আয়াতে শিফা পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে খাইয়ে দেয়া উপকারী।
আয়াতে শিফা হচ্ছে— সূরা তাওবাহ:১৪, সূরা ইউনুস:৫৭, সূরা নাহল:৬৯, সূরা বনি ইসরাইল:৮২, সূরা শুআরা:৮০, সূরা হা-মীম সাজদা:৪৪ নং আয়াত। {পিডিএফ ডাউনলোড}

অনেকের ক্ষেত্রে মানসিক একটা কৌশল উপকারী হয়, প্রথমত বাচ্চাকে টয়লেটে বসাবেন। এরপর পানির ট্যাপের দিকে তাকাতে বলে আস্তে করে ট্যাপ ছেড়ে দিবেন। বাচ্চাকে বলবেন এদিকে তাকিয়ে থাকতে, ওইটা দেখতে দেখতে আল্লাহ চায়তো কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাচ্চার ট্যাপও চালু হয়ে যাবে!!

[গ]
এটা বড় ছোট সবার জন্যই, অনেকের পায়খানা বন্ধ হয়ে থাকে। পেটব্যাথা ও গ্যাস করতে থাকে, কিন্তু পেট পরিস্কার হয় না। এক্ষেত্রে “রাতে ঘুমের আগে প্রথমে একগ্লাস গরম দুধ, এরপর এক গ্লাস স্বাভাবিক পানি খেলে” আল্লাহ চায়তো ঠিক হয়ে যায়। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ল্যাক্সেটিভ হার্বস-মেডিসিন গ্রহণ করুন। (যেমন, অনেকে নিয়মিত ইসুবগুলের ভুসির শরবত খেতে বলেন, এর সাথে এক চিমটি সোনাপাতার গুড়া মিশিয়ে। তবে জটিল কোনো রোগ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সোনাপাতা দেয়া যাবে না।)

জাদু সংক্রান্ত সমস্যার জন্য এরকম টয়লেট বন্ধ হলে বরই পাতার গোসল দিতে পারেন পরপর ৩দিন, ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট ফায়দা পাবেন।
বরই পাতার গোসলের নিয়ম: ৭টা বরই পাতা শিল-পাটাতে ভালোভাবে বেটে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস- সব তিনবার করে পড়ে ফুঁ দিন। এর সাথে সম্ভব হলে সিহরের আয়াতগুলোও পাঠ করুন। এবার বরইপাতাগুলো গোসলের পানিতে গুলিয়ে তিনঢোক পান করুন, আর গোসল করুন। এভাবে পরপর কয়েকদিন গোসল করা যেকোনো জাদুর সমস্যায় খুব উপকারী। সালাফে সালেহীনদের সময় থেকে বরই পাতার গোসল অনেক প্রসিদ্ধ।

[ঘ]
ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে বলা যাক, এটা অনেক সময় বদনজরের জন্য হতে পারে। বিশেষত যদি দেখেন ডায়রিয়া হওয়ার মত তেমন কিছুই হয়নি, তবুও সমস্যা হচ্ছে, অথবা সমস্যা হওয়ার পর ঔষধ খাচ্ছেন, তবুও ভালো হচ্ছে না। এমন ক্ষেত্রে সপ্তাহখানেক বদনজরের রুকইয়াহ করা উচিত।
বদনজরের রুকইয়ার নিয়ম:
১. বদনজর evil eye – রুকইয়াহ শোনা (রুকইয়াহবিডি.অর্গ ওয়েবসাইটে আছে)
২. সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, তিনকুল, দরুদ – সব ৩/৭বার করে পড়ে পানি খাওয়া আর গোসল করা।
এভাবে সপ্তাহখানেক করলে উপকার হবে ইনশাআল্লাহ।

দোয়া করি, আল্লাহ আমাদের এধরণের সকল সমস্যা থেকে দূরে রাখুক, যারা এসব সমস্যায় ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে কষ্ট পাচ্ছেন, আল্লাহ তাদের পূর্ণ সুস্থতা দান করুক। আমিন।

মন্তব্য করুন