Ruqyah Support BD

দ্বীনদার কবিরাজ ও জ্বীনের সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে

গত পরশু এক ছোট আপু ফোন দিয়েছিলো ওর বড় আপুর সমস্যার ব্যাপারে। আপু হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অবস্থা বেশ খারাপ। অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করেও কোন অসুখ ধরা পড়েনি। তো ওর পরিচিত একজন আন্টি বলেছেন কবিরাজ দেখানোর কথা। কবিরাজটা নাকি ধার্মিক! আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমার কি মতামত এই ব্যাপারে।
আমি বলেছিলাম, “আমি আজ অবধি এমন কোন কবিরাজ পাইনি। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি কবিরাজ পছন্দও করি না।”
আর কিছু বলতেও হয়নি ওকে। ও নিজেই বললো, আপু, রুকইয়াহ করে আমি তো আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো আছি।
পরে জিজ্ঞেস করেছিল, তাহলে কি আপুকেও করাবো? আমি তখন ভালো কোন ডাক্তার দেখানো ও রুকইয়াহ করার পরামর্শ দিয়েছিলাম।
আসলে এই ব্যাপারে আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না।
আমার আত্মীয়ার ব্যাপারে শুনেছিলাম, জ্বীনের সমস্যা আছে। তাই মাথা ব্যথা করে। কবিরাজ দেখালে ভালোই থাকতো। পরে হঠাৎ সমস্যা বাড়লো। এইবার আর কবিরাজি চিকিৎসায় কাজ হলো না। পরে ডাক্তার দেখিয়ে, পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উনার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। যদিওবা এই ঘটনা আমি পরে জেনেছি। তার আগে থেকেই আমি ডাক্তার+রুকইয়াহ দুইটাই চালিয়ে যেতে বলি। তবে, তাওয়াক্কুল অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার উপর থাকবে, অন্যকিছুর উপর না।
যাইহোক, ওর সাথে কথা শেষ করার পর এক আপু ফোন দিলেন। উনি যে বিষয়ে ফোন দিয়েছিলেন এইটাও ঠিক একই বিষয়ে। উনি যে হুজুরের কাছে যেতেন। উনার ব্যাপারে আপুর কাছে যতটুকু শুনেছিলাম, তাতে খুশিই হয়েছিলাম। বর্তমানে এমন হুজুরও আছেন?!
যিনি শুধুমাত্র আল্লাহর কালাম দিয়ে চিকিৎসা করেন! কিন্তু সেদিন উনি হুজুরের দেয়া তাবিজের ব্যাপারে যা বললেন, তাতে সত্যিই শিউরে উঠেছিলাম।
শিরকি কথা লিখা ছিলো তাতে। আল্লাহ তা’আলা হেফাজত করুন সকলকে এমন ভয়ংকর অবস্থা থেকে, আমীন। আর যদি আমাদের দ্বারা এমন ভুল হয়েও যায় তাহলে সেটাও ক্ষমা করুন, আমীন।
এমন প্রশ্ন খুবই কমন;
“দ্বীনদার কবিরাজের কাছে কি যাওয়া যাবে?”
