প্রশ্ন:
১. রুকাইয়া করতে কি হাদিসের সহীহ দলিল প্রয়োজন? মানে অনেক আমলে সংখ্যা নির্দিষ্ট(৭ বার, ১০০০ বার ইত্যাদি) থাকে, সেগুলো কি হাদিস অনুযায়ী হওয়া বাধ্যতামূলক?
২. একজনের কাছ থেকে শুনলাম, উপর্যুক্ত আমল নাকি হাদিস অনুযায়ী না হলে বিদআত হয়! এ কথার সত্যতা কি?
উত্তর:
বিসমিল্লাহ,
[এক]
শুধু রুকইয়াহ শারইয়াহ না, কোনো চিকিৎসার বিধানই আমলে মাখসুসার মত না। রুকইয়ার মাঝে কোরআন তিলাওয়াত আর দোয়া পড়া হয় দেখে অনেকে এটাকে নামাজের বিশেষ ইবাদাত ভাবেন, এটা মূলত একটা চিকিৎসা, মুজতাহিদ সালাফদের থেকে কিছু মূলনীতি পাওয়া যায়, সেগুলো খেয়াল রাখলে রুকইয়া জায়েজ (ক্ষেত্রবিশেষে রাসুল সুন্নাহ অনুযায়ী) হবে।
যেমন –
১. ঝাড়ফুঁকের বাক্যের মাঝে কুফর-শিরক না থাকা।
২. সুস্থতা ঝাড়ফুঁক বা ঝাড়ফুঁককারির ক্ষমতায় আছে (মানে মুয়াসসার বিয-যাত) এমন মনে না করা।
৩. ঝাড়ফুঁকের বাক্যগুলো আরবি ভাষা অথবা এমন ভাষায় হওয়া, যা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় (যে এতে কোনো শিরক, জাদু বা হারাম কথাবার্তা নেই)।
– শামী ৬/৩৬৩
এটা হলো ফকিহদের সিদ্ধান্ত। এটা শুধু ফিকহে হানাফি না, ইবনে হাজার রহ. এর মতে এর ওপর আলেমদের ইজমা রয়েছে। আর এসব শর্তের মাঝে হাদিসে বর্নিত সংখ্যাতেই হতে হবে, এমন আবশ্যকতা নেই।
তবে যদি হাদিসে বর্ণিত কোনো দোয়ার সংখ্যায় পড়া হয়, তাহলে সেটা উত্তম হবে। যেমন, আকাবির আসলাফের জীবনীতে বিভিন্ন দোয়া ৩-৭-১০০ বার পড়ার উদাহরণ পাওয়া যায়।
[দুই]
কেউ যদি আলেমদের ফাতওয়া এবং ইজমা না মানে, আর স্পষ্ট হাদিস দাবি করে, তবে সে এই হাদিসটি দেখতে পারে-
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِيِّ، قَالَ كُنَّا نَرْقِي فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِي ذَلِكَ فَقَالَ “ اعْرِضُوا عَلَىَّ رُقَاكُمْ لاَ بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ ” .
‘আওফ ইবনু মালিক আশজা’ঈ রা. থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমরা জাহিলী যুগে মন্ত্র দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতাম। এজন্যে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আবেদন করলাম-হে আল্লাহর রসূল! এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?
তিনি বললেন, “তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার নিকট উপস্থাপন করো, ঝাড়ফুঁকে কোন দোষ নেই-যদি তাতে কোন শিরক (জাতীয় কথা বা কাজ) না থাকে। ”
– সহিহ মুসলিম, ৫৫৪৪
এই হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বিষয়টা আরও প্রশস্ত, শুধুমাত্র শিরক না থাকলেই সমস্যা নেই। ৩বার পড়াতেও সমস্যা নেই, ৩০০বারেও সমস্যা নেই। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই চিকিৎসায় এরকম কোনো আবশ্যকতা দেননি যে ‘অবশ্যই এতবার পড়তে হবে।’
(নোট: বাকি শর্তগুলো ফিতনা থেকে বাঁচাতে ফুকাহায়ে কিরাম নির্ধারণ করেছেন, সেসবও খেয়াল রাখা জরুরি।)
[তিন]
যারা আলেমদের শরঈ সিদ্ধান্তকে গ্রহন করে না, অন্ধভাবে নিজের জেদের অনুসরণ করে, তারা ভ্রান্তিতে আছে। আল্লাহ আমাদেরকে হিফাজত করুন।
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
شَهِدَ اللّٰهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ وَالْمَلٰٓئِكَةُ وَاُولُوا الْعِلْمِ قَآئِمًۢا بِالْقِسْطِ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ ؕ
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই; ফেরেশতারা ও আহলে ইলমরাও (একই সাক্ষ্য দেয়); ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী হিসাবে। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।
– আলে ইমরান, ১৮
[চার]
তবে খেয়াল করার বিষয় হল, অনেক তদবিরকারি শয়তানের সাহায্য নেয়। তখন শয়তানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট বাক্য, নির্দিষ্ট সংখ্যায়, নির্দিষ্ট নিয়মে পাঠ করে। সেটা হারাম/শিরক হবে শয়তানের সাহায্য নেয়ার জন্য, সেটা ৩বার পড়লেও নিষিদ্ধ হবে, ৭০০ অথবা ৬৬৬বার পড়লেও নিষিদ্ধ হবে।
তবে যদি শয়তানের নির্দেশনা না থাকে, তবুও শয়তানদের সাদৃশ্য থেকে বাচতে তাদের মত অস্বাভাবিক সংখ্যা নির্দিষ্ট করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
—————————
আমাদের করণীয়:
আমরা আল্লাহর কালাম অথবা ভালো দোয়া দ্বারা রুকইয়াহ করব। আর রুকইয়ার মাঝে জাদুকরদের মত অদ্ভুত সংখ্যায় পাঠ করব না। সংখ্যা নির্দিষ্ট করলে হাদিসে বর্ণিত দোয়া পাঠের কোনো সংখ্যা (১,৩,৭,১০,৩৩,৩৪,১০০) ইত্যাদি সংখ্যায় পড়বো। অথবা কোনো নির্দিষ্ট না করে সুস্থতার আশায় যতবার ইচ্ছা দোয়া বা আয়াত পড়ে যাব।
রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপে আমরা সাধারণত পরামর্শ দেই, কোনো আয়াত বা দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে যদি নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বলা থাকে, তাহলে ওই সংখ্যাতেই পড়বে। আর যদি নির্দিষ্ট করা না থাকে, তাহলে যত বেশি পড়বে তত বেশি ফায়দা।
আল্লাহ আমাদের বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে হিফাজত করুন। আমিন।
মন্তব্য করুন