Ruqyah Support BD

বদনজর লাগা প্রসঙ্গে

লিখেছেনঃ উম্মে আব্দুল্লাহ

সন্ধ্যার কিছু সময় আগে বসে বসে রুকিয়া শুনছি এমন সময় এক আত্মীয়া হুড়মুড় করে রুমে আসলেন। এসেই বলেন মেয়ে খাচ্ছেনা কি করি বলোতো। এরপর নিজেই বলা শুরু করলেন এত নজর লাগে ওর!! ফর্সাও না, মোটাও না তাহলে এত নজর লাগে কেন? উনার মত অনেক আপু এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। অনেকেই এই ব্যাপারটা নিয়ে ইনবক্স করছেন। তাই মনে হলো এই ব্যাপারটা নিয়ে কিছু বলা দরকার। আগেও বলেছি নজর লাগা শুধু খারাপ নজরকে বুঝায় না।

এমনিতেই অবস্থার পরিবর্তন হলে যেমন-একটু স্বাস্থ্য ভালো হলো বা একটু খেলে অনেকেই বলেন বাহ! পিচ্চি তো ভালোই খাচ্ছে বা স্বাস্থ্যটা একটু ভালো হইছে। ব্যাস! নজর লাগার জন্য একথাগুলোই যথেষ্ট। কারন এতে আল্লাহ তা’আলার নাম নিয়ে প্রশংসা করা হয়নি। তাই আমাদের উচিত এ ব্যাপারগুলো নিয়ে সচেতন থাকা। তবে সবসময় যে নজর লাগার কারনে এমন হয় তা কিন্তু না। তাই বাচ্চা কেন কাঁদে সেই কারনটা খুঁজে বের করে সমাধান করা জরুরী। এরপরেও যদি বাচ্চা কাঁদে তাহলে বদনজরের চিকিৎসা করতে পারেন। আর এইবার বেশি শীতের কারনে বড়দেরই অবস্থা খারাপ সেখানে ছোটরা একটু সমস্যা করতেই পারে।

তাই এই ব্যাপারটা একটু বেশিই গুরুত্ব দিবেন।

আর সকাল সন্ধ্যায় তিন কুল পড়ে শরীর মুছে দিবেন। আর নজর লাগা বুঝতে পারলে বদনজরের চিকিৎসা করাবেন। এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন, আপু ও তো পিচ্চি। ওকে কিভাবে গোসল করাই?
উত্তর: ছোটদের গোসল না করালেও চলে।

এক্ষেত্রে নিম্নক্ত আয়াত বাচ্চার মাথায় হাত রেখে পড়বেনঃ

بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

বিসমিল্লাহি আরকিক মিন কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক। মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও ‘আইনি হাসিদ। আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহিল্লাহি আরকিক।

অথবা,

بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ

বিসমিল্লাহি ইউবরিকা ওয়ামিন কুল্লি দা-ইন ইয়াশফিক। ওয়ামিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী”আঈন। এতে নজর কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ।

আর যাদের গোসল করানো সম্ভব তাদের গোসল করাবেন। রুকইয়ার গোসলের পদ্ধতি হচ্ছে-

“একটা বালতিতে পানি নিবেন, তারপর ওই পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে নিচের জিনিশগুলো সব ৭বার করে পড়বেন (যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে হয় তখন এসব অবশ্যই বাহিরে এনে পড়তে হবে) – “দরুদ শরিফ, ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, চারকুল (কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক্ব, নাস) প্রত্যেকটা ৭বার, শেষে আবার দরুদ শরিফ” – এসব ৭বার করে পড়ার পর হাত উঠাবেন, এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।

প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করলেন পরে অন্য পানি দিয়ে ভালোমতো করলেন, সমস্যা নেই। যার সমস্যা সে যদি পড়তে না পারে, তাহলে অন্য কেউ এসব পড়ে পানিতে ফু দিয়ে দিবে। আরও ভালো হবে, যদি প্রথমে কিছুক্ষণ রুকইয়াহ শুনে এরপর গোসল করতে যান। তবে এটা আবশ্যক না।

সমস্যা বেশি হলে এরকম ৩ সপ্তাহ করতে পারেন। সমস্যা কম হলে কখনো একদিনেও ভালো হয়ে যায়। তবে ভালো হওয়ার পরেও ২-৩দিন করা উচিত।
আর পারলে বদনজরের রুকিয়া শুনাতে পারেন। প্রশ্ন আসতে পারে কোন সমস্যা হবেনা তো?
উত্তর: আমাদের পিচ্চি কান্নাকাটি করলে রুকিয়া প্লে করে দেই। এরপর আলহামদুলিল্লাহ ও শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

একবারের ঘটনা বলি, ওর শরীরে একবার চর্মরোগের মত হয়েছিলো। দেখতে যে কেমন লাগছিলো। আর কষ্টও পাচ্ছিলো ও অনেক। আমরা ভাবলাম এলার্জি মনে হয়। এরপর কত ডাক্তার দেখালাম ওষুধ খাওয়ালাম কিছুতেই কমেনা। এরপর ওকে নজরের গোসল করালাম সাথে সকাল,সন্ধ্যায় তিন কুল পড়ে ঝাড়া শুরু করলাম। এরপর কিছুদিনের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার অশেষ রহমতে ও সুস্থ্য হয়ে উঠলো। (আলহামদুলিল্লাহ)

অনেকে শুনি মরিচ, পানপাতা এইসব দিয়ে নজর কাটায়। দয়া করে এইগুলো পরিহার করুন। কুর’আন, সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরুন। আর দুনিয়া ও আখিরাতকে সুন্দর করুন।

মন্তব্য করুন