প্রশ্ন:
কোনো ব্যক্তির অজান্তে কি রুকইয়াহ করা যায়? যখন প্রচুর সমস্যা থাকা সত্ত্বেও রোগী সেটা স্বীকার করতে বা চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানায়; এমন পরিস্থিতিতে আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
উত্তর:
রুকইয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটা হলো, যখন রোগী কোনো সহযোগিতা করতে চায় না। সত্যি বলতে এটা বেশ বিব্রতকর একটা সিচুয়েশন। যাহোক, আমাদের মনে রাখা উচিত, বেশিরভাগ দেশে সাধারণতঃ রুকইয়াকে মেইনস্ট্রিম চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নাই। মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী যেমন কাউকে জোর করে চিকিৎসার আওতায় আনা যায়, সেকুলার রাষ্ট্রে রুকইয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো আইনি সাপোর্ট নেই।
অনেক দেশে কারও অনুমতি ছাড়া রুকইয়াহ করা বা জোরপূর্বক চিকিৎসা করানোর জন্য আইনি ঝামেলা হতে পারে। এমনটি করলে রোগী এবং রুকইয়াকারি ব্যক্তি উভয়ের জন্যই বিপদের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এমনকি সেটা ওই দেশে রুকইয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বা কঠোর রেস্ট্রিকশন (বিধিনিষেধ) আরোপের কারণও হতে পারে। তাই, রোগীর অনুমতি ছাড়া বা তার অজান্তে রুকইয়া করার কোনো প্রচেষ্টা থেকে আমরা কঠোরভাবে বিরত থাকার পরামর্শ দিই।
এধরণের রোগীদের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়:
১. আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন:
আপনার সাহায্য কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। তাঁর কাছে দোয়া করুন এবং গভীর রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে সাহায্য প্রার্থনা করুন। মনে রাখুন, যদি আল্লাহ তাআলা রোগীর অন্তরকে ইসলাম এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার প্রতি ফিরিয়ে দেন, তাহলে জাদু বা কোনো বাধা সেটি ঠেকাতে পারবে না।
২. রোগীদের উৎসাহ দিন, প্রয়োজনে অন্যের সহায়তা নিন:
রোগী যদি আপনার কথা শুনতে না চায়, তাহলে এমন কারো সাহায্য নিন, যাকে তারা বিশ্বাস করে বা যার কথা শুনতে পারে। কাউকে বোঝানোর পদ্ধতি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়।
কিছু মানুষ চ্যালেঞ্জ করলে ভালোভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, যেমন আপনি বলতে পারেন, “তোমার যদি সত্যিই কিছু না হয়ে থাকে, তবে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে সমস্যা কোথায়?” তখন হয়তো কিছুটা রুকইয়াহ করতে পারবেন। তবে কেউ কেউ এমন কথায় বিরক্তও হতে পারে, তাদের জন্য নরম এবং উৎসাহমূলক পদ্ধতি কার্যকর।
৩. শুধু রুকইয়ার দিকে ফোকাস না রেখে সার্বিক দ্বীনদারির উন্নতি প্রতি মনোযোগ দিন:
রোগী যদি ঠিকমত দ্বীন না মানে, তবে রুকইয়া থেকে পুরাপুরি ফায়দা নাও হতে পারে। তখন এমনিতেই শয়তানের প্রভাব তার ওপর বেশি থাকে। তাই প্রথমে রোগীর হৃদয়কে আল্লাহর প্রতি ঝুঁকাতে চেষ্টা করুন। যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অভ্যাস না থাকে, তবে সেদিকে মনোযোগ দিন। কিছুদিন গেলে এরপর অন্যান্য ইবাদত, যেমন পর্দা, মাসনুন যিকর, কুরআন তেলাওয়াত, ইত্যাদি শেখানোর মাধ্যমে আল্লাহর ওপর ভরসা বৃদ্ধির চেষ্টা করুন। এভাবে তারা স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আগ্রহী হবে ইনশাআল্লাহ।
৪. আকিদার সমস্যা দূর করুন:
রোগীর আকিদা বা বিশ্বাসে কোনো ত্রুটি থাকলে, যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া বা সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভুল ধারণা, এসব আগে ঠিক করুন। প্রচলিত কবিরাজি ঝাড়ফুঁক এবং রুকইয়ার মাঝে পার্থক্য জানা না থাকলে এব্যাপারে স্পষ্ট করুন। রুকইয়া শুরুর আগে এই সমস্যাগুলো ঠিক করা জরুরি। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে সিনিয়র কারও সহায়তা নিন।
৫. পরিবারের অন্যরা রোগীর জন্য রুকইয়াহ করতে পারে, তবে…
উপরের বিষয়গুলো খেয়াল রাখার পাশাপাশি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যদিও এইভাবে উপকার তুলনামূলক ধীরে হয়, তবুও একেবারে না করার চেয়ে এসব করা উত্তম হতে পারে।
এক. রোগীর অজান্তে তাকে রুকইয়ার পানি খাওয়ানো বা গোসল করানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। পরিবারের সবাই যে জগ বা পাত্র থেকে পানি পান করে সেখানে রুকইয়ার দোয়া পড়ে রাখা যায়, কিংবা রুকইয়ার পানি মিশিয়ে রাখা যায়। একইভাবে রোগীকে না জানিয়ে গোসল, কাপড়ধোয়া ইত্যাদির পানিতে কিংবা ওষুধপত্রের মাঝেও রুকইয়ার আয়াত বা দোয়া পড়ে ব্যবহার করানো যায়। আল্লাহ চাইলে এভাবেও অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
দুই. যদি অন্য কোনো উপায় না থাকে, তবে পরিবারের কেউ রোগীর নিয়তে রুকইয়াহ করতে পারে। এটি অনেকটা নিজের জন্য সেলফ রুকইয়া করার মতোই। এখানে নিয়মকানুন একই থাকবে, তবে নিয়ত হবে রোগীর সুস্থতার জন্য। মনে রাখা উচিত, এভাবে রুকইয়া করতে গেলে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে। তাই একান্তই অপারগতা ছাড়া এমন করে নিরুৎসাহিত করা হয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে “অন্যের জন্য রুকইয়াহ করার ভাল মন্দ” লেখাটি দেখতে পারেন।
শেষ কথা:
উপরের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার পর যদি রোগীর অবস্থার উন্নতি দেখা যায়, তাহলে তাকে কোনো জোরজবরদস্তি ছাড়া ধীরেসুস্থে ভালোভাবে বুঝিয়ে রুকইয়াহ করা বা করানোর জন্য রাজি করানো উচিত।
আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন, তিনিই আমাদের সর্বোত্তম সাহায্যকারী।
উস্তায মুহাম্মাদ টিম হাম্বলের If a Patient Refuses Treatment লেখা থেকে অনূদিত, সংযোজিত ও পরিমার্জিত। বিশেষত: প্রবন্ধের শেষাংশ আমাদের সংযোজিত।
মন্তব্য করুন