আল্লাহর রহমতে আমরা রুকিয়া শারইয়্যাহ সিরিজের প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছি, আজকের আমরা যাদু বা সিহরের চিকিৎসা বিষয়ে কিছু ঘটনা জানবো। ঘটনা বলা হয় মূলত উদাহরণের জন্য, থিওরির সাথে উদাহরণ থাকলে আলোচনা জীবন্ত হয়ে ওঠে। মনে রাখাও সহজ হয়। আল্লাহর সুবহানাহু তা’আলা কোরআনুল কারিমকে অতুলনীয় সব উপমা দিয়ে সাজিয়েছেন। আর হ্যাঁ! আমাদের উচিত ছিল প্রতিটা আলোচনার সাথে সেই প্রাসঙ্গিক উদাহরণ উল্লেখ করা, কিন্তু লেখার আকার বড় হয়ে গেলে অনেকে শুরুতেই ঘাবড়ে যান, পড়তে সাহস পান না। । এজন্য ঘটনা বা গল্পগুলোকে আমরা এক ধারে জমা করলাম। এবং এই পর্বেও আমরা ঘটনাগুলো খুবই সংক্ষেপে বর্ণনা করবো, অস্বাভাবিক বা ছন্দহীন লাগলেও করার কিছুই নাই, আমাদের আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। চলুন শুরু করা যাক…।
বিয়ে আটকে রাখার যাদু
প্রথম ঘটনা বরিশালের এক ভাইয়ের উনার বিয়ে হচ্ছিল না, উনি সন্দেহ করছিলেন কেউ হয়তো কিছু করেছে। পরে এক হযরতের পরামর্শে উনি রুকইয়ার গোসল করা শুরু করেন প্রতিদিন। দু’সপ্তাহের মাঝে আলহামদুলিল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যায়, এবং উনার বিয়েও হয়ে যায়।
পরের ঘটনা মিশরের! এক মেয়ের সমস্যা ছিল সে এমনিতেই রাজি থাকে, কিন্তু বিয়ে আসলেই মাথা খারাপ হয়ে যায় এবং ভেঙ্গে যায় অথবা না করে দেয়। পরে আবার বিশেষ কোন কারণ খুঁজে পায়না কেন বিয়ে ভাঙল! এক শাইখের কাছে গেলে উনি রুকিয়া করেন, এবং জ্বিন চলে আসে। জিনটা মুসলিম ছিল, স্বাভাবিকভাবে দাওয়াত দেয়াতেই সে রাজি হয়ে চলে যায়, এবং পরে সব ঠিক হয়ে যায়।
শেষ ঘটনা আমার এক রিলেটিভের, তার ওপর অনেকগুলো যাদু করা ছিল, বিয়ের জন্যও ছিল। নিয়ম মাফিক ৩দিন রুকইয়া করার পরেই সে অনেক বেটার ফিল করছিল, পাশাপাশি প্রায় দুই সপ্তাহ কমবেশি রুকইয়া শোনাও চলছিল। তখন কয়েকদিনের মধ্যেই বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছিল ওর জন্য। কিন্তু এখনই যেহেতু বিয়ের প্ল্যান নেই, তাই দুঃখজনকভাবে না করে দেয়া লেগেছে সবগুলোতে। [আল্লাহ যেন তাঁর জন্য সময়মত ভালো জুটি মিলিয়ে দেন, আমিন]
বিচ্ছেদ ঘটানোর যাদু
এক লোকের সমস্যা ছিল, বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর সাথে মিলছিল না। সারাদিন ভালোই থাকে সব। কিন্তু উনি অফিস থেকে ফিরে বাসায় ঢুকলেই স্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে যায়, খারাপ ব্যবহার শুরু করে দেয়। পরে রুকইয়া করা হলে উনার স্ত্রীর ওপর জ্বিন চলে আসে। জ্বিন চলে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে, আর বলে ‘আমি ফেরত গেলে যে যাদুকর আমাকে পাঠিয়েছে সে আমাকে মেরে ফেলবে’। পরে যে শায়খ রুকইয়া করছিলেন, উনি জ্বিনকে তাওবাহ করিয়ে আয়াতুল কুরসি শিখিয়ে দেন। বলেন নিয়মিত পড়তে, তাহলে আর কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবেনা। এরপরে জ্বিন চলে যায়, আর উনাদের সম্পর্কও স্বাভাবিক হয়ে যায়।
আসক্ত বা বশ করার যাদু
ঘটনা মিসরের। এক লোকের সমস্যা ছিল, বাড়ির বাহিরে সে ঠিকমতো থাকতেই পারতো না। শুধু বউয়ের কাছে ফেরার জন্য মত চাইতো, বাড়িতে আসলেও সারাদিন বউয়ের পিছে পিছে ঘুড়েন। পরে উনার সন্দেহ হলে উনি শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালামের কাছে যান, উনি রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে তিন সপ্তাহ পানি খেতে এবং গোসল করতে বলেন। তিন সপ্তাহ পরেও কিছুটা প্রভাব ছিল, তখন উনি আবার একই রুকইয়া করেন, পরে আলহামদুলিল্লাহ একদম ঠিক হয়ে যায়।
আমরা বলেছিলাম এই যাদুর সবচেয়ে বেশি উল্টাপাল্টা হয়। এক মহিলা তাঁর স্বামীকে বশ করার যাদু করতে এক কবিরাজের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু যাদু উল্টা কাজ করেছিল, তাঁর স্বামী হঠাত করেই প্রচণ্ড রাগারাগি শুরু করে দেয়, এবং কয়েকদিন না যেতেই তালাক দিয়ে দেয়!! [ভালো স্টোরি ছিল এটা!]
