আমাদের আলোচনায় ৪র্থ প্রকার যাদু হচ্ছে ‘কাউকে রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ বানিয়ে দেয়ার যাদু’। এটা বিভিন্ন রকমের হয়, কখনো শরীরের কোনো অঙ্গ একেবারে বিকল হয়ে স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়। কখনো চিকিৎসা করলে আবার সুস্থ হয়। এরকমও হয়, কোনো অঙ্গ মাঝেমধ্যে নাড়াচাড়া করতে পারে, মাঝেমধ্য অচল হয়ে যায়। কারো পুরো শরীর আক্রান্ত হয়।
তো যাদুর ক্ষেত্রে সাধারণ লক্ষণগুলো এরকম বলা যায়-
১. শরীরের কোনো অঙ্গে সবসময় ব্যথা থাকা
২. কোনো অঙ্গ একেবারে অচল হয়ে যাওয়া
৩. পুরো শরীর নিশ্চল হয়ে যাওয়া
৪. মাঝেমধ্যেই শরীর ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি দিয়ে বেহুঁশ হয়ে যাওয়া।
৫. কোনো ইন্দ্রিয়শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া (যেমন: স্বাদ বা গন্ধ না বুঝতে পাওয়া, শুনতে না পারা)
এতক্ষণে একটা বড় প্রশ্ন আপনার মনে উঁকি দেয়ার কথা, ‘প্যারালাইসিস, পোলিও, এপিলেপ্সি কিংবা অন্যান্য অসুখ-বিসুখের কারণেও তো এসব হয়, তাহলে কেউ যাদু করেছে না অসুখের কারণে হয়েছে তা বুঝার উপায় কী?’
হুম, যৌক্তিক প্রশ্ন বটে! যাদুটোনা বা জ্বিনের সমস্যার কারণে সমস্যা হলে সাধারণত ডাক্তারের চিকিৎসায় ফায়দা হয়না। ল্যাব টেস্ট, এক্স-রে, সিটি স্ক্যানে উল্লেখযোগ্য কিছুই পাওয়া যায়না। দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হচ্ছে, রুকইয়া করে দেখতে হবে। যদি কোরআনের আয়াত কিংবা দোয়া পড়ার সময় ইফেক্ট দেখা যায়, যেমন- শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে, অজ্ঞান হয়ে যায়, মাথাব্যথা পেটব্যথা শুরু হয় তবে বুঝা যাবে যাদু করেছে কেউ। আর এরকম কিছু না হলে বুঝতে হবে যাদুটাদু নাই, তখন ডাক্তারের চিকিৎসা করাতে হবে।
এই যাদুর জন্য রুকইয়া:
১. রুগীর কাছে বসে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়বেন। যদি জ্বিনের সমস্যা থাকে তবে জ্বিন চলে আসবে, তখন জ্বিন সিরিজে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে ডিল করুন। জিজ্ঞেস করুন কেন ক্ষতি করছে, কেন কষ্ট দিচ্ছে। কেউ যাদু করলে কোথায় আছে যাদুর জিনিশ এসব জিজ্ঞেস করে জ্বিন বিদায় করতে হবে। আর যদি অন্যান্য যাদুর সমস্যা হয় তবে শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠবে, অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, মাথাব্যথা পেটব্যথা শুরু হতে পারে। এই যাদুর জন্য রুকইয়া করলে অনেকের ক্ষেত্রে সাথে সাথেই ফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্যারালাইসিস আক্রান্তের মত হয়ে আছে, রুকইয়া করলে সাথে সাথেই কথা বলে ওঠে। সবার ক্ষেত্রে নাও হতে পারে।
২. কয়েকবার রুকইয়া করে দেখুন, যদি এখনি ভালো হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ। তবে এক গ্লাস পানি নিয়ে “আয়াতুল কুরসি, সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” এই আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন। এবং সেটা এখনি খেতে বলুন, অনেকের ক্ষেত্রে সাথেসাথে বমি হয়ে ভালো হয়ে যায়। এমন হলে আলহামদুলিল্লাহ ঝামেলা শেষ হয়ে গেল।
৩. আর যদি দেখা যায় কোনো অংশে এখনো ব্যথা আছে। বা যাদুর কারণে এক অসুখ থেকে অন্যান্য আরো অসুখ হয়ে যায় তবে স্বাভাবিক ডাক্তারের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে পাশাপাশি কালোজিরার তেল, এবং কালোজিরার ওপর রুকইয়া করে ব্যবহার করতে হবে। প্রেস্ক্রিপশন অংশে বলা হবে সেটা।
৪. ঘ অংশে বলা প্রেস্ক্রিপশন দিয়ে দিন, একমাস পর আবার দেখা করে আপডেট জানাতে বলুন। সাধারণত ভালো হতে একমাস লাগেনা, এরমধ্যে ভালো হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ! আর পুরাপুরি ভালো না হলে, আবার রুকইয়া করে দেখুন, লাগলে আবার একই প্রেস্ক্রিপশন দিন। ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবে।
