Ruqyah Support BD

সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে কিছু কথা…

বিসমিল্লাহ। ডাক্তারদের মতে সিজোফ্রেনিয়া একধরনের মারাত্মক মানসিক রোগ যা মানুষের চিন্তা, আচরণ, শারীরিক ক্ষমতা, বোধশক্তিতে অস্বাভাবিক প্রভাব ফেলে। মানে অনুভূতি আর স্বাভাবিক মানুষের মত থাকেনা। ডাক্তাররা সিজোফ্রেনিয়া কোন টেস্ট দিয়ে নির্ণয় করতে পারেন না। রোগীর বিভিন্ন লক্ষণ, রোগীর সাথে ইন্টারভিউ এসব থেকে তারা এটা শনাক্ত করেন। সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষ্যণীয় ব্যপার হল, রোগী কোনকিছু দেখছে বা শুনছে যা অন্যরা দেখেনা/শুনেনা।

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির কিছু লক্ষণ দেখা যাক,
১। অহেতুক একা একা কান্নাকাটি অথবা হাসাহাসি করা। কোন বস্তুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা অথবা এমনিতেই দীর্ঘ সময় একজায়গায় অবস্থান করা।
২। কোন শব্দ শুনতে পাওয়া যেটা একমাত্র রোগীর কানেই আসে। কখনো এক বা একাধিক কন্ঠ শুনতে পারে। এসব কন্ঠে তাকে কোন নির্দেশ দেয়া হচ্ছে অথবা কোন খবর অথবা এমনিই কোন অর্থহীন শব্দ থাকতে পারে। কখনো মনে করে তাকে বিশেষ কোন মেসেজ দেয়া হচ্ছে যেটাতে কোন নির্দেশ বা করণীয় সম্পর্কে বলা আছে। যেমন হঠাৎ করে তাকে বলা হল বা তার মাথায় পুশ করা হল যেন সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
৩। সন্দেহজনক চিন্তা আসা, যেমন- আশেপাশে শত্রুরা ওঁৎ পেতে আছে আক্রমণ করার জন্য, পুলিশ/গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন আশেপাশে ঘুরছে। এজন্য সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকা।
৪। কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের শত্রু মনে করা, এসব ব্যক্তি তাকে এবং তার পরিবারের লোকদের মেরে ফেলতে চায় এমন চিন্তা আসা। চিন্তা বলতে এটাকে খুবই সিরিয়াসলি নেয়া এবং সেই অনুযায়ী সতর্ক এবং ভয়ে ভয়ে থাকা। এসব শত্রুদের তালিকায় নিজের স্ত্রী সন্তানরাও থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন শত্রু অদৃশ্য কেউ হয়।
৫। খাবারে বিষ মিশানো আছে এরকম মনে করা। সব খাবার খেতে না চাওয়া।
৬। স্বাভাবিক জীবিত/মৃত অথবা কোন বিশেষ আকৃতির মানুষ/প্রাণী দেখা। কোন ভালো/বাজে গন্ধ পাওয়া। প্রায়ই শরীরে কিছু প্রবেশ করার মত অনুভূতি হওয়া/ শরীরে কোনকিছু মুভ করছে এমন অনুভূতি হওয়া।
৭। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ কেউ মনে করা এবং সেই অনুযায়ী কথাবার্তা বলা।
৮। জাগতিক সকল বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। কথাবার্তায়, আচরণে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারা। মনযোগ ধরে রাখতে না পারা। নিজের যত্ন না নেয়া। গোসল না করা, অপরিষ্কার থাকতে পছন্দ করা। সামাজিকভাবে নিজেকে একঘরে করে ফেলা। কারো সাথে মনখুলে কথা না বলা। সবসময় আতংক অথবা ভয়ে ভয়ে থাকা।
৯। নিজের শরীরে আঘাত করা। সুইসাইড করার প্রবণতাও দেখা যায়। অনেক সিজোফ্রেনিয়ার রোগী আত্মহত্যা করে মারা যায়।