শারীরিকভাবে অসুস্থ বানানোর যাদু
একটা ছেলে পোলিও রোগীর মত শরীর অবশ হয়ে ছিল, ডাক্তারদের চিকিৎসায় কোন লাভ হয়নি। পরে শায়েখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালামের কাছে এলে উনি রুকইয়া করেন, এবং কিছু আয়াত পড়ে কালোজিরার তেলে ফু দিয়ে প্রতিদিন অবশ অঙ্গগুলোতে মালিশ করতে বলেন, কয়েক সপ্তাহের মাঝেই আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয়ে যায়। আরেকটা মেয়ের ঘটনা, একমাসের বেশ সময় ধরে কথা বলতে পারছিল না, তাঁর সামনে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়া শুরু করলে একটু পর সে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে ওঠে! এবং সুস্থ হয়ে যায়।
পাগল বানানোর যাদু
এক সাহাবি নতুন মুসলমান হয়েছিলেন, উনি ইসলাম গ্রহণ করে ফিরে যাওয়ার সময় এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে একটা পাগলকে সেকল দিয়ে বাধা ছিল। গোত্রের একজন এসে সাহাবিদের বলল, আপনাদের একজন সাথি (মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাকি অনেক কল্যাণের বিষয় নিয়ে এসেছেন, তাহলে এই পাগলের জন্য কি কোন সমাধান আছে? তখন নতুন ইসলাম গ্রহণ করা ওঁই সাহাবি কয়েকবার সুরা পরে পাগলের গায়ে থুতু নিক্ষেপ করেন এবং সে সুস্থ হয়ে যায়। (আরেক বর্ণনায় আছে তিনদিন সকাল-বিকাল উনি এটা করেছেন) পরে ওঁই গোত্রের লোকেরা ১০০টি ছাগল দিল। তিনি এসে রাসুল স. কে জানালেন এব্যাপারে। রাসুলুল্লাহ স. তুমি কি সুরা ফাতিহা ছাড়া অন্য কিছু পড়েছিলে? সাহাবি বলেন, একদমই না। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি সেসব (ছাগল) নিতে পারো, কত লোক আছে যারা ভ্রান্ত ঝাড়ফুঁক করে কামাই করে, তুমি নিশ্চয় সঠিক রুকইয়া করেছ। [সুনানে আবি দাউদ, সনদ সহিহ]
সেক্সুয়াল সমস্যার জন্য রুকইয়া
এক যুবক বিয়ের রাতে হঠাত করেই যৌন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, এবং কিছুদিনের মধ্যেই পাগল হয়ে যায়। সমস্যা মূলত ছিল, তাঁর স্ত্রী কবিরাজের কাছে গিয়েছিল যেন, সে বাদে অন্য কোন মেয়ের প্রতি আকর্ষণ না থাকে এমন তাবিজ/যাদু করতে। অর্থাৎ আসক্ত করার যাদু, কিন্তু এখানেও উল্টাপাল্টা ইফেক্ট হয়, পরে ওঁই কবিরাজের কাছে গিয়ে দেখে সে কয়েকদিন আগেই মরে গেছে! এরপর সে শায়েখ ওয়াহিদের কাছে গেলে উনি বরই পাতা জোগাড় করতে বলেন, না পেলে কর্পূরের পাতা দিয়ে রুকইয়া করেন। সেগুলো পিষে আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে ফুঁ দেন আর পানিতে মিশান। এরপর ওঁই পানি খেতে বলেন আর গোসল করতে বলেন। গোসল করার পরপরই যুবকটি সুস্থ হয়ে যায়।
পরের ঘটনা গত সপ্তাহের, এক ভাই ইনবক্সে নক করলেন। কিছু বলতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু লজ্জা পাচ্ছিলেন। পরে জানালেন, উনি ওয়াইফের সাথে ইয়ে করতে পারছেন না, বিয়ের পর আস্তে আস্তে উনি সক্ষমতা হারিয়েছেন। আগে এমন সমস্যা ছিল না। উনাকে এবিষয়ে লেখাটার লিংক দিলাম, তিনদিন ওভাবে গোসল করা আর পানি খাবার পর আপডেট জানাতে বললাম। তিনদিন পর জানালেন, আলহামদুলিল্লাহ তিনি এখন পারছেন। [সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য]
এছাড়া বিক্ষিপ্ত আরও কিছু ঘটনা আছে, নিজের কিছু অভিজ্ঞতা আছে। সব তো এখানে উল্লেখ করা সম্ভব না। এক্ষেত্রে শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালামের الصارم البتار في التصدي للسحرة الأشرار এবং وقاية الإنسان من الجن والشيطان গ্রন্থ দুটিতে এবিষয়ে অনেকগুলো ঘটনা আছে, আগ্রহীরা দেখে নিতে পারেন। আরেকটি কথা হচ্ছে, একটা প্রবণতা দেখা যায়, কাউকে দিয়ে রুকইয়া করানোর পর সুস্থ হয়ে গেলে অনেকেই আর কোন যোগাযোগ করে না। আপডেট জানায় না। সত্যি কথা হচ্ছে, সাকসেস স্টোরি জমা হলে ভবিষ্যতে কাজের উৎসাহ পাওয়া যায়। এজন্য সুস্থ হলে বা অবস্থার উন্নতি হলে জানানো উচিত।
আর একটা বিরাট বড় প্রশ্ন থেকেই গেছে “যাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচতে কি করবো? যেন কেউ আমাকে যাদু না করতে পারে?”
– হুম! আগামী পর্বে এই আলোচনা করে যাদুগ্রস্তের চিকিৎসা সিরিজের ইতি টানবো ইনশাআল্লাহ!
মন্তব্য করুন