দুআ’ কে বলা হয় ইবাদতের সারাংশ। ইবাদতের মগজ। দুআ’র গুরুত্ব অপরিসীম। আল কুরআনুল কারীমে আল্লাহু তা’আলা বিভিন্ন নবী – রাসুল আলাইহিমুসসালামের বিপদগ্রস্থ হবার এবং দুআ’র দ্বারা সে বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার ঘটনা উল্লেখ্য করেছেন। কাজেই আমরা সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে সর্বদা আল্লাহর কাছে দুআ’ করবো। বিশেষ করে যারা রুকইয়াহ করছি তারা দুআ’ থেকে গাফেল হব না।
জিন-জাদুর সমস্যায় আক্রান্তরা নিয়মিত দোয়া করতে চাইলে তাহাজ্জুদের সময় সবচেয়ে ভালো। কোনো কোনোদিন ওঠা সম্ভব না হলে এশার সালাতের পর দুই-চার রাকাত নফল আদায় করে দোয়া করবেন।
আমরা দোয়ার আগে কয়েকবার ইস্তেগফার পড়ব। এরপর দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবীজির ওপর দরুদ পড়ব। তারপর একাগ্র চিত্তে, শান্তভাবে দুআ’ করবো। অনুনয়বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে যা যা প্রয়োজন চাইবো। বিশ্বাস রাখবো আমার দুআ’ আল্লাহ নিকট পৌছেছে, (বাহ্যিক প্রভাব দেখা যাক বা না যাক, হতাশ হব না, তাড়াহুড়ো করব না)। দোয়া শেষে আবারও দরুদ পড়ব, আর আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে দোয়া শেষ করব। তাহলে আমাদের দোয়া অধিক মাকবুল হবে ইনশাআল্লাহ।
এখানে দুআ’ কবুলের কিছু সময় এবং স্থান উল্লেখ করা হল। এসব সময়/স্থানে নবীজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো নিজে দোয়া করেছেন, অথবা দোয়া করতে বলেছেন, কিংবা রহমত নাযিলের কথা বলেছেন, তাই এসব সময়ে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
দোয়া কবুলের সম্ভাবনাময় মূহুর্ত ও স্থানগুলো :
1. কদরের রাত
2. ফরজ নামাজের পরপর
3. শেষরাতে (রাতের শেষ তৃতীয়াংশে)
4. প্রতি রাতে নির্দিষ্ট একটা সময় (অজানা)
5. আজান ও ইকামাতের মাঝের সময়
6. আজানের পরপর
7. নামাজের জন্য এবং যুদ্ধের জন্য দাঁড়ানোর সময়।
8. ময়দানে যুদ্ধ যখন প্রচণ্ড হয়।
9. বৃষ্টির সময়
10. জুমার দিনের শেষ সময় (আসরের পর মাগরিবের আগে)
11. জুমার সালাতের পরপর এবং জুমার দিনে খুব সামান্য কিছু সময়। [এটা অজানা, কারও মতে দুই খুতবার মাঝে বিরতির সময়টুকু]
12. ইফতারের পূর্বে রোজাদারের দোয়া।
13. সাহাবায়ে কিরামের ঘটনায়, বুধবার যোহর থেকে আসরের মাঝে দোয়া কবুলের কথা পাওয়া যায়।
14. কল্যাণের নিয়তে জমজমের পানি পান করার সময়। (অর্থাৎ কোনো কল্যাণের নিয়তে জমজম পান করলে)
15. দোয়ায়ে ইউনুস পাঠ করার পর গুরুত্বের সাথে দোয়া করলে।
16. কোনো ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় উপস্থিত স্বজনদের দোয়া
17. মোরগ ডাকার সময়। (কারণ ফেরেশতাদের দেখলে মোরগ ডাকে)
18. হজ্জের প্রতিটি আমলের স্থানে। যেমন – আরাফার ময়দানে আরাফার দিনে। জামরায় পাথর নিক্ষেপের ৩টি স্থানে। কোরবানীর দিন মুযদালিফায় (মাশআরুল হারামে)। সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ে।
19. কা’বার ভেতরে, চারপাশে এবং হাতিমের মাঝে।
20. চাশতের সময়, যোহরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে।
21. যিকিরের মজলিসে।
22. ইসমে আযম পাঠ করে একনিষ্ঠভাবে দোয়া করলে। (ইসমে আজমের ব্যাপারে আলেমদের দীর্ঘ আলোচনা আছে, সেসব দেখে নেয়া যেতে পারে। সবগুলো বিবেচনা করলে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলার এরকম বেশ কিছু ইসম ও সিফাত আছে, যেগুলো পাঠ করে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।)
–
ফুটনোটঃ দোয়া কবুলের সময়ের ব্যাপারে কিছু হাদিস একত্রে পাওয়া যাবে হিসনুল মুসলিমের লেখক ড. সাঈদ কাহ্তানি রহ. এর আযযিকর ওয়াদদুয়া ওয়াররুকা কিতাবে। যেটা বাংলা অনুবাদ হয়েছে “বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া” নামে, মাকতাবাতুল বায়ান থেকে। এছাড়া উস্তায মুফতি হিদায়াতুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ)এর লেখা “দু’আঃ ফযিলত ও কবুল হওয়ার উপায়” বইটাও চমৎকার, মাকতাবাতুল ইসলাম থেকে প্রকাশ হয়েছে। আগ্রহীরা এসব দেখতে পারেন।
দোয়া কবুলের দোয়া। ইসমে আজম?
