Ruqyah Support BD

জিন-জাদুর সমস্যা, নাকি ন্যাচারাল?

ব্যক্তিগতভাবে রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডি গ্রুপের কোনো পোস্ট ডিলিট করার পক্ষে না। একান্তই অপ্রাসঙ্গিক যেগুলো সেগুলো বাদে (যেমন লাইভ, এফিলিয়েট মার্কেটিং এসব পোস্ট)। কিন্তু কেউ সমস্যা লিখেছে, আর তার পোস্ট এপ্রুভ না করে ডিলিট করে দেয়ার পক্ষে না আমি। আমার এই অবস্থানের পক্ষে যেমন যুক্তি আছে, আমার অবস্থান যারা সমর্থন করেন না তাদের অবস্থানও যৌক্তিক। এই কারণে কিছু পোস্ট আমি এপ্রুভ করি, দেখি যেগুলো অনেকের মতে (গ্রুপে কাজ করেন এবং গ্রুপে কাজ করেন না এমন) রুকইয়াহ সংক্রান্ত না। এই ব্যপারে লিখব এখন।
কোন কোন সমস্যা রুকইয়াহ সংক্রান্ত না – এটা বুঝা শক্ত। বিশেষ করে আপনি যদি বদনজর সংক্রান্ত হাদিসগুলো সামনে রাখেন। এরপর নিজেকে প্রশ্ন করবেন, এই ঘটনাটা কি বদনজরের কারণে হতে পারে?
ধরা যাক, কেউ লিখলো, “আমার মাথাব্যথা করে। পরামর্শ দিন।” মাথাব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। নানা প্রকার থাকতে পারে। বদনজরের কারণে হতে পারে, জিনের কারণে হতে পারে। হতে পারে ডাক্তারী কোনও সমস্যা। যদি ডাক্তারি সমস্যা না হয় তাহলে রুকইয়াহ তো করা উচিত। আর যদি ডাক্তারী সমস্যাও হয় তাহলে রুকইয়াহ করলে ক্ষতি নেই, উপকার আছে। কেউ তো বলছে না, রুকইয়াহ করলে ডাক্তার দেখানো যাবে না। তাহলে রুকইয়াহ করতে দিলে সমস্যা কোথায়? ১-২ সপ্তাহ রুকইয়াহ করে যদি কিছুই বোঝা না যায় তাহলে তাহলে ডাক্তারী চিকিৎসা বা অন্য চিকিৎসা চলবে।
কেউ লিখলো, সকালে ঘুম থেকে উঠলে অনেক হাচি আসে। এই ব্যাপারে পরামর্শ কী? এটাতো বুঝাই যাচ্ছে, কোল্ড এলার্জি। বদনজর, জ্বিন, জাদুর কোনও বিষয় না। এখানেও সুরা ফাতিহার রুকইয়াহ করার সুযোগ আছে। কেউ যদি এলার্জির রুকইয়াহ করে তাহলে তার কোনদিক দিয়ে ক্ষতি হল জানতে চাই। সুরা ইসরার ৮২ নাম্বার আয়াতে কুরআনকে সবার জন্য শিফা বলা হয়েছে। এই শিফা বদনজর, জিন, জাদুর জন্য খাস নয়। বরং সব রোগের জন্য আল কুরআন শিফা।
রোগ ছাড়া অন্য সমস্যার ব্যাপারে বলতে গেলে আবার বদনজরের হাদিসগুলো সামনে আনতে হবে। বদনজর উটকে পাতিলে, মানুষকে কবরে পৌছে দেয়। কোন কিছু যদি তাক্বদিরকে অতিক্রম করতে পারে তা হল বদনজর। হাদিসের এসব ভাষ্যকে সামনে রাখলে ধারনা করা যায় মানবজীবনকে দুর্বিসহ করার জন্য বদনজরের ভূমিকা অনেক।
রুজির ব্যবস্থা না হওয়া, বিয়ে না হওয়া, সংসারে মনোমালিন্যসহ যেসব সমস্যার বাহ্যিকভাবে আরও হাজারো কারণ থাকতে পারে সেগুলোর পিছনে বদনজর, জিন, জাদু সংক্রান্ত বিষয় থাকা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। সুদ, ঘুষ, শাসনব্যবস্থা, লজ্জাহীনতা, আদবহীনতা, অঙ্গবিকৃতি, রুচিবিকৃতিসহ হেন কুকর্ম নেই যা বর্তমানে যুগে হচ্ছে না। কাজেই বদনজর, জ্বিন, জাদুতে আক্রান্ত হওয়া কঠিন কিছু নয়।
