এবাউটে ফোন নাম্বার থাকাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসে। দেশ থেকেও আসে, বিদেশ থেকেও আসে। ছেলেদেরও আসে, মেয়েদেরও আসে। বুড়া-জোয়ান সবারই আসে। মুসলিমদের যেমন আসে, অমুসলিমদেরও আসে। যতদুর মনে পড়ে এই পর্যন্ত দুই জন অমুসলিমের সাথে রুকইয়াহ বিষয়ে কথা বলেছি। দুই জনই আমাকে অবাক করে দিয়েছে। কিভাবে অবাক করেছে সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি।
একটা বাবু যখন দুনিয়াতে আসে সে তখন আল্লাহর একত্ববাদ তথা ইসলামের উপরেই আসে। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। মানুষের স্বাভাবিক ফিতরাত হলে আল্লাহমুখী হওয়া তথা আল্লাহর একত্ববাদ। কিন্তু বাবা-মার ধর্ম, পারিপাশ্বিক পরিস্থিতি তার মাঝে বহুত্ববাদ, অবিশ্বাসের বীজ বপন করে। সময়ের ব্যবধানে সেই বীজ ধীরে ধীরে অংকুরিত হয়। একজন অমুসলিম হয়ত জানেই না
- আল্লাহ তায়ালা শুধু মুসলমানদের উপাস্য নন, বরং তারও উপাস্য। সমগ্র মানব জাতির উপাস্য।
- কুরআনুল কারীম শুধু মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ নয় বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়েছেন।
- রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম কেবল মুসলিমদের নবী নন, অমুসলিমদেরও নবী।
- আখিরাত তথা কেয়ামত, হাশর শুধু মুসলিমদের হবে না, বরং সবারই হবে।
- আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য হবে ইসলাম। ইসলাম ছাড়া অন্য যে কেউ যা কিছুই পালন করুক না কেন সে আখিরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্থ; দুনিয়াতে তার অবস্থান যাই হোক না কেন।
(দুঃখের বিষয় হল এই ব্যাপার গুলোতে অনেক মুসলিম নামধারীরাও ধরা খেয়ে যাবে)
এই বিষয়ের দাওয়াত একজন অমুসলিমের নিকট পৌছানোর দায়িত্ব মুসলমানদের তথা আমার, আপনার। আমি কি এই দায়িত্ব পালন করেছি? উত্তর এখানে দেয়ার দরকার নেই। নিজেকেই প্রশ্ন করি, নিজেকেই উত্তর দেই। দায়িত্ব যদি ঠিকমত পালন করে না থাকি তাহলে আল্লাহর নিকট কি জবাব দিব? একজন অমুসলিমকে কাফের, মুশরিক বলে ঘৃণাভরে দূরে ঠেলে দেয়ার আগে এই বিষয়গুলো ভাবা উচিত বলে আমার মনেহয়। ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা বুঝে আসে লিখলাম। ভুল কিছু বলে থাকলে আল্লাহর পানাহ্!
তো যেটা বলছিলাম, কথা বলার সময় তো বোঝা যায় না কে মুসলিম বা কে অমুসলিম। পরামর্শ দেবার সময় বিষয়টা সামনে আসে। যখন বলি এই, এই আয়াত পড়ে এভাবে এভাবে করবেন। তখন বলে ভাইয়া আমিতো মুসলিম না। এই ধরনের কথা বললে সাধারণত বলি পরিচিত কোনো মুসলিমকে দিয়ে পড়িয়ে নিবেন। কিন্তু এই দু’জন আমাকে অবাক করেছে। তারা নিজেরাই আরবী পড়তে পারে! সুবহানাল্লাহ। শুদ্ধ আছে কি অশুদ্ধ আছে সেটা যাচাই করতে একজনতো কুরআন তেলাওয়াত শোনাবেও বলেছিল! সে যাই হোক।
জিজ্ঞেস করেছিলাম এই বিষয়গুলো কিভাবে জানলেন। উত্তর পেয়েছি, ছোটবেলা থেকেই মুসলিমদের জীবনাচারণ ভাল লাগতো। তারপর মেসে থাকার সময় বিভিন্ন কিতাবি থেকে দেখে, বড় আপুদের থেকে শুনে নিজেদের নানা “সমস্যার” জন্য বিভিন্ন আমল করে যখন উপকার পেয়েছে তখন আরও জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এমনকি আমার এটাও মনে হয়েছে উনাদের সামনে যদি সঠিকভাবে ইসলামের সৌন্দর্য্য উপস্থাপন করা যায় তাহলে ইসলাম কবুল করতে দেরি করবেন না। আল্লাহ ভাল জানেন।
এসব শুনে আমার মনের মধ্যে কিছুটা আফসোসও হল। কত মুসলিম ভাই, বোন আছেন যারা নিজেরা আরবী পড়তে পারেন না, ইসলামী জীবনাচারণের দিকে কোনো খেয়াল নেই। অথচ কোনো কোনো অমুসলিমরা কুরআন পড়তে পারে, বেসিক কিছু ইসলামী জীবনাচারণ মেনে চলে (শালীনভাবে চলা, রোযা ইত্যাদি)। অবশ্য অমুসলিমদের এই পড়া তাদের কতটা কাজে আসবে আল্লাহই ভাল জানেন।
অমুসলিমদের মধ্যে অনেকেই আছে হেদায়াতের পথে, আর মুসলিমদের মধ্যে অনেকেই আছে গোমরাহির পথে। শেষ পর্যন্ত কে হেদায়াতের উপর টিকে যাবে তা আল্লাহই ভাল জানেন। কাজেই আমাদের উচিত নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করা। তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌছে দেয়া। তাবলীগের ভাষায়, দ্বারে দ্বারে বারে বারে। এতে করে তারা হেদায়াত পাক বা না পাক আমার নিজের হেদায়াত মিস হবে না ইন শা আল্লাহ।
কাজেই ভাইয়েরা/বোনেরা, যারা অমুসলিমদের সাথে উঠা-বসা করি তা পড়াশুনার খাতিরেই হোক, ব্যবসা/চাকুরির খাতিরেই হোক, রুকইয়াহর খাতিরেই হোক বা কোন কিছু হোক, তারা যেন নিজেদের আমল আখলাখ সুন্নাহসম্মত করি। এতে করেও তাদের মধ্যে মুসলিমদের সম্পর্কে সুধারণা জন্ম নেবে যা দাওয়াহর বীজ বপন করতে পারে। আমার আপনার সামান্য হাসিতে, ব্যবহারে যদি একজন মানুষ আল্লাহকে পেয়ে যায় তাহলে সেটা ইনশা আল্লাহ আমার আপনার নাজাতের জন্য উসিলা হতে পারে। আপনার স্বভাব-চরিত্র কেমন এটা দাওয়ার প্রথম দিক। আমি যদি রুক্ষ, কর্কশ ভাষায় কথা বলি তাহলে অমুসলিমতো দূরের কথা, মুসলিমরাই আমার শত্রু হয়ে যাবে। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমীন।
মন্তব্য করুন