Ruqyah Support BD

অনর্থক প্রশ্ন এবং অতিরিক্ত কথাবার্তা পরিহার করি

“আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, ভাইয়া!
আমি প্রায় ৮ মাস যাবত সেলফ রুকইয়াহ করতেছি। এরমধ্যে লাইভ সেশনও নিয়েছি। শরীরে থাকা জ্বীন যে শরীর থেকে বের হয়ে গিয়েছে এটা আমি বুঝি, আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখনো আমার স্বপ্নে খাওয়া জাদু কন্টিনিউ হচ্ছে। আমি খুব সতর্কতার সাথে রুকইয়াহ করি। রিনিউ হওয়া জাদু প্রতিদিনের সেলফ রুকইয়াহর মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু রাতে আবার রিনিউ হয়। এই জিনিসটা ইদানিং বেশি হচ্ছে। বলতে গেলে প্রতিদিনই জাদু রিনিউ হচ্ছে।
রাতে ঘুমানোর আগে সব মাসনূন আমল করি। রুকইয়াহ এর পানি পড়া খাই, সিহরের আয়াতপড়া মেরিল ঠোটে দেয়, ইভেন ঘুমানোর আগে হাত মুখের উপর রেখে ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ি যেন স্বপ্নে খাওয়াতে না পারে। প্রতিদিন সূরা বাকারাহও তিলাওয়াত করি যেন স্বপ্নে জাদু রিনিউ করার খাদেম জ্বীন ধ্বংস হয়ে যায়।
এরপরেও আমার স্বপ্নে খাওয়া জাদু রিনিউ হয়েই চলেছে। আমি আর কি করতে পারি?”
এটা পেয়েছি মেসেজবক্সে ।
রুকইয়াহ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যতগুলো জিনিস বুঝেছি তার মধ্যে একটা হল বেশি কথা বলা যাবে না। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে যথাসম্ভব কম বলতে হবে। তাদের পরামর্শ দিতে হবে, পরামর্শ বুঝিয়ে দিতে হবে। এর বাইরে আলাপ করতে গেলেই সমস্যা। এই পর্যন্ত যতজনের সাথে এর বাইরে কোনো কথা বলেছি তারা কেউ সাকসেস হতে পারে নি। তাহলে তাদেরকে মূল সমস্যার বাইরের রুকইয়াহর অলিগলি, বিভিন্ন সম্ভবনার কথা বলে লাভ হল কি? আদতে কোনো লাভ হয় নি।
“জাদু রিনিউ”, “স্বপ্নে খাওয়া মানেই জাদু”, “খাদেম জ্বিন” – এসব হল অতিরিক্ত কথার ফলাফল। মনোযোগ নষ্টকারী কথা। আজব ব্যাপার হচ্ছে আমাদের আবার এসবে আগ্রহ বেশি। মুল জিনিসে আগ্রহ কম।
ইসলামি চিকিৎসাশাস্ত্রের একটা মূলনীতি হল, খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে যদি রোগ নিরাময় হয় তাহলে মেডিসিন প্রয়োগ না করা। আর আমাদের অভ্যাস হল আগে খেয়ে নেই, এরপর যত মেডিসিন লাগে খাব। একইভাবে রুকইয়াহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বলা যায়, ঝামেলা হলে আগে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা দরকার। সালাত ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইত হবে। নিজের কি কি ত্রুটি আছে খুজে বের করতে হবে। আকিদার ত্রুটি, আমলের ত্রুটি কিছু আছে কিনা দেখা। এরপর রুকইয়াহ করা। দরকার হলে দুটো কাজ একই সাথে করা। অথচ আমরা বেশতি জিনিসের পিছনে ছুটতে থাকি। “কেন এমন হল?”, “কে ক্ষতি করলো?”, “এটা কি আশিক জিনের কারণে হল?” ইত্যাদি ইত্যাদি। রাকির পিছনে ছুটতে থাকি অথচ ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি না। মাসনুন আমলে গুরুত্ব দিতে পারি না।
