১। কথার মাঝে আল্লাহর যিকির করা (এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা একটু পর আসছে)
২। মেয়ে হলে অবশ্যই শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পর্দা করা।
৩। হাদীসে বর্ণিত সকাল সন্ধ্যার দুআগুলো পড়া, বিশেষত:
বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা-ইয়াদুররু মা‘আসমিহি শাইউং ফিলআরদি ওয়ালা-ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি‘উল ‘আলিম।
সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। (তিরমিজি, হাদিসঃ৩৩৩৫)
আ‘উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব।
সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। (তিরমিজি, হাদিসঃ৩৫৫৯)
• সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। (তিরমিজি, হাদিসঃ৩৫৭৫)
৪। আর বাচ্চাদের সুরক্ষার জন্য কর্তব্য হচ্ছে, মাঝেমধ্যেই সূরা ফালাক, নাস পড়ে বাচ্চাদের গায়ে ফুঁ দেওয়া, যেমনটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও করেছেন।
৫। নজর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার একটা সুন্দর দুআ আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা পড়ে হাসান এবং হুসাইন রা.-কে ফুঁ দিয়ে দিতেন। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই একই দুআ মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম আ. নিজের ছেলেদের (অর্থাৎ ইসমাইল এবং ইসহাক আ.) জন্য পড়তেন। (বুখারিঃ৩১৯১)
দুআটি হচ্ছে—
উচ্চারণ: আউযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিন- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি আইনিন লা-ম্মাহ।
এই দুআ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দেবেন, নিজের জন্যও পড়বেন। ইনশাআল্লাহ বদনজর থেকে বাঁচতে তাবীজ-কবচ অথবা নজর টিপের দরকার হবেনা। আল্লাহই হেফাজত করবেন।
দ্রষ্টব্য: অন্যের জন্য পড়লে أَعُوذُ (আউযু) এর জায়গায় أُعِيْذُكَ (উইয়ীযু) বলা ভালো, দু’জনের ক্ষেত্রে أُعِيْذُكُمَا আর অনেকজনের জন্য পড়লে أُعِيْذُكُمْ বলা ভালো। তবে সাধারণভাবে ‘আউযুবিকালিমাতিল্লাহ…’ বললেও সমস্যা নেই, এক্ষেত্রে নিয়ত করে নিতে হবে, কার জন্য পড়ছেন।
৬। ফেসবুক বা এরকম সোশ্যাল মিডিয়ায় অনর্থক শো-অফ না করা। অহেতুক ছবি বা ঘটনা পোস্ট দিয়ে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ছবি মানুষকে দেখিয়ে না বেড়ানো।
৭। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিজের প্রয়োজন পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে ‘সেটা গোপন এবং লুকায়িত রাখার’ মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো। কেননা, প্রতিটা নিয়ামত লাভকারী হিংসার স্বীকার হয়ে থাকে। (তাবারানী-আওসাতঃ২৫২৯)
মূলত এটা সফলতার একটা গোপন চাবিকাঠি। নিয়ামত গোপন রাখার মানে হলো, অন্যের সামনে অহেতুক নিজের বাণিজ্যের সম্পদের প্রশংসা না করা, সন্তানের প্রশংসা না করা, মেয়েরা নিজ স্বামীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা, ছেলেরা নিজ স্ত্রীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা। নিজের প্রজেক্ট বা ব্যবসার গোপন আলোচনা অন্যদের সামনে প্রকাশ না করা। অনেকে অহেতুক অন্যদের সামনে গল্প করেন, দৈনিক এত এত বিক্রি হচ্ছে, অমুক চালানে এত টাকা লাভ হলো। এমন আলোচনাও নজরের উৎস হতে পারে।
আমি একজন বোনের রুকইয়াহ করেছিলাম, যে তার বান্ধবীদের সামনে নিজের স্বামীর অনেক প্রশংসা করত। ইত্যবসরে তার একজন বান্ধবীর ডিভোর্স হয়ে যায়, এরপর এই হিংসুক বান্ধবী তাকে এবং তার স্বামীকে জাদু করে, যেন তাদের সংসার ভেঙ্গে যায় এবং তার স্বামীকে উক্ত বান্ধবী বিয়ে করতে পারে। আল্লাহ হেফাজত করুন।
মোদ্দাকথা, অহেতুক অন্যের সামনে নিজের কোনো নিয়ামতের আলোচনা না করাই উত্তম। প্রসঙ্গক্রমে করলেও কথার মাঝে যিকর করতে হবে। যেমন: ‘আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর ব্যবসায় কোনো লস যায়নি’,‘আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে’, ‘মা-শা-আল্লাহ! ভাবি, আপনি তো অনেক ভালো পিঠা বানান!’ ইত্যাদি। আর অন্য কেউ যদি আপনার কিছুর প্রশংসা করে, তাহলে তিনি যিকর না করলে আপনার উচিত হবে যিকর করা। উদাহরণস্বরুপ: কেউ বলল, আপনার ছেলেটা তো অনেক কিউট!’ আপনি বলুন,‘আলহামদুলিল্লাহ।’
আর অধিক পরিমাণে সালামের প্রচলন করুন, ইনশাআল্লাহ হিংসা দূর হয়ে যাবে।
সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দুআ করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। কেননা বদনজর সত্য।’ (ইবনে মাজাহঃ ৩৫০৮)
——-
(আলোচনাটি “রুকইয়াহ” বইয়ের বদনজর অধ্যায় থেকে নেয়া হয়েছে।) কেউ বদনজর আক্রান্ত হলে কিভাবে চিকিৎসা করবেন, এব্যাপারে জানতে পূর্বের লেখাগুলো দেখুন।
মন্তব্য করুন