এরপরে বিভিন্ন হাদিস থেকে আমরা কয়েকটি দোয়ার সংকলন করেছি, এগুলো পাঠ করে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।
নিচের দোয়াগুলো আপনারা দোয়ার শুরুতে বা শেষে পড়ে সাথে অন্যান্য আদব মেনে দোয়া করুন। ইনশাআল্লাহ দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়বে। সম্ভবত এগুলো দোয়ার শুরুতে পড়লেই বেশি ভালো। প্রত্যেকটা দোয়া আলাদা আলাদা হাদিসের। তাই আপনি চাইলে একটা বা একাধিক দোয়াও পড়তে পারেন। চাইলে কয়েকবার করে পড়তে পারেন। প্রথম দুটি দোয়াকে হাদিসে ইসমে আজম-ও বলা হয়েছে।
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيْعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ
23. অর্থ: ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তুমিই সমস্ত প্রশংসার মালিক, তুমি ছাড়া আর কোন দানকারী ইলাহ নাই, তুমিই আসমান ও যমীনসমূহের সৃষ্টিকরী, হে মহান শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ও মহান দাতা, হে চিরঞ্জীব, হে অবিনশ্বর।
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنِّيْ أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
এটার সংক্ষিপ্ত রূপও পাওয়া যায়, যা এরকম :
اللَّهُمَّ إنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
24. অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এবং জানি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই। তুমি এক ও অদ্বিতীয়। তুমি অমুখাপেক্ষী ও স্বনির্ভর। যিনি কাউকে জন্ম দেননি। কারো থেকে জন্মও নেননি। যার সমকক্ষ কেউ নেই।
لَا إِِلَـٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
25. অর্থ: তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত (অপরাধী)।
26. নামাজ শেষ করে – সুবহানাল্লাহ (১০বার) আলহামদুলিল্লাহ (১০বার) আল্লাহু আকবার (১০বার) – পড়ার পরে দোয়া করা।
তথ্যসূত্র:
1. তিরমিযি ৩৫১৩, 2. তিরমিযি ৩৪৯৯, 3. বুখারি ১১৪৫, 4. মুসলিম ৭৫৭, 5. তিরমিযি ২১২, 6-9. আবু দাউদ ২৫৪০, সহিহ ইবনে হিব্বান ১৭৬৪ , 10. আবু দাউদ ১০৪৮, 11. মুসলিম ৮৫৩, বুখারি ৯৩৫, 12. তিরমিযি ২৫২৬, 13. আহমাদ ১৪১৫৩, 14. ইবনু মাজাহ ৩০৬২, 15. তিরমিযি ৩৫০৫, 16. মুসলিম ৯২০, 17. বুখারি ৩৩০৩, 18. তিরমিযি ৪৭৮, বুখারি ১৭৫১, মুসলিম ১২১৮, মুসলিম ১২১৮, 19. বুখারি ৩৯৭, মুসলিম ১৩৩০, 20. ইবনে খুযাইমা ২/২২৩, 21. বুখারি ৬৪০৮, মুসলিম ২৭০০, 22. নাসাঈ ১৩০০, আদাবুল মুফরাদ ৭০৫।
23. ইবনে মাজাহ ৩৮৫৮, 24. ইবনে মাজাহ ৩৮৫৭, 25. তিরমিযি ৩৫০৫ 26. নাসাঈ ১২৯৯,

আরও পড়ুন : দুআ এবং রুকইয়াহ : দোয়ার গুরুত্ব, আদব, কবুল হওয়ার উপায়
মন্তব্য করুন