ডাক্তারদের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি দেখা যাক,
১। পেশেন্টকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়া। তাকে বারবার বুঝানো, তার জন্য একটা সহজ পরিবেশ তৈরি করা যাতে মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়। প্রচলিত মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট মানসিক সাপোর্টের ব্যপারটাতে অনেক গুরুত্ব দেয়।
২। এন্টিসাইকোটিক ড্রাগ। কাউন্সেলিং আর ড্রাগই এই রোগের জন্য সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয়। কাউন্সেলিং হল একদম প্রাইমারী স্টেপ আর ড্রাগ হল তারপরের স্টেপ। এন্টিসাইকোটিক ড্রাগ হল অনেকটা হিরোইন,কোকেইন এইটাইপ মাদকের বিপরীত। এসব মাদক খেলে মানুষের ব্রেইনের ম্যালফাংশন হয়, ব্রেইনে তীব্র আবেগ অনুভূতির রাস্তা তৈরি হয়। এন্টিসাইকোটিক ড্রাগ এটার ঠিক বিপরীত, ব্রেইনের আবেগ অনুভূতির রাস্তায় একটা ব্লকেজ তৈরি করে এসব বন্ধ করে দেয়। তাই যতক্ষণ ওষুধের ক্রিয়া থাকে ততক্ষণ সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ অনেকটা কমে যায়। রোগীকে কন্ট্রোলে রাখতে এই ওষুধ একটা সময় পরপর নিতে হয়। এসব ড্রাগের আবার লং এবং শর্ট টার্ম দুইভাবেই কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। পাশাপাশি ওষুধের দামও অনেক বেশি হয়।
৩। ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশন বা ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি ECT । এটা মূলত দেয়া হয় লাস্ট স্টেপ হিসেবে। ওষুধ কাজ না করলে, বা ওষুধ ব্যবহার করে তেমন ফায়দা না হলে। এই সিস্টেম হল রোগীর মাথার দুইপাশে ইলেকট্রোড দিয়ে লো ভোল্টেজের কারেন্ট সাপ্লাই করা। কারেন্ট সাপ্লাই করে রোগীর পরিবর্তন লক্ষ্য করা হয়। এতে অনেক সময় বেশ ভালো কাজ হয়। তবে এটার সাইড ইফেক্ট আছে কিছু। যেমন- শর্ট বা লং টার্মের জন্য মেমরি লস হওয়া। এটা অবশ্য একবার নিলেই হয়না। ডাক্তাররা ঠিক করে দেন কয়টা থেরাপি লাগবে আর কতদিন পরপর নিতে হবে।
দীর্ঘদিন এসব ট্রিটমেন্ট চালানোর পরে অনেক রোগী ভালো হয়ে যায়। আবার অনেকে এটাকে সাথে নিয়েই চলতে থাকে। ট্রিটমেন্ট কখনো কয়েক মাস, কখনো কয়েক বছর অথবা কাওকে সারাজীবনই চালিয়ে যেতে হয়। সারাজীবন বলতে এদের ওষুধের ওপরই থাকতে হয়। ওষুধ কয়েকদিন বন্ধ হলেই আবার লক্ষণগুলো দেখা যায়।
এবার আমার কথা বলি,

আমার যা মনে হয়, প্রায় সব ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলো যাচাই করেই বলে দেয়া যায় এটা জীন কেইস। শয়তান মানুষের রক্তের মধ্য দিয়ে চলতে পারে। সে মস্তিষ্ক দখলে নিয়ে মানুষকে এরকম রোগী বানিয়ে দিতে পারে। আর ওষুধ কাজ করার কারণটাও এরকমই। ওষুধ মস্তিষ্কের রাস্তায় ব্লকেজ তৈরি করে সাময়িকভাবে তাই জীনের পক্ষে সেখানে অবস্থান করাটা অনেক কঠিন হয়ে যায়। ECT এর সময়েও যে কারেন্ট সাপ্লাই করা হয় তার জন্য জীন সাময়িকভাবে রোগীকে ছেড়ে চলে যায়। তবে এটা সাময়িকভাবেই। এসবের ক্রিয়া শেষ হলেই আবার সে ফিরে আসে এবং মানুষের মস্তিষ্কে উল্টাপাল্টা সিগনাল দেয়। তবে এসব ওষুধ বা থেরাপির প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে গেলে একটা পর্যায়ে সে স্থায়ীভাবেই চলে যেতে পারে। এসব আমার থিওরি। কোন প্রমাণ নাই এর পক্ষে।

