[part-1]
ডাক্তারি বিদ্যার একটা বড় দুর্বলতা হল যন্ত্রের প্রতি নির্ভরতা। এই বিদ্যার অনেক সিদ্ধান্ত আসে যন্ত্র কি বলে তার উপর ভিত্তি করে। যিনি অসুস্থ তার কথাটা অনেক সময় গৌন হয়ে যায়। যেমন, অনেক সময় আমরা বলি, জ্বর জ্বর লাগছে বা জ্বর আসছে। কিন্তু থার্মোমিটারের কিছু পাওয়া যায় না। এ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় জ্বর নেই। অথচ রোগি বলছেন উনার জ্বর। রোগীর সাক্ষ্য এখানে গৌন বিষয়।
এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে। আপনার নিজের ব্যাপারে চিন্তা করলেও এমন পাবেন। আপনি কোনো সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন, একগাদা টেস্ট করে কিছুই পাওয়া গেল না। ডাক্তার আপনাকে কী পরামর্শ দিবে? স্বান্তনা পুরস্কার হিসেবে রিলাক্সেসেশনের ট্যাবলেট দিতে পারে। অথচ আপনি জানেন, আপনি সুস্থ না, আপনার শরীর ভাল লাগে না। আপনি বেশি জোর করলে আপনাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হতে পারে। সেখান থেকে খটমটে কিছু নাম আর ঘুমের ওষুধ নিয়ে আসবেন। খাবেন আর সারাদিন মাতালের মত ঝিমাবেন। মেডিসিন খেলে কিছুদিন অসুস্থতার “বোধ” টা কম থাকে। বন্ধ করে দিলে আবার ফিরে আসে। একসময় মেডিসিনে আর ধরে না। তখন ডোজ বাড়ে, এভাবে চলতে থাকে। (বলছি না এটাই হয়, বলছি যে এটাও হয়)
কয়েকজনের অভিজ্ঞতা শুনে আমার বিশ্বাস হচ্ছে যে, অদৃশ্য জগতের বাসিন্দাদের যন্ত্রের উপর প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা রয়েছে। তারা কিভাবে প্রভাব খাটায় সেটা জানি না। ফিজিক্স যারা পড়েছেন তারা জানেন, বিদ্যুৎ চালিত প্রতিটা যন্ত্রের চারপাশে একটা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়। আরেকটা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড/ম্যাগনেটিক ফিল্ড কাছাকাছি আসলে দুইটারই পরস্পরের উপর পরস্পরের প্রভাব পড়ে। দুইটা চুম্বক কাছাকাছি আসলে হয় আকর্ষন করবে নাহয় বিকর্ষন করবে- এইটাইপের আর কি।
শয়তানের দল এই কাজটা করে মানুষকে পেরেশানি দেয়ার জন্য, আর কিছু না। আপনি ডাক্তার থেকে ডাক্তারে দৌড়াবেন, একের পর এক মেডিসিন খেতেই থাকবেন, টাকা পয়সা খরচ করে নিঃস্ব হতে থাকবেন। এক সময় “আমার উপরেই কেন এত বিপদ” এই টাইপের চিন্তা থেকে ঈমান হারাও হতে পারে। শয়তান ১০০% সফল তখন।
কাজেই ডাক্তারী বিদ্যাকে সুপ্রীম মনে করার কোনো কারণ নেই। এই বিদ্যায় শিক্ষিতরা যা বলে তাকেই চূড়ান্ত মনে করার দরকার নেই। বরং মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং ডাক্তার-নার্সদের উচিত রুকইয়াহ, হিজামা নিয়েও সম্যক জ্ঞান অর্জন করা। কারণ পুরো ডাক্তারি বিদ্যায় স্পিরিচুয়াল হিলিংকে স্থান দেয়া হয় নি (আমার জানামতে)। অথচ কারও যদি স্পিরিচুয়াল হিলিং দরকার হয় তাকে সেটাই দিতে হবে। অন্য কিছুতে কাজ হবে না।
