Ruqyah Support BD

রুকইয়া বনাম কার্স (curse)

যাদুটোনায় তো স্পেল বা মন্ত্র ব্যবহার হয়ই। সাথে কিছু কার্স বা অভিশাপের মেথডও প্রচলিত আছে। সাধারণত ম্যাজিক রিলেটেড ফোরামগুলোতে এভাবে লেখা থাকে – “কার্স এন্ড স্পেল”। (হিন্ট: অর্ডার অফ ফিনিক্সের আন ফরগিভেবল কার্স)। কার্সগুলো সাধারণ স্পেল বা মন্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর। এক সময় টপ সার্চ কিওয়ার্ডের মধ্যে ছিল “হাউ টু কার্স সামওয়ান টু লাভ মি”!!

একইভাবে এক্সোর্সিজমের মধ্যেও সাধারণ ঝাড়ফুঁক বা রুকইয়ার পাশাপাশি কিছু কার্স মেথড আছে। এগুলোও অনেক সিরিয়াস।

এসব থেকে আমি সবাইকে চরমভাবে নিরুৎসাহিত করি এবং যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতে বলি। সখ করেও যেন না শিখতে যায় কেউ। এর মূল কারণ হচ্ছে, এসবের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব থাকে, অনেকসময় আপনি চিন্তার করার আগেই কল্পনাতীত মাপের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

সম্ভবত: জিন সিরিজে আলোচনা করতে গিয়ে সুরা আহযাবের একটা আয়াতের কথা বলেছিলাম। সেটা পরে মুছেও দিয়েছি, মিসইউজ হতেই পারে সেই ভয়ে।

তবে একটা সেদিনের মজার গল্প শোনেন, পরিচিত এক ভাইয়ের বাসায় গিয়েছি, উনার কাজিনের জিন রিলেটেড সমস্যা। বছর তিনেক হয়েছে, একদম সবার নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। এই কেসের বড় সমস্যা ছিল ওঁই জিনটা নিজেই ছিল যাদুকর, হিন্দু জিন। এজন্য কবিরাজ-টবিরাজদের কাছে গেলে সে মন্ত্র পড়ে কবিরাজদের সব তাবিজ-তুমার-মন্ত্রতন্ত্র পানি করে দিত!

তো আমরা গিয়ে রুকইয়া করলাম, প্রথম দিন সবাই মিলে অন্তত ৭ ঘণ্টা রুকইয়া করা হয়েছে। মাঝখানে আমি বিরক্ত হয়ে সুরা আহযাবের কার্সের আয়াতটি (রব্বানা আতিহিম দ্বি’ফাইনি মিনাল আযাব) পড়া শুরু করেছিলাম… উফ! ইফেক্ট দেখে কি যে মজা পাইসি!

যাহোক, এরপর প্রায় এক সপ্তাহ প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা করে রুকইয়া করার পর আলহামদুলিল্লাহ রুগী এখন একদম সুস্থ।

দুনিয়ায় আর কোন উদাহরণ না থাকলেও এই একটা উদাহরণই যথেষ্ট ছিল ভণ্ড কবিরাজি আর ইলাজ বিল কুরআন এর পার্থক্য দেখানোর জন্য।

এই ঘটনা থেকে কয়েকটা বিষয় আমার মাথায় এসেছে, এই কার্স বা লানত ক্যাটাগরির রুকইয়া নিয়ে যদি জাস্ট জানিয়ে রাখার জন্যেও কারও সাথে শেয়ার করি, তবুও এর যে মিসইউজ হবে না এর নিশ্চয়তা নাই। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, জিন সিরিজের পোস্ট লেখার সময় যেভাবে জিন তাড়ানোর পদ্ধতি বয়ান করেছি, সবসময় পরিস্থিতি এতটা সরল নাও হতে পারে।

ঐএকদিনে আরও অনেকগুলো ক্যাটাগরির অভিজ্ঞতা হয়েছে!! আলহামদুলিল্লাহ!

তো আমরা বলছিলাম কার্স রুকইয়ার কথা, এটার বিধান খুঁজতে গিয়ে সেদিন কার যেন (ক্লাসিক আলেমদের মাঝে কারও) ফাতওয়া দেখেছিলাম, হারাম-শিরক কিছু না করলে কার্স রুকইয়াও নাকি জায়েজ! উনি আমভাবে জায়েজ বলেছেন। জানিনা আমাদের আলেমরা কি বলবেন। বাদবাকি আমার পছন্দ হয়নাই ব্যাপারটা।

প্রথমতঃ এখানে ব্যাপারটা নেতিবাচক। অর্থাৎ রুকইয়ার ক্ষেত্রে উইল থাকে রুগী সুস্থ হয়ে যাক, কিন্তু কার্সের ক্ষেত্রে প্রার্থনা থাকে জিন মরে যাক, সারাজীবন পেইন ভোগ করুক, নির্বংশ হোক ইত্যাদি। ব্যাপারটা তো ভাবতেই কেমন লাগছে তাইনা?

দ্বিতীয়তঃ অনেক জিনকেই যাদুকররা বাধ্য করে এসব কাজ করতে পাঠায়। আপনিও যদি তাকে মারতে চান, সে যাবে কোথায়?

রুকইয়া সেন্টারে দ্বিতীয় দিন এক আংকেল এসেছেন উনার ওয়াইফকে নিয়ে। তো উনার ওয়াইফের ওপর রুকইয়া করার সময় জিনটা বলছিল- “আমি যেতে পারব না, আমি গেলে আমাকে মেরে ফেলবে” 
জিজ্ঞেস করলাম ‘কে মারবে তোকে?’ 
– “ম্যাজিশিয়ান!”

তৃতীয়তঃ কার্স রুকইয়ার ক্ষেত্রে অনেকসময় বিভিন্ন নবীদের বদদোয়াগুলো ব্যবহার হয়। অথচ অনেক নবী কিয়ামতের আগে চিন্তিত থাকবেন, তিনি কওমের ওপর বদদোয়া করেছেন এই কারণে। আর আমরা যদি এগুলোই আবার আওড়াই। কেমন যেন দেখায় না ব্যপারটা?

তবে হ্যাঁ! আমি যাদুকরের ওপর কার্স করা পক্ষে আছি। যদি প্রতিদিন ওদের ওপরে চাপাতি থেরাপিও দেয়া হয়, আমি আলহামদুলিল্লাহ বলব। শয়তানিতে স্বয়ং ইবলিস শয়তানের চেয়েও এরা বেশি অবদান রাখে।

ওয়াল্লাহি বলছি আপনি যদি কবিরাজ নামের যাদুকরগুলোর থেকে আল্লাহর জমিনকে পাক করতে পারেন, তাহলে পুরা দেশের যাদু, জিন, নজর, বাচ্চা হয়না, বিয়ে হয়না, হ্যানত্যান কাহিনীর ৯৯% এমনিতেই সলভ হয়ে যাবে। রুকইয়া-ঝাড়ফুঁক কিচ্ছু লাগবে না।

মন্তব্য করুন