যারা দাবি করে সব সমস্যার জন্য রুকইয়াহ সাজেস্ট করা হচ্ছে তাদের এই দাবির ভিত্তি কী? আর রুকইয়াহ সাজেস্ট করলে অসুবিধাটা কী?
এসব কথা আসে কারণ হল, মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না, সংসারে শান্তি নাই টাইপের পোস্ট। ছেলেদের চাকুরি হচ্ছে না টাইপের পোস্ট। এখন এসবের পিছনে যে, বদনজর, জিন, জাদু নেই সেটা রুকইয়াহ না করে অনলাইনের পোস্ট পড়ে রায় দেয়া উচিত হবে?
তাহলে সবারই জিন, জাদুর সমস্যা?
এই প্রশ্নের উত্তর দুইভাগে ভাগ করা যায়। সবাই কি জিন, জাদুতে আক্রান্ত?
– না, সবাই জিন জাদুতে আক্রান্ত না। গ্রুপের মেম্বার সাড়ে ৮ লাখ। এদের মধ্যে সবাই জিন জাদুতে আক্রান্ত না। কাজেই সবারই জিন, জাদুর সমস্যা না।
– আর সবার জিন, জাদুর সমস্যা হলেও অসুবিধা নাই। এটা রোগ-ব্যধি। আর রোগ-ব্যধি সবারই হতে পারে।
আর যদি রোগ নাও হয় তাহলে রুকইয়াহ করে ফেললে অসুবিধা নাই। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অন্তত এতটুকু বোঝা যাবে যে, সমস্যা রুকইয়াহ সংক্রান্ত না।
প্রায়ই এমন হয়, কেউ পোস্ট করলে কমেন্টে জিজ্ঞেস করি,
“এটা কি রুকইয়াহ সংক্রান্ত সমস্যা? বুঝতে পারছি না।”
“এটা কি রুকইয়াহ সংক্রান্ত কিছু? আপনার কেন মনে হল এটা বদনজর, জিন, জাদু সংক্রান্ত।”
এসব কমেন্টে কেউ কেউ নেগেটিভলি নেয়। ভাবে ট্রল করছি, মজা নিচ্ছি। মজা নেয়ার মত কী হয়েছে আমার বুঝের বাইরে। কেউ আবার স্বাভাবিকভাবে নেয়, এরপর সমস্যা বিস্তারিত লিখে। আগের দুই লাইনের পোস্টে যেটা বোঝা যায় নি, তখন বোঝা যায়।
এই যে কাজটা করি, এটাতো না বুঝে করি না। বুঝেই করি। পোস্ট সরাসরি ডিলিট করে দিতে পারি অপ্রাসঙ্গিকের আওয়াত এনে। কেউ আমাকে ধরতে পারবে না। কিন্তু করি না। কারণ এতদিন অপেক্ষা করেছে এপ্রুভালের জন্য এপ্রুভ করে দুইটা কথা জিজ্ঞেস করি। হয়ত আসলেই সমস্যার মধ্যে আছে কিন্তু লিখতে ভুল করেছে।
কিছু কিছু মহিলার পোস্ট কমেন্ট করতে ইচ্ছে হয়। “আরে আপনি স্বামী, শাশুড়িরকে এত দোষ দিচ্ছেন! আপনার পোস্ট পড়ে ভাবছি, কিভাবে তারা আপনাকে সহ্য করেছে! সমস্যার গোড়া তো আপনি নিজেই। আরেকজনের ঘাড়ে দিচ্ছেন কেন?” – কিন্তু করি না। চেষ্টা করি যদি পারা যায় দুটো ভাল কথা বলে, কিছু আমল/রুকইয়াহ দিয়ে দিতে। হয়ত এসব আমলের প্রভাবে সে তার ভুল বুঝতে পারবেন।
এখন প্রশ্ন হল, গ্রুপে কাজ করার আমার এবং আমার মত লোকদের এমন নীতিতে আপনার সমস্যাটা ঠিক কোথায় হয়েছে?


আরও পড়ুন –

মন্তব্য করুন