[এই পোস্ট থেকে কেউ আবার এই মানে বের করবেন না যে, ডাক্তারের কাছে যেতে মানা করছি।]
[part-2]
ডাক্তারি নিয়ে আপাতত এটাই শেষ পোস্ট। কাজেই একটু রিভিউ করি।
আমার প্রশ্নটা ছিল ডাক্তারি বিদ্যাটা কিভাবে অগ্রসর হল? গবেষণার মাধ্যমে। গবেষণার প্রক্রিয়া কেমন ছিল? এই ব্যাপারে একটা মর্মান্তিক পোস্ট শেয়ার করেছিলাম।
এরপর প্রশ্ন হল, এভাবে জ্ঞান অর্জন জায়েজ কিনা। এভাবে অর্জিত জ্ঞান শিক্ষা করা জায়েজ কিনা। এই ফতোয়া পেয়েছি হানাফী ফিকহ গ্রুপ থেকে। তারা বলেছেন, উক্ত পদ্ধতিতে জ্ঞান অর্জন করা জায়েজ হবে না। তবে অর্জিত জ্ঞান শিক্ষা করা যাবে। এখানে পাবেন পুরোটা।
ডাক্তারী বিদ্যার বড় দুর্বলতা নিয়ে গতকাল লিখেছি। যন্ত্র নির্ভরতা এই ব্যবস্থার বড় দুর্বলতা। যন্ত্রের উপর অদৃশ্য জগতের নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে।
এখন কথা হচ্ছে, আপনি ডাক্তারের কথাকে গুরুত্ব দিবেন নাকি রুকইয়াহ/হিজামা স্পেশালিস্টের কথাকে গুরুত্ব দিবেন? এই সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে।
ডাক্তারীও একটা বিদ্যা, রুকইয়াহও একটা বিদ্যা। রুকইয়াহর উৎস কিন্তু মানবীয় গবেষনা না। বরং সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবী রাদিয়াল্লাহ আনহুম রুকইয়াহ করেছেন। ডাক্তারি বিদ্যা আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান, রুকইয়াহও আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান – এই যুক্তি শক্তিশালি না। কারণ আগেই বলেছি ডাক্তারিবিদ্যা সুবিন্যস্ত হয়েছে নাজায়েজ পন্থায়। আর রুকইয়াহ এসেছে ওহীর মাধ্যমে। দুটোর তুলনা চলতে পারে না।
আমরা ডাক্তারী চিকিৎসা নিতে মানা করি না। দুইটাই একসাথে চালাতে বলি। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় এসে দুটো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাবে। তখন আপনি কোনটা ফলো করবেন?
রুকইয়াহ করলে অনেকেই বমি করেন। কারও কম, কারও বেশি। বমি করার দ্বারা শরীর থেকে খারাপ জিনিস বের হয়ে যেতে পারে, শরীর হালকা লাগতে পারে। এখন বার বার কেন বমি হয় সেজন্য ডাক্তার বমি অফ হবার মেডিসিন দিল। এখন আপনি কি করবেন?
ডাক্তার বললো মানসিক সমস্যা, রাকি বলছে জ্বিনের সমস্যা। ডাক্তার রিলাক্সেশনের ট্যাবলেট দিল, ঘুমের ট্যাবলেট দিল। আপনি খান আর সারাদিন ঝিমান, খাওয়া-দাওয়া, নামায-গোসলের কোন ঠিক ঠিকানা নেই। রাকি বলবে, ঘুমের ট্যাবলেটের ডোজ কমান। সালাত সময়মত আদায় করেন, নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করেন, পানি খান, গোসল করেন। আপনি কি করবেন? কার কথা শুনবেন?
You have to think. You must decide.