আমার বলতে ইচ্ছে হয়, কেন এমন হল সেটা কি আমার জানার কথা? আমি কিভাবে জানবো? কে জাদু করেছে সেটাইবা কিভাবে বলবো? আমি গায়েবের খবর কিভাবে জানবো? আর আশিক জিন নাকি রসিক জিন সেটা দিয়ে কি হবে? আশিক জিন হলে এক ট্রিটমেন্ট আর রসিক জিন হলে আরেক ট্রিটমেন্ট নাকি? ভিলেন জিন হলে ট্রিটমেন্ট কি? কি ট্রিটমেন্ট হবে যদি লুচু জিন হয়? এভাবে চলতে থাকবে…
এভাবে যত ভাগ করা যাবে তত বেসিক থেকে দূরে সরে যাওয়া হবে। আর উপকার তত কম হবে। এই কারণে এসব চিন্তা মাথা থেকেই বের করে দেয়া দরকার। আমি যদি বুঝতে পারি আমার এই টাইপের সমস্যা হচ্ছে তাহলে সে অনুযায়ী রুকইয়াহ করবো। না পারলে অভিজ্ঞ কারও হেল্প নিব। তিনি যেভাবে করতে বলেন সেভাবেই করবো। অযথা প্রশ্ন করে খুটিনাটি জানতে চাইবো না। যেটা বলার দরকার নেই রোগীদের সাথে সেটা বলবো না। এতেই আমি মনে করি উপকার।
যাইহোক, ইন জেনারেল অনেক কথা হল। এখন স্পেসিফিক কথায় আসি।
১। আপনি স্বপ্নে খেলেই জাদু রিনিউ হচ্ছে এই টাইপের চিন্তা মাথা থেকে বের করে দিন। আপনার কাজ হল রুকইয়াহ করা। আপনি সুস্থতার আগ পর্যন্ত রুকইয়াহ করবেন আল্লাহর উপর ভরসা করে। অতিরিক্ত ইফোর্ট দিবেন না। সিহরের আয়াত পড়া মেরিল দেয়া, মুখে কালোজিরা রেখে ঘুমানো – এই টাইপের কাজগুলো হল অতিরিক্ত ইফোর্ট। আপনি মাসনুন আমল করে ঘুমাবেন। আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখবেন যে, এটাই আমার জন্য যথেষ্ঠ। ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর থেকে মজবুত আমল হল মাসনুন আমল যদি কেউ মনোযোগ দিয়ে করে।
২। আপনি উপলদ্ধি করলে হবে না। যেহেতু আগে জিনের অস্তিত্ব ছিল কাজেই আপনি সরাসরি রুকইয়াহ করান। করানোর পর যদি রাকি বলে আপনার মত করে তাহলে বিষয়টা মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেল।
৩। ঘুমের আগে অযু করে নফল পড়বেন ২ রাকাত। এরপর বিছানায় বসে (শুয়ে না) নিয়ম মত মন দিয়ে মাসনুন আমল করে ঘুমাবেন। এরপর আর কোনো কাজ করবেন না। মোবাইল টিপাটিপি বা অন্যকিছু না।
৪। খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙলে যেটা করনীয় (যেমন বাম দিকে থু থু দেয়া, আউযুবিল্লাহ পড়া, স্থান পরিবর্তন করে ঘুমানো ইত্যাদি) করবেন। চাইলে অযু করে দুই রাকাত নফল পড়ে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে পারেন।
৫। ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পড়া পানি খেয়ে নিবেন।
৬। নিজের ঈমান, আক্বিদার দিকে নজর দিন। আমলি হালতের দিকে নজর দিন। পর্দার দিকে নজর দিন। আকিদা খুব সেন্সেটিভ ইস্যু। এটা বিশুদ্ধ করতেই হবে।
৭। প্রতিদিন বেশি বেশি কালিমাহ তায়্যিবাহ, ইস্তেগফার ও দরুদে ইব্রাহিমি তেলাওয়াত করবেন।
৮। সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়বেন ৪৫ মিনিট। এর বাইরে যতটা পারেন সুরা বাকারা পড়বেন। এরপরেও পড়তে চাইলে সিহরের আয়াতগুলো ১ ঘন্টা পড়তে পারেন। তেলাওয়াত শুদ্ধ হওয়া জরুরী। শুদ্ধ না হলে শিখে নিতে হবে।
৯। পরিবারের প্রতি যত্নশীল, দায়িত্বশীল হওয়া। বাবা-মার কথা শোনা, ভাইবোনের খেয়াল রাখা। উত্তম ব্যবহার করা তাদের সাথে।
১০। সর্বোপরি সবর করা। এটাও একটা পরীক্ষা। আর দুনিয়া পরীক্ষারই ক্ষেত্র। ইংশা আল্লাহ আপনার সমস্যা কেটে যাবে। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।
(কাউকে কষ্ট দেয়া উদ্দেশ্য নয়।)

মন্তব্য করুন