জীন চাইলেই অবশ্য একজন মানুষকে পজেস করতে পারেনা। কখন জীন মানুষকের পজেস করতে পারে সে ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা করা যায়। সংক্ষেপে বললে,
১। তীব্র আবেগের সময়ে। যেমন- খুব রেগে গেলে, খুব ভয় পেলে।
২। আল্লাহর অবাধ্য অবস্থায় থাকলে। আল্লাহর যেসব কাজ হারাম করেছেন সেগুলো করলে।
এদের থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হল ইসলামী শরীয়ত মেনে চলা। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখানো নিরাপত্তার আমলগুলো করা।

এবার সিজোফ্রেনিয়ার পেশেন্টকে ট্রিট করার ব্যপারে বলি,
আর আমরা বিশ্বাস করি প্রতিটা রোগেরই আরোগ্য আছে। নিশ্চয়ই কোরআন দিয়ে চিকিৎসাই সবথেকে ভালো চিকিৎসা।
আল্লাহ বলেন, “ আল্লাহ বলেন, “আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।” সুরা বনী-ইসরাঈল, ৮২
এই রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়না আমার। তবে ট্রাই করতে পারে কেউ চাইলে। আমি রুকইয়া করতে বলব এমন রোগীদের।
কিভাবে রুকইয়া করবেন?
জীন আক্রান্ত রোগীদের যেভাবে রুকইয়া করানো হয় সেভাবেই করা উচিত। আর এতকিছু না করলে প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় আধা ঘন্টা করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি পড়া উচিত রোগীকে সামনে বসিয়ে। গ্যাপ না দিয়ে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ একটানা করা উচিত। আল্লাহ চাইলে পজিটিভ কিছু দেখা যাবে। তারপর পুরোপুরি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া উচিত।

জীন আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি নিচের লিংকগুলোতে পাওয়া যাবে – 
  1. জ্বিন আসরের চিকিৎসা (জিনের রোগীর রুকইয়াহ) : জিনের স্পর্শ ৬
  2. জিনের চিকিৎসায় রাক্বীর জন্য জরুরী জ্ঞাতব্য : জিনের স্পর্শ ৭
  3. জিনের সমস্যার জন্য সেলফ রুকইয়াহ

 


addition: 

নিচের দুইটা কমেন্টই মূলত নোটটা লেখার কারণ ছিল। সাপোর্ট গ্রুপ থেকে কমেন্টগুলা রেখে দিলাম এখানে।