আমি কোনো সিদ্ধান্তমূলক কথা বললাম না। আপনার উপর ছেড়ে দিলাম। বিবেক-বুদ্ধি আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দিয়েছেন।
করোনা কাহিনি (from same Author)
—
করোনার জন্য যেদিন টেস্ট করতে গিয়েছিলাম সেদিন ছিল শনিবার। এর আগের দিন শুক্রবার সর্বশেষ জ্বর ছিল। এরপর আর জ্বর আসেনি। বৃহস্পতি, বুধবার জ্বর ছিল সন্ধ্যায়। সারাদিন ভাল থাকি (জ্বর থাকে না আরকি) সন্ধ্যায় ২ ঘন্টা জর। ছুটিতে ছিলাম বলে ঘরেই বিশ্রাম নিয়েছি। কোথাও যাই নি। একেবারে যে স্ট্রিক্ট আইসোলেশন ছিলাম তাও না। তবুও আলহামদুলিল্লাহ ঘরের আর কারও সংক্রমন ধরা পড়েনি। (এতে প্রমানিত হয় অসুস্থ করার ক্ষমতা ভাইরাসের নিজস্ব না। বরং তা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। )
যাহোক, পজিটিভ রিপোর্ট দেয়া হল রবিবার। সেদিন থেকেই মেডিসিন শুরু। এরপর থেকেই মূল অসুস্থতা দেখা দিল। সহজ কথায় যা বলতে চাচ্ছি ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়েছি। আগে একবার বলেছিলাম, রোগ আমাদের অসুস্থ করেনি মেডিসিন করেছে। আজ সেই কথা পুনরাব্যক্ত করলাম।
দিনে ৯০০ মিলিগ্রামের ধকলে বলবো নাকি করোনার কারণে বলবো, আগের মত দম থাকে না এখন। এটা টের পেয়েছি ব্যাডমিন্টন খেলতে যেয়ে। আগে ৭-৮ (১৮-১৯ সালেও) গেম খেলেও দম ফুরাতো না। এখন ২ গেমও খেলতে পারিনা (২১ সালে)। চিকিৎসা বিজ্ঞান এই কথা স্বীকার করবে? মরে গেলেও না।
অসংখ্য রোগী পাই যারা অভিযোগ করে তার গায়ে জ্বর কিন্তু থার্মোমিটারে উঠে না। ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললেও ডাক্তার বিশ্বাস করে না। ভাবে মানসিক সমস্যা বা কোনো ছল-চাতুরী। টেস্ট করে কিছুই পাওয়া যায় না, অথচ রোগী বিছানা থেকে উঠতে পারে না। মেডিসিনে কাজ করে না।
এসব কথা বললে, চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ুয়া, চিকিৎসাবিদরা নানান এক্সকিউজ দিবে। গবেষনাপত্র (তাদের স্ট্যান্ডার্ডে) ধরিয়ে দিবে। এইগুলা হল, মানসিক রোগ, সিজোফ্রেনিয়া, এন্টিবায়টিক রেজিস্ট্যান্স, ল্যাব রিপোর্ট ভুল, এই সেই, এটা সেটা।
আর আমরা যে ভুক্তভোগী হলাম এর দায় কে নিবে? প্রত্যেকটা মানুষকে জিজ্ঞেস করলে সে কোনো না কোনো ভাবে নিজের দুর্ভোগের কথা বলবে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার কারনে যা সে পুহিয়েছে। আমাদের কথা শোনার, কারণ বের করা কেউ নাই।
সর্দি লাগলে যতবার মেডিসিন নেই ততবার কাশি বুকে বসে যায়। আর যদি না নেই তাহলে ৭-১৫ দিন ভুগিয়ে এমনিতেই সেরে যায়। আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েছেন। এই প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর জন্য সময় দিতে হবে। নাক দিয়ে পড়া শুরু করলো আর মেডিসিন খেয়ে নিলাম এমন হলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ করার সুযোগ পায়?
তাহলে কি আমি ডাক্তারদের কাছে যেতে মানা করছি? না মানা করছি না, কিন্তু কখন যাবেন আর কখন যাবেন না এটা ভাবতে বলছি। আপনার কন্ডিশন আপনি আমার বা ডাক্তারের চেয়ে ভাল বুঝবেন।
আর ডাক্তারবাবুদের জন্য কথা হল, আপনারা অল্টারনেট মেডিসিন নিয়ে আরও পড়াশোনা করেন। আমরা যেটা অল্টারনেট মেডিসিনের কেস বলছি সেখানে গায়ের জোরে তাকে নিজের ফিল্ডে নিয়ে গিয়ে মানসিক সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার নাম দিবেন না। নাহয় রোগি মেডিসিন উপর মেডিসিন খেয়ে জম্বি হয়ে যাবে, সুস্থ হবে না।
জাযাকুমুল্লাহ।