এ ক্ষেত্রে আমার উত্তর হলো, আপনি যদি ১০০% নিশ্চিত হউন যে, উনি সঠিক। তাহলে যেতে পারেন। রিস্ক আপনার। তবে আমার পরামর্শ হলো, না যাওয়া। আর একান্তই মন চাইলে, অবশ্যই ইস্তিখারা করুন। ভালো করে খোঁজখবর নিন।

এ ব্যাপারে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি;
কয়েকবছর আগে পরিচিত আন্টি একজন কবিরাজের কথা বললেন। উনার ভাষ্যমতে উনি খুব দ্বীনদার। উনি ইউনানি চিকিৎসা করেন। দেশের বাইরে থেকে ওষুধ আনান। সিস্টের সমস্যা থাকলে অইটা গলে যাবে উনার ওষুধে। উনি নিজেই ফল পেয়েছেন। উনারা তাবলীগি ফ্যামিলি, তার উপর ডাক্তার। তো চলেই গেলাম সেই দ্বীনদার কবিরাজের কাছে। ওখানে যাবার পরে দেখি কী বিশাল লাইন! যতজনকে পেলাম, উনারা সবাই বেশ ফায়দা পেয়েছেন উনার চিকিৎসায়। ৫/৭ বছরের পুরোনো রুগীও আছেন। সবাই বেশ ভালো ভালো কথা বললেন। এমন কিছু বলেননি; যাতে সন্দেহ হয়। আমিও দেখলাম দাড়িওয়ালা একজন বয়স্ক ভদ্রলোক যোহরের আযানের পরপরই মসজিদে চলে গেলেন উনার সাথী-সঙ্গীদেরকে নিয়ে। ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লাগলো।
এছাড়া সিরিয়াল দিতে হয় উনার কাছে। সিরিয়াল ব্রেক করার কোন ওয়ে নাই। দেয়ালে লেখা, এখানে হাত দেখা হয় না। সবকিছু মিলিয়ে উনাকে ভালোই লেগেছিলো।
যাই হোক, অনেকগুলা সিরিয়াল পেরিয়ে আসর বাদ আমার সিরিয়াল আসলো। উনি আমাকে কিছু ওষুধ দিলেন ইউনানির। বেশ চড়া দাম ছিলো ওষুধগুলার। আর একদিন পর দেখা করতে বললেন। ফেরার পথে উনার ব্যাপারে গল্প শুনলাম ওখানেরই এক রুগীর কাছে। গল্পটা ছিলো এমন;
উনি একসময় বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। তো ইন্ডিয়া যান চিকিৎসার জন্য। কিন্তু উনার হালত খারাপ দেখে উনাকে ফেরত পাঠানো হয় সেখান থেকে। মানে উনি মারা যাবেন। উনার কোন চিকিৎসা নাই। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দেশে ফিরছিলেন। ফেরার পথে উনার সাথে জ্বীনের সাক্ষাৎ হয়। জ্বীন উনার চিকিৎসা করেন এই শর্তে যে, উনিও অন্যদের চিকিৎসা করবেন কোন ফী ছাড়াই। উনি রাজি হয়ে যান। এরপর উনি নিজেও সুস্থ হয়ে যান। আর শর্তানুযায়ী অন্যদের জন্যও এইভাবে দিনরাত মেহনত করছেন।
যেহেতু জ্বীনের সাহায্য, কবিরাজের এইসব ব্যাপারে বিশেষ কোন জ্ঞানও ছিলো না সেইসময়। তাই ভাবিওনি বিশেষ কিছু! বরং শুনে ভালোই লেগেছিলো। জ্বীনদের মধ্যেও ভালো জ্বীন আছে!!
যাইহোক, ওখান থেকে ফিরে উনার দেয়া ওষুধ খেলাম। এত ঘুম হলো!! শুধু উঠে গোসল, খাওয়া আর সলাত কোনমতে আদায় করতে পারছিলাম। তবে ব্যথা-যন্ত্রণাতে বেশ আরাম পাই। ভালোই লাগলো। ওষুধের নামও গুগল করলাম। ভালোই ছিলো। খারাপ না। বাড়ি থেকেও পজিটিভ ফিডব্যাক পেলাম। তো কথামতো আবার গেলাম উনার কাছে।
কিন্তু পরেরবার যখন উনার কাছে গেলাম তখন দেখলাম উনি কিছু একটা দিয়ে টেবিলের নিচে টোকা দেন। আর টেবিলের উপর রুগিদের হাত রাখতে বলেন উলটা করে। উনি তো হাত দেখেন না। অথচ গড়গড় করে এমন অনেক কিছুই বলেন, যা রুগী নিজেও মনে করতে পারে না সহজে। পরে খেয়াল করে দেখলাম উনার হাতে কিছু একটা আছে কাপড় দিয়ে মোড়ানো। প্রথমে ভেবেছিলাম বাইরে থেকে আনা বিশেষ কোন ডিভাইস হবে যা দিয়ে নার্ভের গতিবিধি চেক করে। (হা হা- এখনও মনে পড়লে হাসি পায়) ।
পরে বাড়ি গিয়ে দাদীর সাথে গল্প করছিলাম উনার ব্যাপারে। তখন দাদী বললেন, এইভাবে মৃত মানুষের হাড় দিয়ে জ্বীন বশ করে। অইটা না তো আবার? এইবার আমার মাথা খুলতে শুরু করলো। দুইয়ে দুইয়ে চার হলো!
