সমাজে প্রচলিত শয়তানী যাদুর মাঝে এটাও একটা। সেদিন ফুফুর কাছে এর কিছু ঘটনা শুনলাম, আর ইনবক্সেও কজন এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বাচ্চা না হওয়ার জন্য, কিংবা বাচ্চা হতে নিলেও যেন নষ্ট হয়ে যায় এজন্য স্বামী বা স্ত্রী উভয়কেই যাদু করা যায়। এই যাদুতে আক্রান্ত হলে পুরুষের ক্ষেত্রে সাধারণত স্পার্মের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়! এজন্য স্ত্রীর বাচ্চা আসেনা। আর মেয়েরা আক্রান্ত হলে সাধারণত বাচ্চা আসে, কিন্তু অসময়ে গর্ভপাত হয়ে যায়।
যদি দেখা যায়, বারবার গর্ভপাত হচ্ছে, আর ডাক্তাররা এর সন্তোষজনক কোন ব্যাখ্যা দিতে পারছে না, তবে ধারনা করা উচিত কেউ যাদু করেছে। এক্ষেত্রে রুকইয়া করে যাচাই করতে হবে সমস্যা আছে কি না।
এই যাদুতে আক্রান্ত হলে সচরাচর কিছু লক্ষণ দেখা যায়ঃ
১. মানসিক অশান্তিতে থাকা, বিশেষত বিকেল থেকে মধ্যরাত
২. বেশিবেশি মতিভ্রম হওয়া
৩. শর্ট টাইম মেমোরি লস
৪. ঘুমের মাঝে অস্থিরতা, ঠিকভাবে ঘুমাতে না পারা
৫. মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথা
৬. ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেখা
এছাড়াও এই যাদু করতে অনেক সময় যেহেতু জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তাই জ্বিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোও কিছু মিলে যেতে পারে। (জ্বিন সিরিজ ৪র্থ পর্ব দ্রষ্টব্য)
বাচ্চা নষ্ট করার যাদুর জন্য রুকইয়া:
১. জ্বিন সিরিজে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন। রুগীর কাছে বসে যথাসম্ভব জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়বেন। হয়তোবা জ্বিন চলে আসবে, তখন জ্বিন সিরিজে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে ডিল করবেন। জিজ্ঞেস করুন কেন ক্ষতি করছে, যাদুর জিনিশ কোথায় রাখা আছে, ইত্যাদি! এরপর জ্বিন বিদায় করবেন।
২. আর যদি জ্বিন না আসে তবে আরো ২/৩বার রুকইয়া করে দেখুন। সমস্যা যদি থাকে তাহলে তো অবশ্যই লক্ষণ দেখা যাবে। যেমন পেট ব্যথা, মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি শুরু হয়ে যাবে। মেরুদণ্ড বা পিঠে ব্যথা করতে পারে।
এরপর তবে এক গ্লাস পানি নিয়ে “আয়াতুল কুরসি, সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” এই আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন। এবং সেটা এখনি খেতে বলুন, যদি লালচে বা কালোর মত বমি হয়ে কিছু বের হয়ে যায় তাহলে ভালো, সহজেই সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
চাইলে “রুকইয়ার কমন আয়াত” থেকে এগুলো সহজে পড়তে পারবেন।
৩. সবশেষে নিচের প্রেস্ক্রিপশন সাজেস্ট করুন। এবং একমাস পর দেখা করে আপডেট জানাতে বলুন। পুরাপুরি ভালো হতে অনেকের ৩ মাস পর্যন্ত লাগে। তিনমাস প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করার পর আবার রুকইয়া করে দেখুন। সমস্যা ভালো হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ, নইলে আবার একই সাজেশন দিয়ে দিন। ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে।
বাচ্চা নষ্ট করার যাদুর জন্য সেলফ রুকইয়া:
১. এই যাদুতে যদিওবা অনেক সময়ই জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তবুই নিজে নিজে রুকইয়া করা ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট হবে। তবে কোন আলেমের সাথে যোগাযোগ রাখা ভালো। খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে, এই চিকিৎসায় যেহেতু একটু সময় লাগতে পারে, তাই মানসিক সাপোর্ট দেয়ার মত কেউ পাশে থাকা জরুরি। বাচ্চা হওয়া নিয়ে সমস্যা যেহেতু, তাই স্বামী-স্ত্রী এঁকে অপরের সহায়তা করতে পারেন এক্ষেত্রে!
