বোবা ধরার সমস্যা ও করণীয়…

রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডির পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদ মোবারক। তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না-ওয়ামিনকুম সালিহাল আ'মাল। 


বোবা ধরার শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। বোবা ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস হল ঘুমের মধ্যে অথবা শুয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ অল্প সময়ের জন্য কথা বলতে না পারা এবং নড়াচড়া করতে না পারার একটা অবস্থা। এই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তি যদিও নিজের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকেন। এরসাথে কখনো বুকে একধরনের চাপ অনুভব করা, ভয় পাওয়া, কারো নিশ্বাস অনুভব করা ইত্যাদি থাকতে পারে।


বোবা ধরা যেসব কারণে হতে পারে :

শারীরিক মানসিক কারণে।
মস্কিষ্কের অসামঞ্জস্যতা, ভারসাম্যহীন খাদ্যাভাস, অপরিমিত ঘুম, উপুর হয়ে ঘুমানো ইত্যাদি কারণে এই সমস্যা হতে পারে। মানসিক কারণে বোবা ধরার সমস্যা নিয়মিতভাবে হওয়ার সম্ভাবনা কম। এক্ষেত্রে অনেকদিন পরপর এরকম হতে পারে। তাই বোবা ধরার সমস্যা হলেই জিন জড়িত এরকম বলে দেয়া ঠিক না।

জ্বিন সংক্রান্ত কারণে।
মানুষ যখন ঘুমে থাকে তখন সে একধরনের অবচেতন অবস্থায় চলে যায়। তাই এই সময়ে শয়তান যতভাবে সম্ভব আক্রমণ করার চেষ্টা করে। বিশেষ করে ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে উঠার সময়টাতে। শয়তান জ্বিন মানুষকে মানসিকভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে ভয় দেখাতে অথবা তার দখল নিতে চেষ্টা করে। শারীরিকভাবে আক্রমণ করা অনেকভাবে হতে পারে। যেমন- বোবা ধরা, আঘাত করা, শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করা ইত্যাদি। (শারীরিক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করলে তাকে আসক্ত জ্বিন হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পোস্ট আছে)।

সমস্যার সমাধান:

প্রথম কথা হল, আল্লাহ যা ফরজ করেছেন(যেমন- নামাজ, পর্দা ইত্যাদি) সেগুলো ঠিকমত আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই, অতঃপর সেই সর্বক্ষণ তার সাথী হয়ে থাকে” । সুরা যুখরুফ, আয়াত ৩৬

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফরজ কাজের পাশাপাশি মাসনুন আমলগুলো করলে আল্লাহর ইচ্ছায় বোবা ধরার সমস্যা ভালো হয়ে যায়। আল্লাহর কালাম সকল রোগের শিফা। আপনার সমস্যা মানসিক অথবা জিনগত যে কারণেই হোক ঘুমানোর আগে অযু করে মাসনুন আমল করে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। দিনের কোন সময়ে অথবা রাতে যখনই ঘুমাবেন তার আগে অযু করে মাসনুন আমল করে নিতে চেষ্টা করবেন। কী কী করবেন পয়েন্ট আকারে বলি-

১. অযু করে ডানকাতে ঘুমাবেন। উপুর হয়ে ঘুমাবেন না।
২. শোয়ার পূর্বে আউযুবিল্লাহ পড়ে কাপড় বা ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ভালোমত ঝেড়ে নিবেন।
৩. আয়াতুল কুরসি, সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বেন।
৪. সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এভাবে ৩ বার করবেন। মানে প্রতিটা সুরা একবার করে পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। তারপর আরো দুইবার এভাবে করবেন। মোট তিনবার।
৫. ঘুমানোর আগের দোয়া পড়া। (اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনারই নামে মরে যাই আবার আপনারই নামে জীবন লাভ করি।’
৬. ঘুম থেকে উঠে দোয়া পড়া। (الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ)
অর্থ : ‘সব প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করেছেন এবং তার দিকেই আমাদের পুনরুত্থান।’

~ বোবা ধরার সমস্যার পাশাপাশি যদি আপনার জিন আক্রান্তের অন্যান্য লক্ষণ মিলে যায় তাহলে আপনার উচিত উপরে বলা আমলগুলোর পাশাপাশি রুকইয়াহ করা। জিন আক্রান্তের লক্ষণগুলো এখানে পাওয়া যাবে- জিনের আসরের লক্ষণ এবং জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়।

এক্ষেত্রে দুই একটা মিলে গেলে চিন্তার কিছু নেই ইনশাআল্লাহ। ৪টা বা তারও বেশি লক্ষণ মিলে গেলে আপনার উচিত অভিজ্ঞ রাকীর পরামর্শ অনুযায়ী রুকইয়াহ করা। অথবা আপনি চাইলে সমস্যা সংক্ষেপে লিখে গ্রুপে পোস্ট করতে পারেন।

~ প্রতিদিন রাতে সুরা মুলক তিলাওয়াত করা।

~ পরিমিত ঘুমানোর চেষ্টা করবেন নিয়মিত। ঘুমের আগে ভরপেট না খাওয়া বা খাওয়ার পর পরই কোন হাটাহাটি বা কাজ না করে ঘুমাতে যাবেন না।

দ্রষ্টব্যঃ মহিলাদের পিরিয়ড অবস্থায়ও সকাল সন্ধ্যা ও ঘুমানোর আগের মাসনুন আমল করা যাবে। এই লিংকে বিস্তারিত পাবেন।

পড়তে পারেন – রাত্রিতে জ্বিনের বিব্রতকর সমস্যা
আরও পড়তে পারেন – নিদ্রাহীনতা এবং ঘুম সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায় করণীয়


মন্তব্য করুন