সেলফ রুকইয়া:
১. এই যাদুর ক্ষেত্রে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তবে কম। তাই সেলফ রুকইয়া করে দেখা যেতে পারে, তবে রুকইয়ার সময় অবশ্যই কাউকে কাছে রাখবেন, যেন সে পর্যবেক্ষণ করতে পারে আপনার অবস্থা। আর একজন আলেমের সাথে যোগাযোগ রাখা তো এমনিতেই সবার জন্য জরুরী, যদি নিজে নিজে রুকইয়ার সময় অস্বাভাবিক এটিচিউড দেখা যায়, তাহলে আলেমের বা রাক্বীর সাহায্য নিতে হবে। এবং সামনাসামনি রুকইয়া করতে হবে।
২. নিজে রুকইয়া করতে চাইলে প্রথমে পাকসাফ হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। এরপর দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য এবং সুস্থতার জন্য দু’আ করুন, তারপর দরুদ ইস্তিগফার পড়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন। এক গ্লাস পানি, কালোজিরা এবং কালোজিরার তেল রাখুন কাছে। এরপর প্রথমে সিহরের রুকইয়া বা অন্য কারো কমন রুকইয়া শুনুন। সমস্যা থাকলে তো অবশ্যই বুঝতে পারবেন, উপরে যেমন বলা হয়েছে। তেমন কিছু হলে বুঝবেন যাদুর সমস্যা আছে।
৩. যদি বুঝতে পারেন সমস্যা আছে। তবে এক গ্লাস পানি নিয়ে “আয়াতুল কুরসি, সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” এই আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন। এবং খেয়ে নিন, কষ্ট হলেও খাবেন। সাথেসাথে যদি ভেতর বমি হয়, তবে অনেকের তখনই ভালো হয়ে যাইয়। নইলে সমস্যা একদম ভালো হয়ে যাওয়া পর্যন্ত নিচের প্রেসক্রিপশন ফলো করুন।
৪. একমাস পর আবার শুরু থেকে রুকইয়া করে দেখুন, সমস্যা বুঝতে পারলে প্রেসক্রিপশনের মেয়াদ বাড়িয়ে নিন।
প্রেসক্রিপশন:
১. “সুরা ফাতিহা, আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস” একবার এবং وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ (বনি ইসরাইলের ৭৬নং আয়াতের প্রথমাংশ) ৭বার, এরপর
– اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
– بِسْمِ اللّهِ أَرْقِيكَ.. اللَّهُ يشْفِيك.. مِنْ كُلِّ داءٍ يُؤْذِيكَ.. مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسِ.. اَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيْكَ
৩বার করে পড়ে কালোজিরায় এবং কালোজিরার তেলে ফুঁ দিন।
২. ওই কালো জিরা প্রতিদিন অল্প করে খাবেন, আর দিনে দুইবার সকাল-বিকেল কালোজিরার তেল কপালে এবং যে অঙ্গে ব্যথা সেখানে মালিশ করবেন।
৩. প্রতিদিন আয়াতুল কুরসি এবং তিনকুলের রুকইয়া কয়েকবার, আর সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন এর রুকইয়া একবার শুনবেন। সময় কম পেলে শুধু তিন ক্বুলের রুকইয়া শুনবেন।
৪. রুকইয়া ভালোভাবে কাজ করার জন্য গানবাজনা শোনা যাবেনা। নামাজ-কালাম ঠিকঠাক পড়তে হবে। ফরজ ইবাদাতে যেন ত্রুটি না হয়। (মেয়েদের জন্য পর্দা করাও ফরজ)
৬. সকাল সন্ধ্যার মাসনুন দোয়া-কালাম, এবং ৩ ক্বুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস)এর আমল ঠিকমত করবেন।
গুরুত্বপূর্ণ নোট:
উপরে বলেছি, আবার স্মরণ করিয়ে দেই, শারীরিক সমস্যার জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারও দেখাবেন। শারীরিক যে ক্ষতি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে, এজন্য স্বাভাবিক চিকিৎসা করাবেন। আর সুস্থ হওয়া অব্ধি রুকইয়া তো করবেনই। আর হ্যাঁ! হিজামা করাতে পারেন, ইনশাআল্লাহ উপকার পাবেন।
পাশাপাশি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে, যেন আল্লাহ সুস্থ করে দেয়, এবং ভবিষ্যতেও এরকম ক্ষতি থেকে হিফাজত করেন।
মন্তব্য করুন