লিখেছেনঃ উম্মে আব্দুল্লাহ
আপনারা যারা রুকিয়া সম্পর্কে জানেন বা রুকিয়া সাপোর্ট গ্রুপে আছেন তাদের অনেকেই হয়তো দেখেছেন, রুকিয়া বিষয়ে সাজেশন দেয়ার পর কেউ কেউ বিভিন্ন প্যারানরমাল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষত: জ্বিন ঘটিত সমস্যায় এই ধরনের সমস্যা ফেস করেছে, তখন নিজেদের সমস্যা কাটানোর জন্য আবার রুকিয়া করতে হয়েছে। যারা এ ধরনের সমস্যা ফেস করেছেন তারা নিশ্চয় বুঝে গেছেন যে রাক্বী এবং রুকিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টদের কত ধরনের সমস্যা ফেস করতে হয়, নিজেদের শারীরিক ও মানষিকভাবে কতটা প্রস্তুত থাকতে হয় এবং এই বিষয়গুলা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
ফ্যান্টাসি থেকে বেরিয়ে এসে রুকইয়াহ বিষয়ের বাস্তবতা আমাদের বুঝা উচিত। এটা হরর মুভি, সিরিয়াল বা এফএম রেডিওর অনুষ্ঠানের মত বিনোদনের বিষয় না। বরং শয়তানের সাথে হেড টু হেড ফাইটের চরম বাস্তবতা।
নিজের কথাই বলি, কাউকে এইসব বিষয়ে সাজেশন দেয়ার আগে অবশ্যই আমাকে ভাবতে হয়, আজকের মাসনুন আমলগুলো করেছি তো? আচ্ছা! যারা প্রতিনিয়ত আপনাদের বিভিন্ন সাজেশন দিয়ে সহায়তা করছেন তারা কি কোন সমস্যাই ফেইস করেন না? নাকি তারা মানুষ না? নাকি তাদের জন্মই হয়েছে এসব সার্ভিস দেয়ার জন্য? ভুলে যাবেন না। তারাও মানুষ। তাদের ব্যক্তি এবং পারিবারিক জীবন আছে। পরিবার আছে। আর আছে অন্যদের মত প্রতিদিনের ব্যস্ততা।
একটা বিষয় খেয়াল করেছি গ্রুপে পোষ্ট দেয়ার পর এপ্রুভ হতে দেরী হলেই অনেকে এডমিনদের ম্যাসেজ দেয়া শুরু করেন, আমাকেও ইনবক্স করেন। ব্যাপারটা বেশ খারাপ লাগে। একটু ধৈর্য ধরেই দেখুন, উত্তর পান কিনা। এতে আপনারই লাভ। আপনি একটা সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যাবেন।
আরও অনেকের অবস্থা হচ্ছে, গ্রুপে পোষ্ট করেন, পরামর্শ দেয়ার পরে আপডেট জানাতে বললে আর খোঁজ পাওয়া যায় না। আপনি যদি নিশ্চিতই থাকেন যে, আপনি এইগুলা ফলো করতে পারবেন না। তাহলে পোস্ট দেয়ার কি দরকার? এতে তো আপনারই কোন দ্বীনি ভাই অথবা বোনের উত্তরটা পিছিয়ে যাচ্ছে, যিনি আপনার চেয়েও বেশি গুরুতর সমস্যা ফেস করছেন। আগে নিজের মনকে স্থির করুন যে আপনি এডমিনদের দেয়া সাজেশন পুরোটা ফলো করবেন, এরপর গ্রুপে পোস্ট দিবেন প্লিজ।
আরেকটা কষ্টের বিষয় হচ্ছে, অনেকে বোধহয় বাংলাই ঠিকমত পড়তে পারেন না। অথবা ইচ্ছে করেই পড়েন না। যেমন ধরেন, পোস্ট দিয়ে বলা হল আপাতত পোস্ট অপশন বন্ধ থাকবে কারণ অনেক পোস্ট জমা পড়ে আছে। তখন আপনি ওখানেই কমেন্ট করা শুরু করলেন, পোস্ট দেয়া যাচ্ছে না কেন?
আবার বলা হল কেউ ইনবক্স করবেন না প্লিজ। পোস্টটা দেখার পরেই আপনি ইনবক্সে যেইটা বলতে চেয়েছিলেন তা কমেন্টে বলে ফেললেন। উত্তর না পেলে আবার সেই ইনবক্স।
এখন কথা হচ্ছে সবাই যদি কমেন্টে আর ইনবক্সে সমাধান চান তাহলে গ্রুপে পোস্ট অপশনটা কেন আছে বলতে পারেন???
