প্রশ্ন:
জিনের রোগীর রুকইয়াহ (কুরআনের মাধ্যমে চিকিৎসা) করতে গিয়ে আক্রমণাত্মক বা সহিংস জিনের মুখোমুখি হলে কীভাবে সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব?
উত্তর:
আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই তাঁর সৃষ্টি করা সব খারাপ জিনিসের ক্ষতি থেকে, আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদেরকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেন।
প্রথমেই মনে রাখা জরুরি, খুব ভায়োলেন্ট হয়ে যায় এমন জিনের ঘটনা অনেক কম। বেশিরভাগ জিন হয়তো চিৎকার, ভয় দেখানো কিংবা হুমকি দিয়ে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করে, তবে সত্যিই যারা আক্রমণ করে তাদের সংখ্যা খুবই সামান্য। এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি।
যদি আপনি সত্যিই ভায়োলেন্ট জিনের মুখোমুখি হন, তাহলে কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার:
১. সর্বদা মনে রাখবেন, আপনার সুরক্ষা একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই আসে – তাঁর উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন। আল্লাহই পরাক্রমশালী, সর্বশক্তিমান। তিনি যদি আপনাকে রক্ষা করেন, তাহলে কেউ আপনাকে ক্ষতি করতে পারবে না।
২. দোয়া করবেন, বিশেষ করে শত্রুকে পরাস্ত করার জন্য আল্লাহর কাছে নিয়মিত প্রার্থনা করুন। দোয়া কবুলের উপায়গুলো মাথায় রাখুন। শত্রুর মুখোমুখি হলে বা ক্ষতির আশংকা করলে পড়ার দোয়াগুলো পড়ুন। (হিসনুল মুসলিম দ্রষ্টব্য)
৩. জিনকে শারীরিক শক্তি দিয়ে হারানোর চেষ্টা করবেন না। অনেকেই এই ভুলটি করেন। এরচেয়ে বরং কুরআনের মাধ্যমে পরাস্ত করার চেষ্টা করুন।
আমি একবার এমন পরিস্থিতিতে ছিলাম, যেখানে জিনটি আমার হাত মচকে দিতে চেয়েছিল। আমি কিছু কুরআনের আয়াত পড়লাম আর ফুঁ দিলাম, সে সাথে সাথেই হাত ছেড়ে দিল। শারীরিক শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে গেলে তারা হয়তো জয়ী হতে পারে, কিন্তু কুরআনের সাহায্য নিলে তারা পরাজিত হয়।
** কিছু আলেম পরামর্শ দিয়েছেন, জিন আক্রমণাত্মক হলে বা অতিরিক্ত চিৎকার করলে কানের কাছে ‘সুরা নিসা, ৭৬নং আয়াত’ বারবার পড়তে। হালকা শাস্তি দিতে। এছাড়া রুকইয়ার পানি দিয়ে ওযু বা রুকইয়ার গোসল করিয়ে দিলেও জিন দুর্বল হয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
৪. নিজের সুরক্ষার পাশাপাশি রোগীর সুরক্ষাও নিশ্চিত করুন। ঘরে বা হাতের কাছে এমন কিছু রাখবেন না-যা রোগীর জন্য বিপদজনক হতে পারে, কারণ বেশিরভাগ সহিংস জিন প্রথমে রোগীকেই আক্রমণ করে। রোগীর এতটা কাছে বা এমন পজিশনে থাকবেন না যে চাইলেই আপনাকে আঘাত করতে পারে।
৫. জ্বিনদের আপনাকে ভয় দেখানোর সুযোগ দেবেন না। জিনরা আপনার প্রতিক্রিয়া খেয়াল করে। আপনি যদি তাদেরকে আঘাত করতে বা চিৎকার-চেঁচামেচি করতে বা ভয় দেখাতে দেন, সে বারবার তা করতে থাকবে। এরকম ক্ষেত্রে বলে দিবেন, খারাপ আচরণ করলে রুকইয়াহের মাধ্যমে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
৬. প্রয়োজনে রুকইয়াহর পানি স্প্রে বোতলে রেখে তা ব্যবহার করুন। যদিও সব জিন এতে সমান প্রভাবিত হয় না, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এটি কার্যকরী। এছাড়া রুকইয়ার তেল, আতর ইত্যাদিও ব্যবহার করা যায় অবস্থাভেদে।
৭. অন্যদের সাহায্য নিন। রোগীর আত্মীয়দের ভালোভাবে ধরে রাখ বলুন। একাধিক মানুষের উপস্থিতি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং রোগী ও নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
৮. শক্তিশালী কাউকে নিরাপদে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক কিছু পদ্ধতি শিখে রাখুন। দু’এক দিন সময় নিয়ে দক্ষ কারো কাছ থেকে কিছু সুরক্ষামূলক কৌশল শিখে নিন। পূর্বে যেমন বলেছিলাম, এটি ১০০% সমাধান না দিলেও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং রোগীকে সামাল দিতে সহায়ক হবে।
৯. রোগীকে শারীরিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন। জীন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে থাকাবস্থায় অনেকে উত্তেজিত হয়ে বেদম প্রহার করেন। এমনটা অনুচিত, এতে আইনি ঝামেলায় পড়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষতঃ যেসব দেশে রুকইয়াহকে বৈধ চিকিৎসা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, সেখানে প্রহার করলে বা কোনো শারীরিক ক্ষতি হলে আপনি আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন।
১০. এরপরেও সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে নিজের সুরক্ষার দিকে মনোযোগ দিন এবং রোগীর জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন।
মনে রাখবেন, আপনার শত্রুদের উপর আপনি তাদের শক্তির জন্য পরাজিত হন না বরং এটা হয় আপনার পাপের কারণে। তাই নিজের ভুলগুলোর জন্য তাওবা করুন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
আল্লাহ সবকিছু ভাল জানেন।
উস্তায মুহাম্মাদ টিম হাম্বলের How to Control Violent Jinn লেখা থেকে অনূদিত, সংযোজিত ও পরিমার্জিত।
মন্তব্য করুন