পিরিয়ড চলাকালীন রুকইয়াহ করার বিধান কী?

বোনদের অনেকেই এই প্রশ্নটা করে থাকেন,

পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায় রুকইয়া করা যাবে কি?

এই বিষয়ে আমি বড়দের সাথে আলোচনা করে আরও বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আপাতত আমার ছোট্ট জ্ঞানে পরামর্শ নিম্নরূপ –

প্রশ্নঃ পিরিয়ড চলাকালীন রুকইয়া শোনা যাবে কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ যাবে। কোরআন শোনার জন্য পবিত্রতা শর্ত না। আয়েশা রা. এই সময়ে তিলাওয়াত শুনেছেন বলে জানা যায়। তবে যত বেশি পবিত্র থাকবেন, রুকইয়ার তত বেশি ইফেক্ট হবে। তাই সম্ভব হলে রুকইয়াহ করার আগে একবার ওযু করে নিন।

প্রশ্নঃ নিরাপত্তার যিকর বা মাসনুন দোয়াগুলো পড়া যাবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে দোয়া ও যিকর করা যাবে।  দরুদ বা তাসবিহ পড়া যাবে। তাই আপনি সকাল সন্ধ্যার হিফাজতের দোয়াগুলো নিশ্চিন্তে পড়তে পারেন। অনেকে এই সময় হিফাজতের আমলে অবহেলা করে, এটা উচিত না। এতে শয়তান ক্ষতি করার সুযোগ পেয়ে যায়।

প্রশ্নঃ এই সময় রুকইয়ার পানি খাওয়া যাবে? গোসল করা যাবে?

উত্তরঃ যদি আগে থেকে রুকইয়ার পানি বা তেল তৈরি করা থাকে (মানে পবিত্র অবস্থাতেই পানিতে দোয়া-কালাম পড়া থাকে) তাহলে সেটা ব্যবহার করতে পারবেন। খেতে পারবেন, গোসল দিতে পারবেন। কিংবা অন্য কেউ দোয়া কালাম পড়ে ফুঁ দিলে আপনি ব্যবহার করতে পারেন। সমস্যা নেই।

কিন্তু পানি/তেল/মধু প্রস্তুত করা না থাকলে, আর পড়ার মত কাউকে না পেলে আপনি রুকইয়ার দোয়াগুলো থেকে ১০-১৫টি দোয়া এবং দরুদ শরিফ কয়েকবার পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে পানি তৈরি করবেন। জিন-জাদুর সমস্যার ক্ষেত্রে একটু বেশি পরিমাণ দোয়া পড়বেন। রুকইয়ার পানি তৈরির জন্য নিজে তিলাওয়াত করবেন না। (এই প্রসঙ্গে একটা ফাতওয়া নিচে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। অনুগ্রহ করে পড়ে নিন।)

প্রশ্নঃ পিরিয়ডের সময় রুকইয়া গোসলের জন্য পানিতে হাত ডুবিয়ে ৭বার করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়া যাবে কি না?

উত্তরঃ একই কথা। রুকইয়ার গোসলের জন্য যেহেতু বেশ ভালো পরিমাণেই তিলাওয়াত করতে হয়। তাই এসব সুরা নিজে না পড়ে, অন্য কারও সহায়তা নিতে হবে। অথবা শুধু দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, এতেই উপকার হবে।

  • নোটঃ এই লিংকে কিছু দোয়া পাবেন, এছাড়া অ্যাপ এবং পিডিএফে অনেক দোয়া আছে, শুরুতে দেয়া ছোট ১০টা দোয়া তিনবার করে পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করতে পারেন।

সবশেষে নিচে দেওবন্দে‌র দারুল ইফতার ফাতওয়া যুক্ত করে দিচ্ছি। এই ফাতওয়া অনুযায়ী নারীরা সকাল-সন্ধ্যা এবং ঘুমের আগের হিফাজতের আমল হিসেবে তিনকুল এবং আয়াতুল কুরসি পড়তে পারবে। অন্য তিলাওয়াত করা যাবে না। আমার জানামতে প্রায় সব মুফতিয়ানে কিরাম এরকমই বলে থাকেন, তাই আমরাও এটা ফলো করি। (অনুগ্রহ করে এর বিপরীতে কোন বেদয়াতি কারও ফাতওয়া আনবেন না। যদি সাহাবা, তাবীঈদের এর বিপরীত ফাতওয়া দেখাতে পারেন, তাহলে আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করব ইনশাআল্লাহ।)

জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।


পিরিয়ড অবস্থায় আয়াতুল কুরসি এবং তিনকুল পড়ার বিধান

প্রশ্ন:

পিরিয়ড অবস্থায় ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং চারকুল পড়া যাবে? এটা তো সুন্নাহ। আমি শুনেছি এ অবস্থায় কেউ একটি আয়াত পড়লেও তাকে অভিশাপ দেওয়া হয়। আমি কি এই আয়াতগুলো পড়তে পারব? নাকি না? এই অবস্থায় আয়াতে কারীম তেলাওয়াত করা যাবে?

উত্তর:

পিরিয়ডে এমন সব আয়াত পড়া যাবে যেসব দোয়ার অর্থ প্রকাশ করে। অথবা আল্লাহর জিকির, প্রশংসা, বড়ত্ব বুঝায়। এ অবস্থায় এমন কোন আয়াত পড়া যাবেনা যা দ্বারা আল্লাহর নির্দেশ এবং নিষেধাজ্ঞা, পূর্বের অথবা ভবিষ্যতের কোন ঘটনা অথবা ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য বুঝায়। মোটকথা, এ অবস্থায় সাধারণ তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে কোরআন পড়া যাবেনা।

উল্লেখিত মূলনীতি অনুসারে, আপনি যদি নিয়ত রাখেন আল্লাহর প্রশংসাপূর্ণ আয়াতের মাধ্যমে জিন এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে সুরক্ষার জন্য পিরিয়ডের সময় ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি, তিনকুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়বেন, তাহলে দোয়া হিসেবে এটা পড়া যাবে। তবে আপনি সুরা কাফিরুন পড়তে পারবেন না কারণ এটা উপরের উল্লেখিত শর্ত পূরণ করে না।

আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।

দারুল ইফতা
দারুল উলুম দেওবন্দ
(Fatwa: 212/227/N=1433)

মন্তব্য করুন