অন্যের জন্য রুকইয়াহ করার ভাল মন্দ এবং করনীয়

নিজের সমস্যার জন্য যেভাবে রুকইয়াহ করা হয় একইভাবে অন্যের সমস্যার জন্য নিজে রুকইয়াহ করা। উদাহরণ, আব্দুর রহমানকে জাদু করেছে মিনু কবিরাজ। এখন আব্দুর রহমানকে রুকইয়াহ করা সম্ভব না। আব্দুর রহমানের ঘরওয়ালী আব্দুর রহমান যেন সুস্থ হয়ে যায় তথা জাদুমুক্ত হয়ে যায় সেজন্য জাদু নষ্টের রুকইয়াহ করবে। এটাই অন্যের নিয়তে/জন্য রুকইয়াহ করা।

গ্রুপে প্রায়ই পোস্ট আসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা। এখন স্ত্রী রুকইয়াহ করবে। স্বামীকে করানো সম্ভব না। স্বামীর জন্য কিভাবে কি করা যায়? এছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও অনেকেই পোস্ট করেন যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিকে রুকইয়াহ করানো সম্ভব না। কোনো রাক্বীর সাহায্য নেয়ারও সুযোগ নেই। এসব ক্ষেত্রে তাহলে কি করা? এসব ক্ষেত্রেই অন্যের নিয়তে রুকইয়াহ করার ধারণা পাওয়া যায়। (তবে যারা করোলাকে না পেলে বাচবো না, পটল ছ্যাকা দিয়েছে বলে মরে যাব ধরনের রোগে ভুগছেন তাদের কথা ভিন্ন।)

দলিলঃ
১। এই ধরনের রুকইয়াহ করা সর্বোচ্চ জায়েজ হতে পারে।
২। অনেকেই এভাবে রুকইয়াহ করাকে পছন্দ করেন না। অনুৎসাহিত করেন। আমাদের মধ্যেও এমন ব্যক্তি আছেন যারা পছন্দ করেন না।
৩। আমি পছন্দও করি না, অপছন্দও করি না। তবে উৎসাহিত করি না। অগত্যা কি আর করা ধরনের মনোভাব পোষণ করে থাকি। (আমার পছন্দ অপছন্দ কোনো শরঈ দলিল নয়। শুধু উলেখ্য করা উদ্দেশ্য)

উপমাঃ
ধরেন, আমি অসুস্থ। এখন ওষুধ কি আপনি খেলে হবে? নাকি আমাকেই খেতে হবে? আমাকেই খেতে হবে। তবেই রোগের উপশম হবে। তাহলে অন্যের জন্য রুকইয়াহ কি ফলপ্রসু নয়? ফলপ্রসু, তবে কেমন ফলপ্রসু সেটা বুঝতে আরেকটি উপমা দেই।
ধরেন, আপনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবেন। এসিবাসে করে যেতে পারেন, নন এসিতে করে যেতে পারেন, বিমানেও যেতে পারেন। আবার হাটা শুরু করলেও একসময় চট্টগ্রাম পৌছানো যাবে। এখন নিজের রুকইয়াহ নিজে করা যদি এসি বাসে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া হয় তাহলে অন্যের জন্য রুকইয়াহ করা হল ঢাকা থেকে হেটে চট্টগ্রাম যাওয়া। আদতে এর চেয়েও দূরবর্তী হতে পারে।

কেন এর দরকার হয়?
১। অসুস্থ ব্যক্তি দূরে থাকে এবং রুকইয়াহ করতে অপারগ।
২। অসুস্থ ব্যক্তি দূরে থাকে এবং রুকইয়াহ করবে না।
৩। অসুস্থ ব্যক্তি রুকইয়াহ করতে করতে হাপিয়ে গিয়েছে, তাকে উৎসাহ প্রদান করতে।
৪। অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থতার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত তথা তরান্বিত করতে। ইত্যাদি।

প্রকারভেদঃ
◼ কোনো সুস্থ ব্যক্তি (যার রুকইয়াহ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নেই) কোনো অসুস্থ ব্যক্তির (যার রুকইয়াহ সংক্রান্ত সমস্যা আছে) জন্য রুকইয়াহ করবে।
◼ কোনো অসুস্থ ব্যক্তি (যার রুকইয়াহ সংক্রান্ত সমস্যা আছে) কোনো অসুস্থ ব্যক্তির (যার রুকইয়াহ সংক্রান্ত সমস্যা আছে) জন্য রুকইয়াহ করবে।


📗 কিভাবে অন্যের জন্য রুকইয়াহ করবেন?

অন্যের জন্য কিভাবে করবে বা করা উচিত বলে মনে করি সেটা লিখলাম।
◼ প্রথমে অযু করে নেয়া
◼ যেকোনো এস্তেগফার পড়া কয়েকবার।
◼ কয়েকবার যেকোনো দুরূদ শরীফ পড়ে নেয়া।
◼ দুই রাকাত সালাত আদায় করে (হারাম, মাকরুহ ওয়াক্তে নয়) আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
সুরক্ষার আমল গুলো করে দুই হাতের তালুতে ফু দিয়ে সারা গায়ে বুলিয়ে নেয়া। (এটা আবশ্যক)
◼ এরপর রোগীর সমস্যার ধরন অনুযায়ী বদনজর, জিন, জাদুর আয়াতগুলো তেলাওয়াত করা। কমন আয়াতগুলোও তেলাওয়াত করা যেতে পারে। কমপক্ষে ৪৫ মিনিট তেলাওয়াত করা। আরও বেশি করতে পারলে আরও ভাল। দিনে একাধিক বার করতে পারলে আরও ভাল।
শেষ হলে রুকইয়াহ গোসল করে নেয়া (যেকোনো রুকইয়াহর গোসল)।
আয়াতে শিফা পড়ে পানিতে ফু দিয়ে খাওয়া।

🔶 সতর্কতাঃ
১। রোগী যদি স্বপ্নে আপনাকে দেখে তাহলে আমার মতে তার জন্য রুকইয়াহ করা কমিয়ে দেয়া। তাকে নিজে নিজে রুকইয়াহ করতে উৎসাহ প্রদান করা।
২। মনে রাখতে হবে, রুকইয়াহর জগত (তথা জিন, যাদুর জগত) খুবই রহস্যময় জগত। এখানে ধোকায় পড়ার সম্ভবনা খুবই বেশি। কাজেই স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া কোনোকিছু বিশ্বাস না করাই ভাল হবে।
৩। সুস্থ ব্যক্তি রুকইয়াহ করার সময়/পরে যদি রোগীর সমস্যা নিজের মধ্যে অনুভব করেন বা অন্য কিছু অনুভূব করেন যা আগে ছিল না তাহলে তার নিজের জন্য সিরিয়াসলি রুকইয়াহ করা উচিত হবে এবং সকাল, সন্ধার ও ঘুমের আগের মাসনুন আমল আরও গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। যতদিন অন্যের জন্য করবে ততদিন নিজের জন্যও করবে। সেক্ষেত্রে বদনজরের রুকইয়াহ/ডিটক্স আমার পছন্দ।

শেষকথাঃ
১। আরও কোনো কথা থাকলে পরে যোগ করা হবে ইন শা আল্লাহ। [মূল লেখার লিংক]
২। এই লেখাটা লেখার কথা ছিল আরও দেড় দুই বছর আগে। তো যাদের জন্য লিখবো বলেছিলাম তাদের কাছে দুঃখিত।

মন্তব্য করুন