এই ঘটনার পরে আর কোনদিন ভুলেও অই কবিরাজের কথা মাথায় আনিনি!
আল্লাহ তা’আলার অশেষ রহমতে জড়িয়ে যাবার আগেই জাল থেকে বের হতে পেরেছিলাম। তবে ওখান থেকে আসার পর বহুদিন ইবাদাতে শান্তি পাইনি! কতো ইস্তিগফার, কতো দু’আ। এরপর রব্বুল আ’লামীনের অশেষ রহমতে স্বাভাবিক হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।
ও হ্যা, আরেকটা কবিরাজ পেয়েছিলাম। নামাজি, ভদ্র। খুবই ভালো মানুষ। উনি আমল বাতলে দেন। যাবার পরে দেখলাম, উনি কয়েকজন মানুষের সাথে গল্প-গুজব করছেন। জ্বীন-ভূত হাবিজাবি নিয়ে। এরপর উনি বই বের করলেন, আমল দেবার জন্য। অইসময় উনার কাছে যাওয়া নিষেধ। তবুও আমি দেখেছিলাম একটু সরে গিয়ে। উনার বইয়ের উপরেই ছিলো হিন্দুদের দেবী চিহ্ন!
এমন বহু কাহিনী আছে আমার ঝুলিতে। অভিজ্ঞতা একদিনে আসেনি। যদিওবা সবই তিক্ত! ভালো কাউকেই পাইনি!
এছাড়া অন্য এমন কাউকেও পাইনি যে, ভালো ফিডব্যাক দিয়েছে কবিরাজ নিয়ে। প্রথমে ভালো বললেও পরে ঠিকই আসল রূপ সামনে এসেছে। সামনে এসেছে ধোঁকাবাজি!
আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতি থেকে বাঁচতে এদের কাছে গেলেও কিন্তু বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীনই হয়েছেন এদের দ্বারা। তাই এমন কিছু ঘটার আগেই সচেতন হউন।
বিষের স্বাদ কেমন? খেলে কি হয়? এইসব বুঝার জন্য আপনাকে খেতে হবে এমন তো না। আর সুস্থ-মস্তিষ্কের কেউ এমনটা কেউ করেছেন বলে শুনিনি। বাকি বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে আপনিও তো গিয়েছিলেন? আপনি গিয়েছিলেন কেন?
কবিরাজের কাছে গিয়েছিলাম কেন, তা পোস্ট পড়লেই কিছুটা হলেও বুঝবেন। আর বাদবাকি আমার তখনকার হালত কী ছিলো তা বলার বা বুঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। আর সেদিন কবিরাজের কাছে গিয়েছিলাম বলেই না আজ আপনাদের সাবধান করতে পারছি। (এহেম এহেম)
এইজন্য কেউ কবিরাজের কাছে গিয়েছে শুনলে আমি সাধারণত বকাঝকা করি না। যদিওবা অনেক খারাপ লাগে তারপরেও চেষ্টা করি স্বাভাবিকভাবে নেবার, বুঝানোর। (ঝাড়ি দিছি এমন কেউ থাকলে হাত তুলেন)।
কারন আমি নিজেও এমন ভুল করেছি। আর তাইতো মন থেকে চাই, এমন ভুল যেন আর কারো দ্বারা না হয়……
রব্বুল আ’লামীন সকলকে এ ধরনের ধোঁকা থেকে হেফাজত করুন, আমীন।
যেকোনো অসুস্থতার ক্ষেত্রে শরীয়ত অনুমোদিত রুকইয়াহ করুন, পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ডাক্টার দেখান। যাদুল মা’য়াদ কিতাবে ইবনুল ক্বইয়্যুম রহ. একটি উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে;
কুরআন হলো, শারীরিক ও মানসিক এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সব ধরণের অসুস্থতার পরিপূর্ণ সুস্থতা।

[বি.দ্র: জ্বীনের সাহায্য নেয়া যাবে কি? এই বিষয়ের লিখা – জিনের সাহায্য নেয়া কি ঠিক? – ]