জিন শয়তানের ক্ষতি থেকে নিরাপদে থাকতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের সবার খেয়াল রাখা উচিত।
** এই লেখাটায় জীন – শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার সব উপায়ই আনা হয়েছে তা নয়। আরো পয়েন্ট থাকতে পারে। কারো সাজেশন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। এছাড়া আমাদের মাসনুন আমলের যে পোস্ট আছে সেখানের আমলগুলো করতে হবে নিয়মিত। আমলগুলি দেখুন এখানে – মাসনুন আমল: যাদু, জ্বিন এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাচার উপায়
- বিসমিল্লাহ বলে খাবার খেতে শুরু করা। কেননা যখন আল্লাহর নাম ব্যতিত কেউ খেতে শুরু করে সে খাবারে শয়তান শরিক হয় এবং এই খাবার খেয়ে মানুষের সাথে থাকা শয়তান হৃষ্টপুষ্ট হয়। সুতরাং এই শয়তানকে দূর্বল করতে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। [১]
- যদি কেউ বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে যখনই মনে পড়বে তখনই পড়বে এই দুয়াটা পড়বে بِسْمِ اللهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ. (বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আ’খিরাহু) [২]
- বিসমিল্লাহ বলে বাসায় ঢুকবে। কেননা যদি বিসমিল্লাহ বলা ব্যতিত বাসায় প্রবেশ করে তবে সেই বাসায় শয়তানও একইসাথে প্রবেশ করতে পারে এবং থাকতে পারে। [১]
- বাসা থেকে বের হতে এই দুয়া পড়া “بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ” বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। এতে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াতের উপর থাকবে, হেফাজতে থাকবে, তার উপর আক্রমণ প্রতিহত করা হবে [৩]
- পোশাক পাল্টাবার আগে বিসমিল্লাহ বলা। কারণ বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা মানুষের সতর ও জীনদের দৃষ্টির সামনে পর্দা সৃষ্টি হয়ে যায়। [৪]
যদি বিসমিল্লাহ না বলা হয় তবে জ্বিন মানুষদের দিকে দৃষ্টি দিতে পারে এবং সহজেই আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারে। - ওয়াশরুমে ও টয়লেটে প্রবেশ করতে বিসমিল্লাহ এবং এই দুয়া পড়া, কারণ এসব নোংরা জায়গায় সাধারনত জীন থাকে।
“اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ”
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল কাবাইস [৪] - ওয়াশরুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা। বেশিক্ষণ না থাকা।
- ওয়াশরুমে একা একা কথা না বলা। অনেক সময় এই কথা বলার মধ্যে জ্বিন শরিক হয়।
- দরজা, জানালা বিসমিল্লাহ বলে খোলা ও বন্ধ করা, কেননা যে দরজা বা জানালা বন্ধ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া হয় সে দরজা শয়তান খুলতে পারে না [৫]
- খাবার বিসমিল্লাহ বলে ঢেকে রাখা, এমনকি একটি কাঠি দিয়ে হলেও ঢেকে রাখবে এবং এর উপর আল্লাহর নাম নিবে। একইভাবে পানির পাত্রের মুখও বন্ধ করে দিবে আল্লাহর নাম নিয়ে। কারণ যে পাত্রের মুখ এভাবে আল্লাহর নাম নিয়ে ঢাকা থাকে তা শয়তান উন্মুক্ত করতে পারে না। [৫]
- রাতে ঘরের বাতি নেভানোর সময় বিসমিল্লাহ বলে নিভাবে। গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার থাকলে সতর্কতার সাথে বন্ধ করে দিবে এগুলো। [৫]
- যথাযথভাবে পর্দা করা। কারণ জীনরাও মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বাসার নিরাপত্তা তো হলো, কিন্তু বাহিরে যেতে পর্দাসহকারে বের না হলেও জীন দ্বারা আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে।
- মুশরিক/কাফিরদের উপসনালয় থেকে দূরে থাকা। কারণ এসব শির্কের আস্তানায় শয়তানের আনাগোনা হয় খুব বেশি। গ্রপে বেশ কিছু পোস্ট ছিল যাতে দেখা যায় এরকম কোন উপসনালয়ে যাওয়ার/পাশ দিয়ে গমণের পর জীন দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। [৬]
- বাসায় সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা। [৭] বিশেষ করে সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত পড়া। এটা পড়ার দ্বারা বাসা থেকে শয়তান দূর হয় । [৮]
- বাসায় প্রানীর ছবি না রাখা। দরকারে যেহেতু ছবি তুলতে হয় সেহেতু ছবি উন্মুক্ত জায়গায় রাখবে না। কারণ এমন ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। [৯]
- বাসায় কুকুর না রাখা। [৯]
- বাসায় পর্দাহীনতা যেন না হয় তা খেয়াল রাখা। যেমন টিভিতে, পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে এরকম কিছু থাকলে তা বন্ধ করা, ঢেকে রাখতে হবে। ভাল হয় এসবের উৎস বন্ধ করতে পারলে।
- প্রানীর মূর্তি বা মূর্তিজাতীয় কিছু না রাখা। [১০]
- গোসল ফরজ হলে দ্রুত গোসল করে নেয়া। কারণ জুনুব ব্যক্তি যে ঘরে থাকে তাতেও ফেরেশতা প্রবেশ করে না মর্মে হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। [১১] আবার অপবিত্রতাবস্থার জন্য জীনদের আক্রমন করাও সহজ হয়ে যায়।
- অধিক রাগ, শোক ও খুশির অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না হওয়া। বিশেষ করে রাগের সময়। এই সময় মানুষ জীনের দ্বারা আক্রমনের শিকার হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই রাগ উঠলেই আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রজিম পড়বে বার বার।
- বাচ্চাদের মাগরিবের সময়ের খানিক আগে ও পরে বাইরে বিচরণ করতে না দেয়া (কেননা এই সময়ে জীনরা খুব বেশি বিচরণ করে থাকে)। [এটা অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত]
=========================
তথ্যসূত্র:
[১]: আল আদাবুল মুফরাদ/১০৯৬
[২]: জামি তিরমিযি ও আবু দাউদ। রিয়াদুস সলিহীন কিতাব ৩/ হাদিস ৭২৯
[৩]: তিরমিযি ও আবু দাউদ। রিয়াদুস সলিহীন কিতাব ১/ হাদিস ৮৩
[৪]: জামি তিরমিযি ৬০৬
[৫]: সুনান আবু দাউদ ৩৭৩১
[৬]: হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেছেন- ‘তোমরা মুশরিকদের উপাসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ, সেই সময় তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব নাজিল হতে থাকে।’ (বায়হাক্বী)
[৭]: জামি তিরমিযি, খন্ড ৫, কিতাব ৪২, হাদীস ২৮৭৭ (শয়তান এমন ঘরে প্রবেশ করে না যাতে সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয়)
[৮]: সুনান আবু দাউদ/১৩৯৭; সুনান ইবনু মাজাহ
[৯]: সুনান আন-নাসায়ী ৫৩৪৭ (সহিহ)
[১০]: সহিহ বুখারী ৩২৩৮, সুরা মুদ্দাসসির (১-৫)
[১১]: সুনান আন-নাসায়ী খন্ড ১/কিতাব ১/ হাদীস ২৬২
লিখেছেন: ভাই মুহাম্মাদ আনওয়ার শাহ
মন্তব্য করুন