আসসালামু আলাইকুম। জানতে চাই রুকইয়া ফিল্ডে আসলে কি পারিবারিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোন সম্ভবনা আছে? আমি প্যারানরমাল দিক থেকে বলছি না, ইন জেনারেল। যেমনঃ আপনারা গ্রুপে মাশাল্লাহ অনেক সময় দেন, এছাড়া আপনি ফোন নাম্বার দিয়েছেন, হোয়াটসঅ্যাপ আছে, পেজ চালাচ্ছেন। একটা বিষয় এত সময় দিচ্ছেন। এতে কি পরিবার বিরক্ত হতে পারে? হলে করনীয়? তাছাড়া এত সময় সমস্যাগ্রস্থ মানুষের কথা শুনলে যেকেউ মানসিক চাপে পরার কথা। এতে কি পরিবারে প্রভাব পরে?
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। এই প্রশ্নটা মেসেজবক্সে পাওয়া। ভাল প্রশ্ন। যারা রুকইয়াহ ফিল্ডে ঢুকবেন তাদের এসব চিন্তা মাথায় আসতে পারে।
প্রথম কথা হচ্ছে, শব্দটা রুকইয়া নয়, রুকইয়াহ। কেউ যখন রুকিয়া, রুকাইয়া, রোকাইয়া, রুকইয়া এসব বলে, আমি বিরক্ত হই। চেপে রাখলেও বিরক্ত হই, খারাপ লাগে। কাজেই ঠিকমত বলার ও লেখার চেষ্টা করতে হবে।
পরের কথা হচ্ছে, আপনি যা-ই করেন না কেন পরিবারে একটা প্রভাব পড়বে। কিছু না করলেও পড়বে। সারাদিন ঘরে বসে থাকেন, পরিবার বেজার হবে। সারাদিন বাইরে বাইরে থাকেন পরিবার বেজার হবে। সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। সন্তুষ্ট করতে হবে আল্লাহ তায়ালা কে। অন্যদের হক্ব নষ্ট না করে আপনি আপনার কাজ করতে পারবেন।
এরপরেও পরিবারের উপর যদি কোনো প্রভাব পড়ে সেটা ওভারকাম করার মত মানসিকতা, সক্ষমতা একজন পুরুষের থাকতে হবে। আগেরকার যুগে পুরুষেরা লম্বা সময়ের জন্য পরিবার থেকে পৃথক হয়ে যেত (যুদ্ধ, ইলম অর্জন ইত্যাদির জন্য)। এতে তাদের সম্মানই বেড়েছে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি।
পরিবারের উপর মেহনত জারি রাখতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে এটা মন থেকে করা ভালবাসার কাজ। পরিবারের লোকজন যখন বুঝতে পারবে পছন্দের কাজ করতে না পারার জন্য আপনি চিন্তিত, হতাশ তখন আপনাকে খুশি করার জন্য হলেও তারা ছাড় দিবে। ঘরের লোকজন যদি ছাড় না দেয় একজন পুরুষের পক্ষে যেকোনো মেহনত করা খুবই কঠিন। আল্লাহ ঘরের লোকজনকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন।
রাত বিরেতে ফোন আসলে বিরক্ত হতেই পারে। তাই না? যতই আপনি নেক বান্দা হোন। যতই অন্যের বিপদ হোক গভীর রাতে বিপরীত লিঙ্গের কারও ফোন আসলে ঘরের লোকজন বিরক্ত না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। রাত এগারোটার পর ফোন আসলে আমি নিজেই বিরক্ত হই। প্রশ্নকারী যদি মেয়ে হয়ে থাকেন তাহলে আমার পালটা প্রশ্ন থাকবে, আপনার হাসবেন্ড যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হয় যেখানে মহিলাদের প্রচুর ফোন আসে, এমনকি সারাদিনের কাজকর্ম শেষে একটু যখন গল্প করতে লেগেছেন তখন ফোন আসে তার মোবাইলে, আপনি কি বিরক্ত হবেন?
কথাতো সিম্পল, বিরক্ত হবে না এমন কাউকে আজ পর্যন্ত চোখে পড়েনি। যাই হোক, এসব ক্ষেত্রে সবর করতে হবে। যেভাবে সামলানো যায় সামলাতে হবে। যখন সুযোগ পাওয়া যায় টুকটাক হেল্প করতে হবে, কোনো কিছু চাইলে দেবার চেষ্টা করতে হবে, বোঝাতে হবে যে, না, সারা দুনিয়ার টেনশন নিয়ে থাকলেও তার জন্য হৃদয়ে জায়গা আছে, হাতে সময় আছে, মুখে হাসি আছে। পরিবার কি এর বেশি চায়? চায় না তো!
মানসিক সমস্যার ব্যাপারটা ভিন্ন। আরেকজনের সমস্যার ব্যাপারে পরামর্শ দিতে হলে অনেক কিছু হিসেব করা লাগে, পড়াশুনা করতে হয়, লজিক-এন্টিলজিক খাটাতে হয়, উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগাতে হয়, কমনসেন্স থাকতে হয়। মানসিকভাবে স্ট্রং থাকতে হয়। ডাক্তাররা দেখবেন নির্দয়ের মত অপারেশন করেন। কারণ করতে করতে তার কাছে এটা আর কিছুই নয়। স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
সর্বোপরি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আপনি যেন মেহনত করতে পারেন এই ব্যাপারটা আল্লাহর কাছে প্রতিদিন চাইতে হবে। তাহলে আল্লাহই ব্যবস্থা করে দিবেন।
আল্লাহ তায়ালা যদি ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমার টেনশনের কোনো দরকার আছে? বলেন…
মন্তব্য করুন