এখন আপনি বলতে পারেন, সমস্যা আছে বলেই তো ইনবক্সে বলতে চাচ্ছি। আমার পরিচিত অমুক-তমুক গ্রুপে আছে, আমি পোস্ট করলে তারা দেখে নিবে।
তাহলে বলবো একটা ফেইক আইডি খুলে ফেলেন। এইটার জন্য এখনো জুকার মামু প্রমাণপত্র চাওয়া শুরু করেনি। সুতরাং একটা আইডি খুলতে খুব বেশি সমস্যা হবেনা আশা করি। না পারলে কোন ফ্রেন্ডের সহায়তা নেন, নইলে গুগলে সার্চ করেন “কিভাবে ফেসবুক আইডি খুলতে হয়।” এছাড়া এব্যাপারে এডমিন ভাইরা এর আগেও বহুবার পোস্ট দিয়েছেন। সেসব ফর্মুলাও ফলো করতে পারেন।
এখন আপনি হয়তো বলবেন, ইনবক্সে একটু সল্যুশন দিলে কি হবে? একটু ভেবে দেখুন তো আপনার মত আরো কতজন এ ধরনের ইনবক্স করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। আচ্ছা ঠিক আছে দয়াপরবশ হয়ে আপনাকে ইনবক্সে সমাধান দেয়া হল। এরপর আপডেটটা কই জানাবেন? আরে ভাই নিজের ভালো তো পাগলেও বুঝে, অথচ আপনি বুঝতে চাইছেন না। পোস্টে আপনার সমস্যা জানান, নিয়মিত আপডেট দিন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সল্যুশন নিন, একটা সিস্টেমের মধ্যে থাকেন।
আপডেটে দেখি এই রুকিয়া শুনেছি ওই রুকিয়া শুনেছি, ডিটক্স করেছি কিন্তু তেমন কিছুই বুঝিনি। আচ্ছা মানলাম সমস্যা সমাধানের জন্য সব ঠিকঠাক মত করেছেন। কিন্তু একবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন তো-
- একজন মুসলমান হিসেবে আমার উপর যে দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো ছিল, যেগুলা আমাদের জন্য ফরজ ছিল সেগুলো কি ঠিকমত পালন করেছি?
- গুনাহ থেকে বেঁচেছি??
- পুর্বেকৃত গুনাহের জন্য ইস্তিগফার করেছি?
- কুর’আন,সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালিত করছি?
- নিজের আমল-আখলাককে উন্নত করার চেষ্টা করেছি??
কারণ, রুকিয়ার মাধ্যমে শুধু শারীরিক ব্যাধি তো না! আত্মার ব্যাধিরও সমাধান মিলে, ইনশাআল্লাহ.. এজন্যই এসব খোজ নেয়া দরকার, আমি কি আসলেই রুকইয়াহ থেকে ফায়দা পাওয়ার উপযোগী? না হলে, উপযোগী হওয়ার চেষ্টা করছি কি? আর একজন মুসলিমের জন্য শারীরিক ব্যাধির থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আত্মার ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ। তাই আগে নিজের আত্মাকে পবিত্র করুন। নিজের ঈমান-ইয়াক্বিনকে বিশুদ্ধ করুন। আখলাককে উন্নত করুন। দেখবেন সমস্যাগুলো নিজে থেকেই পালাতে শুরু করবে। জীবনে সুকুন নেমে আসবে ইনশাআল্লাহ!
আপুদের দেখি সমস্যা বলার সময় বলেন আমি নামাজ পড়ি, পর্দা করি তারপরেও এত সমস্যা ক্যান? আপনি কি নামাজ, পর্দা এগুলো সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য করছেন? নাকি রব্বুল আ’লামীনের সন্তুষ্টির জন্য করছেন? যদি তাই হয় তাহলে এমন প্রশ্ন কেন?
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে এইটা দুনিয়ার জীবন। এখানে রব্বুল আ’লামীন রোগ-শোক, বিপদের দ্বারা বান্দার পরীক্ষা নিবেন। কখনও তা গুনাহ মাফের কারণ হবে, কখনো রবের সান্নিধ্য লাভের উছিলা, আর কখনো আখিরাতের উত্তম প্রতিদানের আসবাব।
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা’আলা যার কল্যাণ চান তাকে দুঃখ-কষ্টে পতিত করেন।” সুতরাং নিরাশ না হয়ে, তাঁর দিকে আঙুল না তুলে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য আমল করে যান। রুকিয়ার ইফেক্ট হবেই ইনশাআল্লাহ।
সম্ভবত: সবথেকে বেশি যে প্রশ্নটা করা হয়, তা হল, “যাদু, জ্বিন এইগুলোর ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য পার্মানেন্ট উপায় কি?”
উত্তর একটাই! দুনিয়ার জীবনটাই তো ক্ষণস্থায়ী। এখানে আপনি চিরস্থায়ী সমাধান চান কি করে! চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য আপনাকে জান্নাতের ফিকির করতে হবে। তবে হ্যাঁ ক্ষণস্থায়ী জীবনের নানা সমস্যার সমাধান এবং সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় বিশ্বমানবের শিক্ষক নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লাম আমাদের শিখিয়ে গেছেন। আর তা হচ্ছে কুর’আন সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা। তিনি শিখিয়ে গেছেন কোন কাজ শুরুর আগে কি দু’আ পড়তে হয়। যাদু, জ্বীনসহ বিভিন্ন বালা মুসিবত থেকে বাঁচার জন্য কোন কোন আমল করতে হয়। সেগুলো অনুসরণ করলেই এইসব বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
তবে হ্যাঁ, ইতোমধ্যে যদি আপনি যাদু-জ্বিন দ্বারা এফেক্টেড হয়ে যান তাহলেও কুর’আন, সুন্নাহ মেনে রুকিয়া করলে/করালেই রব্বুল আ’লামীনের ইচ্ছায় শিফা লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ। এজন্য আপনার দরকার ঈমান, ইয়াক্বীন, নিয়ত, মেহনত, গাইডলাইন আর ক্ষেত্র বিশেষে একজন অভিজ্ঞ রাক্বী। গাইডলাইন ও রাক্বী আপনারা গ্রুপেই পাবেন ইনশাআল্লাহ। বাকিগুলোর দায়িত্ব আপনার নিজের।
রব্বুল আ’লামীন আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং কুর’আন ও সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালিত করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)
মন্তব্য করুন