  • আচ্ছা ভাই, জেনারেলাইজ করিনি আসলে। সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে কোন সলিড তথ্য নাই আর আমি বিশ্বাস করি এটা জীনঘটিত রোগ। এটা সবগুলো লক্ষণ প্রকাশ পেলে। যাদু করেও এরকম করে দেয়া সম্ভব। আপনি জানেন। সবার কথা ভেবে আরেকটু বিস্তারিত কিছু বলি।
    সিজোফ্রেনিয়াকে ডাক্তাররা বলেন ব্রেইন আর আচরণগত সমস্যা যা মানুষের চিন্তা ভাবনাকে অস্বাভাবিক করে দেয়। মাওয়া ভাইয়ের লিংকে বেশ ভালো আলোচনা করেছে এসবের লক্ষণ নিয়ে। ওখানে কিছু বাদ গেছে এগুলো বলি। বাইপোলার ডিজঅর্ডার, ইমোশন কোনভাবেই কাজ না করা, প্রায় সবার ক্ষেত্রেই কিছু নেগেটিভ চিন্তা কাজ করা, এক্সট্রিম ক্ষেত্রে পেশেন্ট একদম কোমায় চলে যাওয়া বা লম্বা সময়ের জন্য একদমই মুভ না করা, কোন কোন ক্ষেত্রে অটিজম হওয়া
    গবেষকদের মতে ইয়াং ছেলেমেয়েরা এই রোগে সবথেকে বেশি আক্রান্ত হয় এবং এরাই বেশি ঝুঁকিতে আছে। কারণ তাদের মধ্যেই নিজেদেরকে আলাদা করে রাখতে চাওয়ার প্রবণতা বেশি।
    মেডিকেল সাইন্স এই রোগের আরোগ্য নাই এই কথাটা প্রথমেই বলে দেয়। তারপর বলে এটাকে কিছু সিস্টেমে কমিয়ে আনা সম্ভব অথবা কন্ট্রোলে রাখা সম্ভব। মানে সহজ কথায় এর কোন আরোগ্য নাই। তারা যা করে সবই বিভিন্ন রিসার্চের ভিত্তিতে এবং আগে কাজ করেছে এরকম কিছু টেকনিক ফলো করে। বলবে, লং টার্ম চিকিৎসা দরকার। সলিড কিছু তারা বলবেনা। কারো ক্ষেত্রে সারাজীবনই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলে।
  • সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে একটা বিখ্যাত ঘটনা হল আমেরিকান ম্যাথমেটিশিয়ান জন ন্যাশের কাহিনী। নোবেল পাওয়া এই লোক লাইফের অনেকটা বছর সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগে কাটিয়েছে। যখন সে গেইম থিওরি নিয়ে কাজ করল তার পরপরই এই রোগে ভুগতে শুরু করল। উলটাপালটা চিন্তা করা, অদৃশ্য কিছু দেখা এসব শুরু হল। প্রায় ৩০ বছরের মত ছিল মনে হয়। সে এই সময়ে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের দেয়া উচ্চ মাত্রায় ব্রেইনে ইফেক্ট ফেলার ওষুধ খেয়েছে, ডাক্তার যা যা বলেছে করেছে। কিন্তু ভালো হয়নি। পরে এগুলো বাদ দিয়ে দিয়েছিল। পরে নিজে নিজেই চিন্তা করা শুরু করল। বাসায় তার ওয়াইফের সাপোর্টে থেকে ন্যাচারালি সে একটা সময় ভালো হয়ে গেল। ইগনোর করা আর নিজে লাইফের নরমাল কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া এরকম কিছু টিপস মেনে চলত। সে আর তার স্ত্রী একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়। তাদের ট্যাক্সি ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল হঠাৎ। এতেই তারা মারা যায়। তার ছেলেরও এই রোগ ছিল। জন ন্যাশ প্রকৃতপক্ষে ভালো হয়েছিল কিনা সেটা প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ তার মৃত্যুর ব্যপারটাও এখানে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে আসে।
    এই রোগ নিয়ে ডাক্তার,সাইকিয়াট্রিস্ট সবাই নানা হাই ডোজ ওষুধ খেতে বলে আর একটা রুটিনড লাইফ মেনে চলতে বলে। এরকম চিন্তা বা ভিশন আসলে সেটাকে ইগনোর করতে বলে।
    এছাড়া স্পেসিফিক কোন ট্রিটমেন্ট নাই এটার। কিছু রোগী বয়স বেড়ে গেলে এমনিতে ভালো হয়ে যায়। আর কিছু রোগী কখনো ভালো হয়না। ডাক্তাররা এটাকে পুরোপুরি সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার হিসেবে ট্রিট করে। যদিও এটাকে পুরোপুরি জীন কেইস বলে মনে হয় আমার । কংক্রিট কোন ডেটা নাই। তবে এরকম রোগীরা জীন আক্রান্ত এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। উপরের ঘটনাতে জন ন্যাশের মৃত্যু আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে।

মন্তব্য করুন