২. সেলফ রুকইয়ার জন্য প্রথমে পাকসাফ হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। এরপর আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যার কথা বলে প্রাণভরে দু’আ করুন, তারপর দরুদ ইস্তিগফার পড়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন। পানি রাখুন কাছে। এরপর প্রথমে সিহরের রুকইয়া বা অন্য কারো কমন রুকইয়া শুনুন। সমস্যা থাকলে তো বুঝতে পারবেন, যে যাদুর সমস্যা আছে।
৩. এরপর এক গ্লাস পানি নিয়ে “আয়াতুল কুরসি, সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” এই আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন। এবং খেয়ে নিন, কষ্ট হলেও খাবেন। সাথেসাথে লালচে বা কালোর মত বমি হলে ভালো, তাহলে সহজেই সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪. একমাস নিচের প্রেসক্রিপশন ফলো করুন, তারপর আবার শুরু থেকে রুকইয়া করে দেখুন, সমস্যা বুঝতে পারলে চিকিৎসার মেয়াদ আরও ১মাস বাড়িয়ে নিন।
প্রেসক্রিপশন:
১. সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, বাক্বারার শেষ রুকু, আলে ইমরানের শেষ রুকু, ফালাক্ব, নাস পড়ে কালোজিরার তেলে ফুঁ দিন। এই কালোজিরার তেল প্রতিদিন ঘুমানোর আগে বুকে, কপালে, এবং মেরুদণ্ডে মালিশ করবেন।
২. উপরের সুরা এবং আয়াতগুলো পড়ে খাঁটি মধুতে ফুঁ দিন। এই মধু ১ চামচ করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
৩. প্রতিদিন সকালে সুরা সফফাত পড়বেন, নইলে অন্তত শুনবেন।
৪. প্রতিদিন রাতে সুরা মা’আরিজ পড়বেন, নইলে শুনবেন।
৫. কোন কারীর সাধারণ রুকইয়া প্রতিদিন কমপক্ষে ৩বার শুনবেন। (ডাউনলোড লিংক – রুকইয়াহ অডিও )
৬. সকাল সন্ধ্যার মাসনুন আমল করবেন, বিশেষত সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস তিনবার পড়বেন। মাসনুন দুয়া পড়তে ক্লিক করুন
৭. ঘুমের আগে তিনবার সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে বুলিয়ে নিবেন। আর আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবেন।
৮. ফজর এবং আসরের পর “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া’হদাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল ‘হামদ, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর” এটা ১০০বার পড়া। কোনোদিন না পারলে অন্তত ১০বার পড়বেন।
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
চাইলে “রুকইয়ার আয়াত, দোয়া এবং অন্যান্য পিডিএফ” থেকে এগুলো সহজে পড়তে পারবেন।
লক্ষণীয়:
১। এই সমস্যায় রুকইয়া তো করবেনই, কিন্তু মেডিকেল টেস্টে যদি কোন অসুখ ধরা পড়ে যার জন্য সমস্যা হচ্ছে, তাহলে পাশাপাশি ডাক্তারের কাছে সেটার জন্য চিকিৎসাও করাবেন।
২। সমস্যা ভালো হতে ৩ মাস পর্যন্ত লাগতে পারে, ধৈর্য ধরে চালিয়ে যেতে হবে। রুকইয়ার সময় অনেক কষ্ট হলেও বাদ দিবেন না।
৩। কয়েকদিন করেই যদি ভালো ফিল করতে লাগেন, তখন বাদ দিয়ে দিবেন না। বরং আরও দুই-এক সপ্তাহ রুকইয়া চালিয়ে যান।
আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। আমীন।
মন্তব্য করুন