আসসালামু আলাইকুম। দুটি প্রশ্ন –
১। জ্বিন-জাদুর সমস্যা একসময় উহ্য ছিলো। রুকইয়াহ শুরুর পর সিরিয়াস পর্যায়ে চলে গেছে। এরকম হতে পারে? ২। দীর্ঘদিন রুকইয়াহ করার ক্ষেত্রে লক্ষন মিলিয়ে যেদিকে বেশি পড়বে সে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে হবে?
প্রশ্নটি পেয়েছি মেসেজে। স্বল্প জ্ঞানে কিছু কথা লিখি। এসব কথায় যে সবাই একমত হবে এমন না।
১। সিরিয়াস বলতে আসলে কি বোঝাবে সেটা আগে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। নাহয় আমার সিরিয়াস আর আপনার সিরিয়াস এক হবে না। আমি তখনই সিরিয়াস বলবো যখন হাসপাতালে ভর্তি হবার মত অবস্থা তৈরি হবে। ব্যথা, বেদনা, অসুস্থতা, চিল্লা-পাল্লা এসবকে সিরিয়াস বলবো না।
সেলফ রুকইয়াহ করে সিরিয়াস অবস্থায় পৌছেছে এমন ঘটনা দুর্লভ। আমি এখন পর্যন্ত একটা কেসও এমন মনে করতে পারছি না। বাকি ব্যথা, বেদনা, অসুস্থতা সবারই কমবেশি হয়েছে। কেউ বিছানায় পড়ে গিয়েছে তবুও রুকইয়াহ ছাড়ে নি। আবার কেউ ভয়ে পেয়েই ছেড়ে দিয়েছে। আপনি কী করবেন বা কিভাবে সংজ্ঞায়িত করে সিদ্ধান্ত নিবেন/দিবেন আপনার উপর ছেড়ে দিলাম। তবে কষ্টের বিষয় হল, পরিবারের লোকদের রুকইয়াহকারী ব্যক্তিদের প্রতি মনোভাব। তারা উক্ত সদস্যের উপর আরও বেশি এগ্রেসিভ/অসহিষ্ণু হয়ে উঠে। শারিরিক কষ্টের চেয়ে এই মানসিক কষ্ট তখন তাদের কাছে বেশি পীড়াদায়ক হয়ে উঠে।
জাদুর জিনিস যদি ঘরে/গায়ে থাকে তাহলে কষ্ট হয় বেশি। এই কারনে বার বার বলি তাবিজ আছে কিনা খুজে দেখেন, সন্দেহজনক কিছু পান কিনা দেখেন, পাওয়া গেলে নষ্ট করেন। যারা হারাম কাজে লিপ্ত থাকে তারা রুকইয়াহ দ্বারা পূর্ণ রেজাল্ট পায় না। পরিবারে আরও আক্রান্ত ব্যক্তি আছে কিন্তু রুকইয়াহ করে না এমন ব্যক্তিরাও অনেকদিন ধরে ভোগে। (এসব কথা অভিজ্ঞতালদ্ধ, দলিল হবে না)
কাজেই আগে তেমন কোনো কিছু বোঝা যেতে না কিন্তু রুকইয়াহ শুরু করার পর “সিরিয়াস” অবস্থায় পৌছেছে এমন কেউ থাকলে তার উচিত হবে সরাসরি রুকইয়াহ করানো। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে তার উচিত হবে রুকইয়াহ অফ করা। তার দৈনন্দিক আমল সমূহ (সালাত, পর্দা, মাসনুন ইত্যাদি) গুরুত্ব দিয়ে করা, প্রচুর দুয়া করা, সব কাজে বিসমিল্লাহ বলার অভ্যাস করা, কবীরা গুনাহ ত্যাগ করে তওবা করা, সগীরা গুনাহ থেকে পরহেজ করা। তাহলে ধীরে ধীরে ইংশা আল্লাহ সাথে থাকা শয়তান/শয়তানি শক্তি দুর্বল হয়ে যাবে। ১-২ মাস শক্তভাবে আমলগুলো করে এরপর আবার রুকইয়াহ করা।
২। দীর্ঘদিন রুকইয়াহ কাদের দরকার হয়? বদনজরের রোগীদের দরকার হয় না। সাধারনত বদনজর দ্রুত লাগে, সুস্থও হয় তাড়াতাড়ি। জ্বিন, জাদুতে আক্রান্তদের দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। জাদু যতদিন না কাটবে ততদিন রুকইয়াহ করতে হবে। জিন যদি জাদুর সাথে এসে থাকে তাহলে জাদু কেটে গেলে জিনও চলে যাবে।
আর জিন যদি প্রতিশোধ নিতে আসে (আপনার দ্বারা তার কোনো ক্ষতি হয়েছে এখন সে শোধ নিতে চায়) তাহলে সরাসরি রুকইয়াহ করানো উচিত হবে। কারণ জিন হাজির হলে অভিজ্ঞ রাকি তাকে বুঝিয়ে বিদেয় করবেন। এই টাইপের কেসগুলো অনেক রাকিরা বলেন শক্ত কেস। আবার জিন যদি কোনো ভাবে উক্ত ব্যক্তিকে লাইক করা শুরু করে তাহলেও সহজে যেতে চাইবে না। মানুষ যেমন ভালবাসলে ছ্যাচড়ার চূড়ান্ত হয় তেমন তারাও হতে পারে। দুইটাই অন্যায়।
কাজেই যদি জাদু আছে জানা যায় তথা জাদুর লক্ষনগুলো মিলে যায় তাহলে জাদুর রুকইয়াহ করবে। জাদুর লক্ষন না থাকলে বা চলে যাওয়ার পরেও যদি জিন/সমস্যা থাকে তাহলে অভিজ্ঞ রাকির কাছে যাওয়াই আমার পরামর্শ। যেতে না পারলে সেলফ রুকইয়াহ করতে থাকে (ডিটক্স, সার্বজনীন রুকইয়াহ ইত্যাদি)। প্রস্তুতি নিবে, টাকা জমাবে। পরিবারকে বলবে। যখনই সুযোগ হবে যাবে রাকির কাছে।
আল্লাহ তায়ালা আমল করার তৌফিক দিন। আমীন।
মন্তব্য করুন